বন্দর ঘিরে ফের তীব্র যানজট

39

চট্টগ্রাম বন্দরে নিরাপত্তার স্বার্থে পণ্যবাহী গাড়ির হেলপারের ‘পাস’ ইস্যুতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করায় বন্দর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের আমদানি ও রপ্তানি পণ্য পরিবহনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় রপ্তানির প্রবৃদ্ধিও। সেই সাথে ওই এলাকায় জনজীবনে দুর্ভোগ-ভোগান্তি নেমে এসেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা ও বিমানবন্দর অভিমুখি সড়কে তীব্র যানজট নিরসনে গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠিয়েছেন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি অতিবর্ষণে জলবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা ও বিমানবন্দর অভিমুখি সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে। এতে রপ্তানি পণ্যের চালান প্রাইভেট আইসিডিতে যথাসময়ে প্রেরণ করা যাচ্ছে না। ডেলিভারি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না চট্টগ্রাম বন্দর জেটি থেকে আমদানিকৃত পণ্য। এ কারণে বিদেশি ক্রেতার নির্ধারিত লিড টাইমের মধ্যে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে রপ্তানি আদেশ বাতিলসহ স্টক লটে পরিণত হয়ে বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় রপ্তানির প্রবৃদ্ধিও।
এছাড়া যানজটের কারণে চট্টগ্রামের পোশাক শিল্প মালিকদের সাথে পূর্ব নির্ধারিত সভা বাতিল করে বিদেশি ক্রেতাগণ শাহ্ আমানত বিমানবন্দর থেকে ফিরে যাচ্ছে। সেই সাথে চট্টগ্রামের পোশাক শিল্প মালিকদের পক্ষে ঢাকায় নির্ধারিত ক্রেতাদের সাথে সভায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনিতেই চট্টগ্রামে রপ্তানি আদেশ স্বল্পতাসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে পোশাক শিল্পে দুর্দিন চলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চট্টগ্রামের বিদেশি বিনিয়োগসহ ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, বন্দরের নিরাপত্তার স্বার্থে পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও হেলপারের ‘পাস’ ইস্যুতে কিছু ডকুমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র এবং হেলপারের জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পরিচয়পত্র আছে এমন চালক, আর জাতীয় পরিচয়পত্র আছে এমন হেলপারের পাস ইস্যু করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এক্ষেত্রে চালকদের লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও হেলপারদের অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্রও দেখাতে পারছেন না। এসব হেলপারকে বন্দরে প্রবেশের পাস দিলে অনেক চালক তাদের হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ছেড়ে দেন। ফলে বন্দরের অভ্যন্তরে দুর্ঘটনা ঘটছে। এই কারণ ছাড়াও নগরীতে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে বন্দরের বাইরের সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি ফলে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এসব কারণে গতকাল মঙ্গলবার নগরীর দেওয়ানহাট, কদমতলী, আগ্রাবাদ, বারিকবিল্ডিং, ফকিরহাট, নিমতলা, পিসি রোড, টোল রোড, বড়পুল, কাস্টম মোড়, সল্টগোলা, ইপিজেডসহ বিমানবন্দর সড়কে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সভাপতি মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, বন্দরে প্রাইম মুভার, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, পিকআপ গাড়ির সহকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, অনলাইন জন্মনিবন্ধন ছাড়া পাস ইস্যু না করায় ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণরত বড় গাড়িগুলো সহকারী ছাড়া শুধু চালকের পক্ষে হুক পয়েন্টে বা টার্মিনালে নিয়ে পণ্য লোড-আনলোড, কাগজপত্র বুঝে নেওয়া সম্ভব নয়। এই বিষয় নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার আলোচনা করেছি। বন্দর কর্তৃপক্ষ দোহাই দিচ্ছে, এসব বিষয়গুলো উপর মহল থেকে দেখভাল করে। যদি তারা ব্যবস্থা করে তখন দেওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, তীব্র যানজটের কারণে আজকে অফিস করতে পারি নাই। আজকে অনেকদূর হেঁটেছি। অনেক কষ্ট করেছি। কারণ এই এলাকায় কোন রিক্শা ও ট্যাক্সি পাওয়া যায় না। আমরা নেতা মানুষ। এছাড়া এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন করতে পারি না। কিছু একটা হলেই ডিজিএফআই ও এনএসআই রির্পোট করে। কোন দেশে বসবাস করছি জানি না।
বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের বাইরের সড়কে যান চলাচল বিষয়টি দেখেন সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। তারাই বলতে পারবে কী কারণে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে বন্দরের অভ্যন্তরে আমদানি-রপ্তানিকারকের গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া গতকাল রাতে (সোমবার) কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। আর আজকে (মঙ্গলবার) ডেলিভারি বেশি ছিল, গাড়ির ইনকামিং ও আউটগোয়িং সবই বেশি ছিল এ কারণে যানজট হতে পারে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) তারেক আহমেদ বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন ধরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে গাড়ির হেলপারের জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া পাস ইস্যু না করায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে যানজট নিরসন করা সম্ভব হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আজ (মঙ্গলবার) থেকে আবার কী অবস্থা হয় বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা এই এলাকায় যানজট নিরসনে সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছি।
জুনিয়র চেম্বারের সাবেক সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের কাজ শুরু করার আগে যারা এটা নিয়ে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করেছেন, তারা বিকল্প ব্যবস্থা রাখেন নাই কেন? এখানে কাজ হলে বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হবে, আমদানি-রপ্তানি, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিশাল ক্ষতি হবে এবং সামাজিক ব্যবস্থাসহ সবদিক দিয়ে ক্ষতি হবে, তা আগে চিন্তা করা দরকার ছিল। সেই সাথে আমাদের লক্ষ্যমাত্রাও বাধাগ্রস্ত হবে। এখন কথা হচ্ছে এসব ক্ষতির দায়ভার কারা নেবেন। এসব কিছুর দায়দায়িত্ব কার?
তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র এই এলাকায় তীব্র যানজট অবিলম্বে যার যার অবস্থান থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে। অন্যথায় ক্ষতির বিষয়টি সবার নাগালের বাইরে চলে যাবে। এ সময় তিনি বিমানবন্দরগামী সড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন।