বন্দর-কাস্টমস থেকে চসিকের ‘আয়’ নিয়ে সাড়া নেই মন্ত্রণালয়ের

35

ওয়াসিম আহমেদ

বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম হয়ে দেশের ৯০ ভাগ আমদানি-রপ্তানির হয়। এ জন্য সব ধরনের অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করলেও কোনো ‘চার্জ’ পায় না স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। অথচ স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন), ২০০৯ অনুসারে আমদানি ও রপ্তানিকৃত পণ্যের উপর কর আরোপ করার ক্ষমতা রাখে সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার ১০ মাস পার হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দরের মোট আয়ের ১ শতাংশ সিটি করপোরেশনকে রাজস্ব হিসেবে প্রদান করার বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০২১-এর খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য সিটি করপোরেশন আইনের ৮২ ধারা সংশোধন করে নতুন ধারা সংযোজন করতে হবে। অন্যথায় বন্দরের আইন চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেও সিটি করপোরেশন ওই রাজস্ব গ্রহণ করতে পারবে না। তাই বিদ্যমান আইনটি সংশোধন করতে জাতীয় সংসদে সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে তা করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। এ চিঠিরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে পূর্বদেশকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেছেন, ‘আমাদের সড়কগুলো ১০ থেকে ১২ টন ওজনের বহনকারী গাড়ির জন্য। কিন্তু বন্দরের পণ্যবাহী গাড়িগুলো ৩০ থেকে ৪০ টন গাড়ি বহন করে। যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক নষ্ট হয়। সাধারণ সড়কের চেয়ে বন্দর এলাকার সড়কগুলোতে সিটি করপোরেশনের তিনগুণ বা তারও বেশি বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। যা সিটি করপোরেশনের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। একেতো আমাদের নিজস্ব আয়ের ভিত খুবই নড়বড়ে। সেখানে এরকম অতিরিক্ত চাপ নগর উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত করছে। তাই দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামবাসীর দাবি ছিলো বন্দরের বাৎসরিক আয়ের একটি অংশ সিটি করপোরেশনকে চার্জ হিসেবে দেওয়ার। তারা (বন্দর কর্তৃপক্ষ) সেটা নতুন আইনের খসড়া অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু প্রক্রিয়াগুলো খুবই ধীরগতি হচ্ছে। অন্যদিকে সে টাকাটি নেওয়ার জন্য আমাদের বিদ্যমান আইনও সংশোধন করতে হবে। এ ছাড়াও বিদ্যমান আইন অনুসারে সিটি করপোরেশন আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের মূল্যের উপর কর আরোপ করতে পারে। এ কর আরোপ করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। চিঠি দিয়েও সাড়া পাচ্ছি না। আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য গত সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। চসিক স্বনির্ভর হলে সরকারের অর্থ বাঁচবে, তাই এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে এগিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য মেয়রের।’
সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন), ২০০৯ এর ৮২ ধারায় সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে প্রবিধান দ্বারা ৪র্থ তফসিল এর ৪নং ও ৫নং ক্রমিক অনুযায়ী নগরীতে আমদানি ও রপ্তানীকৃত পণ্যের উপর কর আরোপ করার ক্ষমতা রাখে সিটি করপোরেশন। তৎপ্রেক্ষিতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমদানির উপর ৫ শতাংশ এবং রপ্তানি পণ্যের মূল্যের উপর ৩ শতাংশ কর আরোপের ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর চসিকের ১১তম সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেয় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম। ১০ মাস পার হয়ে গেলেও কোনো প্রতিউত্তর বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে, গত ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০২১ এর চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। যেখানে বন্দরের বাৎসরিক আয়ের এক শতাংশ সিটি করপোরেশনকে দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মূলত প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালীন থেকে বন্দরের আয় থেকে নগর উন্নয়নে এ বরাদ্দ চেয়ে আসছিলেন। পরবর্তীতে দায়িত্বে আসা মেয়ররাও বিষয়টি নিয়ে দেন-দরবার করেন। তারই ফলস্বরূপ বন্দরের নতুন আইনে বিষয়টি গুরুত্ব পায়। কিন্তু বন্দরের আইনটি অনুমোদন হওয়ার সাথে সাথে সিটি করপোরেশনের বিদ্যমান আইনটি সংশোধন করতে হবে। কেননা সেখানে বন্দরের বাৎসরিক আয়ের উপর কর আরোপ করার কোনো বিধান নেই। তাই স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন), ২০০৯ এর ৮২ এর অধীনে নতুন ধারা ৮২ক (নগর কর আরোপ) সংযোজন করার প্রস্তাব করে চসিক। যেখানে সিটি করপোরেশন এলাকায় সমুদ্র বা নদী বন্দর থাকলে করপোরেশনের রাস্তা ও অবকাঠামো ব্যবহার এবং করপোরেশনের অন্যান্য সুবিধা ভোগের দায় হিসেবে চতুর্থ তফসিলে বর্ণিত কর, উপ-কর, রেট, টোল ও ফিস ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সমুদ্র বন্দর বা নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের বাৎসরিক মোট আয়ের এক শতাংশ নগর কর হিসেবে সংশ্লিষ্ট করপোরেশনে পরিশোধ করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। গত ৮ জুন এ সংক্রান্ত খসড়া বিল প্রস্তুত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে সিটি করপোরেশন। একইপত্রে খসড়া বিলটির প্রাথমিক অনুমোদনসহ সংসদে সংশোধনী বিল হিসেবে উত্থাপন এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। বন্দর ও কাস্টমস থেকে সিটি করপোরেশনের আয় নিশ্চিত হলে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে চসিক। একইসাথে নগরবাসীর উপর গৃহকরের বোঝা কমবে বলে মনে করছেন নগর চিন্তাবিদরা।