বঙ্গমাতার আদর্শ ধরে আসুন মানুষের কল্যাণে : প্রধানমন্ত্রী

18

পূর্বদেশ ডেস্ক

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের আদর্শ ধারণ করে বাংলাদেশের নারীদের ‘ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে’ দেশের কল্যাণে কাজ করার আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবন সাথী হিসেবে ফজিলাতুন নেছা মুজিবের মত একজন নারীকে পেয়েছিলেন বলেই বাঙালির সংগ্রাম সফল হতে পেরেছে।
বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকীতে গতকাল সোমবার সকালে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তাদের মেয়ে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি এটুকুই বলব, আমাদের দেশের নারী সমাজ, তারাও যেন এই আদর্শটা ধারণ করে যে শুধু চাওয়া পাওয়া বিলাসিতা- এটাই জীবন না। একটা মানুষের জীবনে মানুষের কল্যাণে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। কিন্তু একটা আদর্শ নিয়ে চললে মানুষের জন্য অনেক অবদান রাখা যেতে পারে। আমার মা, তার এই মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমার বাবা যে মহৎ অর্জন করেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশ, সেটাই কিন্তু তিনি দিয়ে গেছেন। আমাদের দেশের নারী সমাজকে এই আহবানই করব, এই আদর্শ নিয়ে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষের কল্যাণে সবাই কাজ করবেন, সেটাই আমি চাই। খবর বিডিনিউজ।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার’ স্বীকৃতিতে দেশের পাঁচ নারীকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (যুদ্ধকালীন কমান্ডার) এবং সমাজসেবায় অবদানের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলার মোছা. আছিয়া আলম এ বছরের বঙ্গমাতা পদক পেয়েছেন। এছাড়া রাজনীতি ক্ষেত্রে সিলেট জেলার সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, অর্থনীতিতে কুমিল্লার সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ ভূষিত হয়েছেন বঙ্গমাতা পদকে।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সব সময় আমার মা ছিলেন বাবার ছায়াসঙ্গী। আমার বাবার আদর্শটাকে তিনি ধারণ করেছিলেন। প্রতিটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন।
তার ভাষায়, আমার আব্বার খুব সৌভাগ্য, আমার মায়ের মত একজন জীবন সাথী পেয়েছিলেন। আর সেই সাথে আমার দাদা-দাদির কথাও বলব। বাবা-মা তার সংসারের বড় ছেলেকে লেখাপড়া শেখাচ্ছে, সেই যুগে, অজপাড়া গা টুঙ্গিপাড়া থেকে তাকে কলকাতায় হোস্টেলে রেখে পড়াচ্ছে, সেই সামর্থ্য তার আছে, তারপরও আকাক্সক্ষা থাকে যে বড় ছেলে বড় হবে, টাকা কামাই করবে, বাবা মাকে দেবে।
উল্টো আমার আব্বাকে আমার দাদা-দাদিও যেমন দিতেন, আমার মায়ের টাকা পয়সা নিজের জন্য খরচা না করে তাকেই দিতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার আব্বা এই রকম একজন জীবন সাথী এবং বাবা-মা পেয়েছিলেন বলেই কিন্তু আমাদের এই সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করা, দেশের স্বাধীনতা অর্জন করা- এটা সহজ হয়েছিল।
যদি আমার মায়ের মত এই ধরনের জীবন সাথী না পেতেন, যদি সব সময় স্বামীকে বিরক্ত করতেন- যে এটা চাই, ওটা চাই, মন্ত্রিত্ব থেকে কেন পদত্যাগ করবে? মন্ত্রীর বাড়ি ছেড়ে আমাকে যেতে হবে কেন? এত আয়েশে থেকে সেখান থেকে চলে যেতে হবে নাজিরাবাজারের অন্ধ গলিতে? আমার মা কখনো এই কথা বলেননি। যখন জীবনে যেই অবস্থা এসেছে, সেই অবস্থায় মানিয়ে চলা সেটার অদ্ভুত শক্তি ছিল।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব তার সন্তানদেরও একই শিক্ষায় গড়ে তুলেছেন বলে জানান তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা।
১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে তাকেও হত্যা করে খুনিরা।
সেই রাতে বঙ্গমাতার সাহসিকতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পনেরই আগস্টে তিনি (বঙ্গমাতা) নিজের জীবন ভিক্ষা চাননি। নিজের জীবনও দিয়ে গেছেন।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব বঙ্গমাতার সংগ্রামী অনুকরণীয় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন।