বদলে গেছে চিরচেনা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক

58

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া
করোনা সংক্রমণরোধে সরকারের আদেশে মানুষ এখন ঘরে অবস্থান করছেন। প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না। এ অবস্থায় বদলে গেছে চিরচেনা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক। নিস্তব্ধতা সর্বত্র।
উত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে ব্যাস্ততম চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক। যে সড়কে বাস ট্রাক ও ঢাকা-চট্টগ্রামও দেশের বিবিন্ন জেলার সাথে নানা পরিবহনের প্রচন্ড যানজট ছিল সে সড়কে, এখন যানবাহন শূন্য। নেই সড়ক দুর্ঘটনা, মৃত্যুর সংবাদ। যে সড়কে প্রতিদিন রাতে এবং দিনে দেশের নানা জেলার সাথে শত শত বিভিন্ন যানবাহনের হর্নের বিকট শব্দে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠত, সে সড়ক এখন যানবাহন বিহীন।
যানবাহনের জন্য কোন যাত্রী সড়কে অপেক্ষা করতে তেমন দেখা যায় না। করোনা মহামারি ঠেকাতে জনগণ যেন ঘর থেকে বাহির না হয়, সে লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন, রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কঠোর নজরদারীতে মানুষ এখন সড়কে আসছে না। যানবাহন শূন্যে এ যেন অঘোষিত কারফিউ মনে হচ্ছে। মানুষ সচেতন হয়েছে। সে জন্য সড়কে কোন যাত্রীকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়নি।
ব্যস্ততম স্পটেও কোন যাত্রী নেই। সড়কে কয়েকটা সিএনজি ও অটোরিক্শা চলতে দেখা যায়।
চট্টগ্রাম বাস, মিনিবাস ওয়াকার্স ইউনিয়নের সভাপতি মো. কুদ্দুস জানান, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমাদের কমপক্ষে ৩শ চালক হেলপার এখন সম্পূর্ণ বেকার। আয় রোজগার বন্ধ থাকায় নি¤œ আয়ের শ্রমজীবী মানুষ চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। সড়কে বাস ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামের নানা পরিবহন, ট্রাক, মিনি ট্রাক, মাইক্রো চলাচল সম্পুর্ণ বন্ধ রয়েছে। সড়কে সেনাবাহিনী আর পুলিশের যৌথ টহল চলছে। ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা ইছাখালী, পৌরসভা, মরিয়ামনগর চৌমহনী, রানীর হাট, চন্দ্রঘোনা, লিচুবাগান, রোয়াজার হাট, গ্রামীণ বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ রাখা হচ্ছে। গুটিকয়েক স্বল্প আয়ের মানুষ চোখে পড়েছে। কোথাও কোথাও জরুরি মুদি ও ওষুধের দোকান খোলা ছিল।
উপজেলার সরকারি হাসপাতাল খোলা থাকলেও রোগী তেমন নেই। চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টান হাসপাতাল ও রাঙ্গুনিয়া হেলথকেয়ার হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা যায়।
সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করছে বলে জানান চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টান হাসপাতালের প্রধান পরিচালক ডাক্তার প্রবীর খিয়াং ও রাঙ্গুনিয়া হেলথকেয়ার হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ডাক্তার মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, ঘোষণা অনুযায়ী রাঙ্গুনিয়া সব দোকানপাট এখন থেকে ৫টার পর বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোকান খোলা থাকলে আইন প্রয়োগ করা হবে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে। সড়কে কোন প্রকার গাড়ি চলাচল করছে না। মাঝে মাঝে সিএনজি ও অটোরিক্শা চলতে দেখা যায়।
রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে জরুরি খাবার ও ওষুধ সরবরাহের গাড়ি ছাড়া অন্য সকল যানবাহন চলছে না। আমরা জনসাধারণকে সতর্ক করার ফলে তারা স্বেচ্ছায় গৃহে অবস্থান করছেন। তবে কেউ যেন অহেতুক গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি না করে, সে বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি।