‘বন্দিত্বের অবসান হোক’

12

 

সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখ স্কুল খুলবে! কথাটা শোনার পর থেকেই, আমার বাসায় স্কুলড্রেস পরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো। তিনকন্যার সবক’টা অংকুরেই পড়ে। বড়মেয়ের স্কুলড্রেস, তার বাবা আয়রন করতে গিয়ে একটা ছোট্ট ফুটো করে ফেলেছে। আহারে, মেয়ের কী ভয়ানক মন খারাপ! এই ক’দিনের মধ্যে যদি স্কুল খুলে ফেলে, তাহলে সে পরবে কি? আরেকটা ড্রেস আলাদা করে রেখেছিলো খুব যতœ করে। সেটাও ছোট হয়ে গেছে। মেজমেয়ের মন ভীষণ খারাপ! ওর দু’দুটো ড্রেস। কিন্তু, ক্লাস টু থেকে থ্রিতে ওঠলে ক্রসবেল্ট পরতে হবে, সাথে ফুলপ্যান্ট! থ্রিতে ওঠে স্কুলেই যাওয়া হয়নি বলে ড্রেসও সেলাই হয়নি! দুঃখে কাঁদোকাঁদো। বুঝালাম, ড্রেস সেলাই দু’দিনও লাগেনা। তারপরও মনমরা হয়ে আছে। কারণ, ড্রেসের অজুহাতে যদি স্কুলে যাওয়া না হয়!
ছোটমেয়ে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাসই দেখেনি! যদিও বড় দু’বোনের ড্রেস আছে কয়েকটা। তারপরও, নতুন ক্লাসে নতুন ড্রেসতো পরতেই হবে! বেচারা আগের ড্রেস পরে ট্রায়াল দিচ্ছে অনবরত! দেশের কোটি শিক্ষার্থীর মনের কথাও যেনো আমার মেয়েদেরই কথা! স্কুলব্যাগ ধুলো পড়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, জুতো-মোজা জোড়া হয়তো আর পায়ে আটকাবেনা! শিক্ষার্থীরা স্কুলের ডিসিপ্লিন মনে রেখেছে বলে মনে হয়না! শেয়ারিং, কেয়ারিং ও হয়তো ভুলে গেছে। করোনা পরবর্তী স্টুডেন্টদের আচার-আচরণ কেমন হয় /হবে ভাবার বিষয়! আমারও একটা টানটান উত্তেজনা কাজ করছে। কতদিন পর প্রিয় প্রাঙ্গণে আবারো প্রাণ আসবে! সারাদিন পাঁচটা-ছয়টা ক্লাস, তারপরও একটা নিয়ম মাফিক জীবন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটা সিডিউল সাঁটানো জীবন। করোনাকালীন জীবন আর করোনা পূর্ববর্তী জীবন! আকাশ আর পাতালের মতোই যোজন যোজন পার্থক্য! কথা হলো, সত্যিই কি খুলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১২ তারিখ!
প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে আঠারো মাস অতিবাহিত হয়ে গেলো। সত্যিই আর বন্দীজীবন, গুমোট সংসারী জীবন ভালো লাগছেনা! যদিও অনলাইনে ক্লাস নিতে হয় শিক্ষকদের! তারপরও, প্রাণের সাথে প্রাণের সংযোগ বলে কথা!! আমরা দু’টো জীবনে সমান্তরাল চলতে অভ্যস্ত আসলে! একঘেঁয়েমিতে মুক্তি নাই। কাজের মাঝেই সংসারের সুর সোৎসাহের।