‘বঙ্গবন্ধু বিশ্বের শোষিত মানুষের মুক্তির ঠিকানা’

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’ প্রতিপাদ্যে নানান আয়োজনে পালিত হয়েছে বীর বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির হনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন। গতকাল শুক্রবার এ উপলক্ষে জাতীয়ভাবে পালিত হয়েছে শিশু দিবসও।
জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা অর্পণ, কেক কাটা, আলোচনা সভা, জীবন ও কর্মের উপর স্মৃতিচারণ, ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, দোয়া ও মিলাদ মাহ্ফিল, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে ছিল বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা, শিশু-কিশোর সমাবেশ, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল গতকাল শুক্রবার দিনজুড়ে।
দিনব্যাপি নানান আয়োজনে যুক্ত ছিল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোর-কিশোরীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলেই বাঙালির বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নয়, তিনি বাঙালির সম্পদ এবং সারা বিশ্বের শোষিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা ও ঠিকানা। আজকের শিশু-কিশোররা আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক। তারাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের যোগ্য প্রতিনিধি। বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ, তারও আগে ভাষা আন্দোলনসহ বাঙালি জাতির সকল আন্দোলন-সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলো এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই। তাঁর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্ব ও সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব পুরো জাতিকে একসূত্রে গেঁথেছিল। যার ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বিকাশ ঘটেছে বাঙালি জাতিসত্তার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাঙালি মুক্তির স্বাদ পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু পরিণত হয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিতে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ :
জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, কেক কাটা, দোয়া ও মিলাদ মাহ্ফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ দিবসটি উদ্যাপন করে।
গতকাল শুক্রবার নগরের সিআরবির শিরীষতলায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে দলটির নগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলেই বাঙালির বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালি জাতির সকল শুভকর্মে বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন আমাদের স্মরণে বরণে অলংকৃত থাকবেন।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নয়, তিনি বাঙালির সম্পদ এবং সারা বিশ্বের শোষিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা ও ঠিকানা। আজকের শিশু-কিশোররা আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক। তারাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের যোগ্য প্রতিনিধি।
নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবু। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করে বোধন আবৃত্তি পরিষদ, চট্টলকুড়ি, কবি নজরুল একাডেমি, ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র, একুশ মানবিকতা ও আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, নৃত্যময়ী একাডেমি, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, সঞ্চারী নৃত্যকলা একাডেমি। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শন নিয়ে লামিয়া সুলতানা অহি’র পরিবেশনা ছিল মুগ্ধকর।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, উপদেষ্টা শফর আলী, এনামুল হক চৌধুরী, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আবদুচ ছালাম, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, শফিকুল ইসলাম ফারুক, অ্যাড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ হোসেন, জোবাইরা নার্গিস খান, হাজী জহুর আহমদ, আবু তাহের, আবদুল আহাদ, জহর লাল হাজারী, কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ আমিনুল হক, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, জাফর আলম চৌধুরী, অ্যাড. কামাল উদ্দীন আহমদ, রোটারীয়ান মোহাম্মদ ইলিয়াস, থানা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস, রেজাউল করিম কায়সার। এছাড়া ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড, ১৫টি থানা-অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক/আহব্বায়ক-যুগ্ম আব্বায়কেরা মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগদান করেন

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতোনা বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার নগরের পাহাড়তলীস্থ শেখ রাসেল পার্কে চসিকের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংগ্রাম করে এই দেশটির স্বাধীনতা এসেছে। তাঁর জন্ম না হলে এই জাতিকে এক করে যুদ্ধের ময়দানে নেয়া যেতোনা। বঙ্গবন্ধুর জন্মের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনার জন্ম বাস্তবে রূপায়নের সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিণত হয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিতে।
আলোচনা সভার পর চসিক পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পরিচালনা করে। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন ও অংশ নেন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, চসিকের সমাজকল্যাণ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. আবদুস সালাম মাসুম, কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম, উপ-সচিব আশেক রাসুল টিপু, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, জনসংযোগ ও প্রটোকল কর্মকর্তা আজিজ আহমদ, চসিক সিবিএ সভাপতি ফরিদ আহমদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহেদুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, সহ-সম্পাদক বিপ্লব চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।
এর আগে সকালে জাতীয় পতাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পতাকা উত্তোলন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দিবসটি উপলক্ষে ওয়ার্ডস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহে ও চসিক জেনারেল হাসপাতালে দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়াও চসিকভুক্ত মসজিদ, মাদ্রাসায় মিলাদ ও বিশেষ মোনাজাত, মন্দির ও গির্জায় আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রার্থনার। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আলোকসজ্জা, ফ্লাইওভারের নিচে বিদ্যমান এলইডি দিয়ে জাতির পিতর ভাষণ, স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন, ড্রপওয়াল প্রদর্শন করা হয়। পাশাপাশি ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কর্মসূচি পালন করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ :
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহ্ফিল জেলা পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্ব ও সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব পুরো জাতিকে একসূত্রে গেঁথেছিল। যার ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বিকাশ ঘটেছে বাঙালি জাতিসত্তার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাঙালি মুক্তির স্বাদ পেয়েছে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশতী, বোরহান উদ্দিন মো. এমরান, দিলোয়ারা ইউসুফ, আ ম ম দিলশাদ, মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, নুরুল মোস্তফা সিকদার, এইচএম আলী আবরাহা, রওশন আরা বেগম, ফারহানা আফরিন জিনিয়া, সুরাইয়া খানমসহ জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ :
গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান এবং চবকের সকল সদস্যবৃন্দ বন্দর ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সকাল পৌনে ১১ টায় শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সি অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা সভা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ বিষয়ে রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে চবকের আওতাধীন সকল মসজিদ, এবাদতখানা, মন্দির ও বৌদ্ধ বিহারে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয় এবং বন্দর হাসপাতালে অভ্যন্তরীণ রোগীদের উন্নতমানের খাদ্য পরিবেশন করা হয়। বিকালে চট্টগ্রাম বন্দর স্পোর্টস কমপ্লেক্সে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। চবকের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম ফজলার রহমান বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।