বন্দির খাবার থেকে মাসে ৬০ লাখ টাকা লুটপাট

93

বন্দিদের জন্য সরকার ঘোষিত খাদ্য তালিকা অনুযায়ী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের খাবার দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আর একটি সিন্ডিকেট বন্দিদের জন্য বরাদ্দকৃত নাশতা ও খাবারে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মাসে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে ঠিকাদারের যোগসাজশে লুটপাট করে নিচ্ছে। তাদের এসব অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করে ১১ জনের একটি সিন্ডিকেট। কারাগারে দৈনিক ৫০ কেজি ওজনের ৮৫ বস্তা চাল বরাদ্দ থাকলেও বন্দিদের দেওয়া হচ্ছে ৫৫-৬০ বস্তা চালের ভাত। ফলে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না কারাগারের বন্দিরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিচারধীন ও সাজাপ্রাপ্তসহ বন্দির সংখ্যা ৮ হাজার ৫০০ জন। এসব বন্দির জন্য সরকার দৈনিক ৮৫ বস্তা চাল, ২৫ বস্তা ডাল, ৩ হাজার ৬০ কেজি সবজি, ৩৬৬ থেকে ৪১০ কেজি মাছ -মাংস বরাদ্দ রেখেছে। কিন্তু চট্টগ্রাম কারা প্রশাসন এই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য বন্দিদের দিচ্ছে দৈনিক ৫৫ থেকে ৬০ বস্তা চাল, ১১ থেকে ১২ বস্তা ডাল, ১৫০০ থেকে ১৬০০ কেজি সবজি ও ২০০ থেকে ২২০ কেজি মাছ-মাংস। কাগজে-কলমে যেদিন গরুর মাংস ও খাশির মাংস দেওয়ার কথা সেদিন খাওয়ানো হচ্ছে ফার্মের মুরগী। এছাড়াও এসব খাবার এতই নিম্নমানের যে বন্দিরা খেতেও পারেন না। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র সরকারের সুনাম নষ্ট করার জন্য এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কারগার থেকে সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বন্দিদের সপ্তাহে ৩ দিন ভাজি ও রুটি, ২ দিন হালুয়া ও রুটি আর বাকি ২ দিন খিচুড়ির দেওয়ার নির্দেশনা কাগজে কলমে থাকলে বাস্তবে এসব খাওয়ার পাচ্ছেন না তারা। ২ দিন হালুয়া ও রুটির বদলে দেওয়া হচ্ছে একদিন, ২ দিন খিচুড়ি দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে একদিন। সপ্তাহে ৩ দিন ভাজি ও রুটি দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কোনো বন্দি ভাজি চোখে দেখেন না। যা দেওয়া হয় তাতে ভাজির অস্তিত্ব পর্যন্ত থাকে না।
এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের জন্য রয়েছে একটি মাত্র ক্যান্টিন। সেখানে চা ও হরলিক্স বিক্রি করা হয়। ছোট একটি কাপে চা দেওয়া হয় যার মূল্য ১০ টাকা, আর একটি মিনি হরলিক্সের দাম রাখা হয় ১০ টাকা করে। যার কারণে বন্দিরা চা’য়ের বদলে মিনি হরলিক্সই বেশি খেয়ে থাকেন। এতে লাভ কম হওয়ায় ক্যান্টিনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা হরলিক্স বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভৈরবে রেল পুলিশের সাথে ঘুষের টাকা ও ফেনসিডিলসহ চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা ধরা পড়েন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকও একইভাবে ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার হন। কিন্তু চট্টগ্রাম কারাগারে এখনো তাদের সহযোগীরা দাপটের সাথে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন। বন্দিদের জন্য বরাদ্দকৃত নাস্তা ও খাবারে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মাসে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা সরকারি তহবিল থেকে ঠিকাদারের যোগসাজশে একটি সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে। আর তাদের এসব অনৈতিক কাজের সহযোগিতা করছে ১১ জন। এদের মধ্যে কেইস টেবিল থেকে চিফ রাইটারের হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েদি পারভেজ, বড় চৌকার মেট খোকন,ভবন চৌকার মেট সেলিম, ক্যান্টিনের মেট দেলোয়ার, কেইস টেবিলে সাগর, সিআইডি কয়েদি নজরুল, নাছির, ইয়াছিন, শহীদ, অফিসের কয়েদি নোমান, গুদাম ইনচার্জ কয়েদি রাঙ্গু উল্লেখযোগ্য। এরা সোহেল রানা জেলার থাকাকালীন থেকে অপকর্ম করে আসছে।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন বলেন, অভিযোগগুলো মিথ্যা। এসবের কোনো ভিত্তি নেই। কারাগারে এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে উন্নত খাবার বন্দিদের পরিবেশন করা হচ্ছে। বন্দিদের কোনোভাবেই কম খাবার দেওয়া হচ্ছে না, কারাবিধি মোতাবেক দেওয়া হচ্ছে।