বন্দরে কমবে জাহাজজট বাড়বে হ্যান্ডলিং সক্ষমতা

71

দ্রুতগতিতে পণ্যভর্তি কন্টেইনার ওঠানামায় চীন থেকে ২৩৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা মূল্যের নতুন চারটি ‘কি গ্যান্ট্রি ক্রেন’ এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। প্রতিটি ক্রেনের সক্ষমতা ৪০ টন। ঘণ্টায় ২৫ থেকে ৩২ টিইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা রয়েছে প্রতিটির। ক্রেন ৪টি অপারেশনে যুক্ত হওয়ার পর সামগ্রিকভাবে বন্দরের ৭ থেকে ৮ শতাংশ হ্যান্ডলিং বাড়বে। কমে আসবে জাহাজ জট। আর একসাথে ৪টি গিয়ারলেস জাহাজের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হলে এনসিটির সবটিতেই গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে পণ্য ওঠানামা করা সম্ভব হবে। এতে কম সময়ে দ্রæত পণ্য ওঠানামা হবে। ক্রেনবিহীন জাহাজের ভাড়া কম হওয়ায় জাহাজ আসার সংখ্যা বাড়বে। কম সময়ে বেশি জাহাজ ভিড়তে পারায় বহির্নোঙ্গরে জাহাজজট কমে যাবে। আমদানি-রপ্তানিকারকদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। বন্দরের সামগ্রিকভাবে অপারেশন কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে গতকাল বুধবার বিকালে চীন থেকে কেনা ৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেন নিয়ে আসা বিশেষায়িত জাহাজটি বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) ভিড়েছে। জোয়ারের সময় বহির্নোঙর থেকে টাগ দিয়ে নিরাপদে এনসিটির জেটিতে নিয়ে আসা হয়েছে। সাংহাই বন্দর থেকে গত ২৮ জুন ক্রেনগুলো শিপমেন্ট হয়। ক্রেন নিয়ে আসা বিশেষায়িত জাহাজটির নাম এমভি ডিই বিও-৩। জাহাজটি এনসিটিতে আনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়। কারণ ক্রেনসহ এর উচ্চতা এবং প্রশস্ততা ছিল অধিক। এটা ভিতরে আনার জন্য বহির্নোঙর থেকে এনসিটি পর্যন্ত এলাকার সব জেটি এবং মুরিংয়ে অপারেশন বন্ধ রাখা হয়। এ সময় চ্যানেল থেকে সব নৌযান সরিয়ে দেয়া হয়। এনসিটি আগেই রাখা হয় জাহাজশূন্য। বিকাল ৫টায় বন্দরের শক্তিশালী টাগ ব্যবহার করে পাইলটরা পথ দেখিয়ে এমভি ডিই বিও-৩ কে এনে ভিড়িয়েছে এনসিটিতে। এরপর সংযোজন শেষে এনসিটির ১ ও ২ নম্বর জেটিতে যুক্ত করা হবে। ক্রেনগুলো যুক্ত করে চালু করতে তিন সপ্তাহ সময় নির্ধারণ করেছে বন্দর।
চিটাগাং চেম্বারের সহ-সভাপতি তরফদার রুহুল আমিন বলেন, গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপন করার পর বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বেড়ে যাবে। বাইরে যে জাহাজজট আছে তা অনেকাংশই কমে যাবে। আর জাহাজের মালিক ও আমদানি-রপ্তানিকারকদের অনেক সহায়ক হবে।
গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে জাহাজ থেকে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হলে বন্দরের কি ধরনের পরিবর্তন আসবে জানতে চাইলে রুহুল আমিন বলেন, সাধারণত বার্থে গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়া কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যায় ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার মতো। গ্যান্ট্রি ক্রেন লাগানোর পর তখন সেটা প্রায় ২২ থেকে ৩০ হাজার হ্যান্ডলিং করা যায়। ওই টার্মিনালে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে। আর সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ৭ থেকে ৮ শতাংশ বাড়বে। এতে দেশের অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে।
গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে খুব কম সময়ে জাহাজ থেকে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। এ ধরনের মাত্র ৪টি ক্রেন দিয়ে বছরের পর বছর চলেছে বন্দর। এরপর গত ২০১৮ সালের আগস্ট ও অক্টোবরে প্রায় ৩৪৫ কোটি ব্যয়ে এসেছিল নতুন ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন। যা পণ্য ওঠানামায় যুক্ত করা হয় বন্দরে। আর এবছরে প্রায় ২৩৮ কোটি ৬১ টাকায় আরও ৪ গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয়েছে বন্দরে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, বন্দরের উন্নয়নের লক্ষ্যে গত বছর এনসিটি জেটিতে ছয়টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপন করা হয়েছে। আরো চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এগুলো এনসিটি টার্মিনালে স্থাপন করার পর জাহাজের কন্টেইনার লোডিং-আনলোডিং কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা আসবে।
নতুন চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন বন্দরের এনসিটির জেটিতে যুক্ত করা হবে উল্লেখ করে বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) আমিনুল ইসলাম বলেন, এগুলো ২৩৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ক্রেনগুলো জাহাজ থেকে নামার পর যুক্ত করে চালু করতে তিন সপ্তাহ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকায় ৬টি গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহ করা হয়েছিল।