বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও স্বাধীন মাতৃভূমির নির্মাণপাঠ

9

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

 

মুক্তির মহানায়ক স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিপুল রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত লাল-সবুজ পতাকার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের পূর্বে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বস্তুতপক্ষে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণই জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিচ্ছবির মহাকাব্যিক রচনা-বচনে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। উত্তাল মার্চের প্রতিটি দিনের প্রতিটি ক্ষণ ছিল নারী-পুরুষ-ছাত্র-জনতা-কৃষক-শ্রমিকসহ আপামর বাঙালি জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ-যন্ত্রণা-দ্রোহ-প্রতিবাদ-প্রতিরোধ পাÐুলিপি। দীর্ঘ নয় মাসের ভারত-রাশিয়া ও বিশ্বের মানবতাবাদি বিবেক প্রসূত দেশ ও জনগণের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন-সহযোগিতায় ১৬ ডিসেম্বর প্রায় লক্ষাধিক পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সদস্যদের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে দেশ শত্রমুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতির কারণে দেশবাসী বিজয়ের গৌরবে অত্যুজ্জ্বল ছিলনা। পাকিস্তানে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বঙ্গবন্ধুর জীবনপাত কতটুকু কঠিন ছিল তা প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে শুধু গভীর ক্ষত তৈরি করেনি; করেছিল প্রচÐ যন্ত্রণাদগ্ধ। এমন কোন দেশে-বিদেশে বাঙালি পরিবার ছিলনা যারা মহান ¯্রষ্টার কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবন ভিক্ষা ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রার্থনা নিবেদন করেন নি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রয়োগিক অর্থে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী প্রায় ২৯০দিন কারাবন্দী থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে বঙ্গবন্ধু স্বীয় নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশের মাটিতে পদার্পণ করেই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে অগণিত বাঙালির অশ্রæসিক্ত জনসমাবেশে নতুন করে উচ্চারণ করলেন; “আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু এসে থাকে যদি, আমি হাসতে হাসতে যাব। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান। আজ আমি বাংলাদেশে ফিরে এসেছি। আমার ভাইদের কাছে, আমার মা’দের কাছে। আমার বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন। বাংলার মানুষ আজ আমার স্বাধীন।” বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত যুদ্ধোত্তর দেশকে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা এবং দেশকে এগিয়ে নিতে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্তরিকতা-গতিময়তায় শক্তি যোগানোর অঙ্গীকারে আবদ্ধ করেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার চারস্তম্ভকে প্রতিষ্ঠিত করার নিরবচ্ছিন্ন ও নিরলস কর্মযজ্ঞে নিজেকে নিবেদন করলেন। গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন নবোম্মেষ পরমাত্মা তবে সংযমিত কন্ঠে সাবধান করেছেন গণতন্ত্রকে যেন উচ্ছৃঙ্খলতার মোড়কে কলুষিত করা না হয়। বঙ্গবন্ধুর জীবন-সমাজ-রাষ্ট্র-শিক্ষা-উন্নয়ন দর্শনের ন্যায়ালয় ছিল বাংলার মাটি-মানুষের ন্যায্য সুদৃঢ়তা। হৃদয় নিঙড়ানো বাঙালি জাতিসত্তাই ছিল এর নয়নাভিরাম ভিত্তি। আধুনিক চীনের জনক ‘সান ইয়াত সেন’ যেমন রাষ্ট্র ও জনকল্যাণে জাতীয়তা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের ত্রয়-নীতি (ঞযৎবব চৎরহপরঢ়ষব ড়ভ ঃযব চবড়ঢ়ষব) ধারণ করে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার চারস্তম্ভকে প্রতিষ্ঠিত করার নিরবচ্ছিন্ন ও নিরলস কর্মযজ্ঞে নিজেকে নিবেদন করলেন।
১০ জানুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দরে লাখো জনতা তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরে বিশাল জন¯্রােতের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যান এবং সেখানে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনায় উল্লাসিত লাখো বাঙালির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন। সেদিন জনতার মহাসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে স্বীয় অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘গত পঁচিশে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাসে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ দেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। বিশ্বকে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম কুকীর্তির তদন্ত অবশ্যই করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এসব কুকীর্তির বিচার করতে হবে।’ ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকা প্রকাশ করে যে, ‘তাঁহার এই মুক্তি বাংলাদেশকে বাঁচার সুযোগ দিয়াছে। ইহার আগে দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানের কারাপ্রকোষ্ঠে অন্তরীণ থাকাকালে তাঁহার জীবন নাশের উপক্রম হইয়াছিল। প্রহসনমূলক বিচারের রায় অনুযায়ী তাঁহার ফাঁসি নিশ্চিত করার জন্য কবরও খনন করা হইয়াছিল। এই সময় তিনি বীরের ন্যায় বলিয়াছিলেন, আমার লাশটা বাংলার মানুষের কাছে পাঠিয়ে দিও। কোনো প্রলোভন ও ভয়-ভীতিই তাঁহাকে বাঙালির জনদাবি ও গণতান্ত্রিক আদর্শ হইতে বিচ্যুত করিতে পারে নাই।’
পত্রিকায় আরো বর্ণিত হয় যে, ‘তাঁহার দৃঢ়তার কারণে পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জুলফিকার আলী ভুট্টোর কনফেডারেশনের স্বপ্নও ধুলিস্যাৎ হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কারাবন্দি বঙ্গবন্ধু ছিলেন অধিক প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি সশরীরে না থাকিলেও ছিলেন সবখানে। পৃথিবীতে এমন ঘটনা বিরল যে, জননেতা এগারো শত মাইল দূরে কারাগারে অবস্থান গ্রহণ করিলেও তাঁহার নামের উপর ভিত্তি করিয়া একটি দেশ স্বাধীন হইয়া গিয়াছে। তাঁহার মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পিছনে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর বিশ্বজনমত সৃষ্টি ও অন্যান্য অবদান অনস্বীকার্য ও চিরস্মরণীয়।’ বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসা সম্পর্কে তিনি তাঁর বক্তৃতায় সব সময় বলতেন, ‘আমাকে মোনেম খান কাবু করতে পারেনি, এমনকি আইয়ুব খানও পারেনি। কিন্তু আমাকে দুর্বল করে দিয়েছে আপনাদের এই অকুন্ঠ ভালোবাসা। আপনারা দোয়া করবেন যেন আপনাদের এই ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারি।’ বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসার মর্যাদা তিনি রক্ত দিয়ে পরিশোধ করে গেছেন। কবিগুরুর ভাষায়, ‘আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন, সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে, মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে।’
বঙ্গবন্ধুর অত্যুজ্জ্বল সামাজিক-রাজনৈতিক অভিযাত্রায় (১৯৩৪-১৯৭৫) সপ্তম শ্রেণি থেকে প্রতিটি দিনক্ষণ জীবনপ্রবাহের এক একটি অধ্যায়ের নবতর সংস্করণ। ‘বেরিবেরি’ ও ‘গøুকোমা’ নামক হৃদ-চক্ষুরোগে আক্রান্ত বঙ্গবন্ধু শৈশবকাল থেকেই স্বদেশী আন্দোলনের প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে নেতাজী সুভাষ বসুর আদর্শিক চেতনায় প্রক্ষিপ্ত হলেন। গৃহশিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ, এমএসসি মহোদয়ের সান্নিধ্যে গরিব শিক্ষার্থীদের সহযোগিতাকল্পে ‘মুসলিম সেবা সমিতি’র কর্মকাÐে সম্পৃক্ত হলেন এবং অকপটে সহপাঠীদের নিয়ে মুষ্টি ভিক্ষার চাল সংগ্রহ করতেন। ফুটবল, ভলিবল, হকি খেলায় পারদর্শিতা প্রদর্শনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অকুতোভয় খেলোয়াড়। পাশাপাশি প্রিয় পিতার মতোই আনন্দবাজার, বসুমতী, আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী ও সওগাত পত্রিকার নিয়মিত পাঠক। পরবর্তীতে ১৯৩৮ সালে গোপালগঞ্জে বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা ও শ্রমমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী সাহেবের আগমনকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু নির্ভীক রাজনীতিকের উপচীয়মান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে ঋদ্ধ হলেন। সূচনায় যেন জয় করলেন নিজেকে এবং ব্রতী হলেন দেশমাত্রিকার মুক্তির স্বপ্নে বিভোর আত্মত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত স্থাপনে বৈদগ্ধ চারণ। মিঞা মুজিবুর রহমান রচিত ‘জাতির জনকের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা’ গ্রন্থে ১৯৭০ সাল থেকে ২০ বছর বাংলাদেশে বসবাসকারী জেমস জে নোভাক রচিত পুস্তকের উদ্ধৃতি প্রণিধানযোগ্য – “শেখ মুজিব রাজনৈতিক পরিবেশে এক ধরনের তাৎক্ষণিতা নিয়ে আসেন। সূ² কূটচাল অথবা খাপছাড়া পদক্ষেপ নিয়ে তিনি জনগণকে ক্লান্ত করতেন না। সরকারি পদের প্রতি তাঁর কোনো মোহ ছিল না। তাঁর উত্থানের সময় থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর দিনে তাঁকে গ্রেফতার করা পর্যন্ত সবাই জানত এবং বুঝত তিনি স্বাধীনতার পক্ষেই কথা বলেছেন।’
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সংস্কৃতির অবগাহনে বঙ্গবন্ধু অকৃত্রিম ধারণ করেছেন রবীঠাকুর, নজরুল, জসিমউদ্দীনসহ সকল শিল্পী-সাহিত্যিক-কবি-সংস্কৃতি কর্মীদের। নির্মাণ করেছেন নতুন এক কাব্যিক-শৈল্পিক কৌশল এবং বাঙালির মনস্তত্ত¡ উপলব্ধির উদ্দীপ্ত বোধ। বঙ্গবন্ধু যথার্থই আবিষ্কার করেছেন গান-কবিতা ব্যতিরেকে কোন আস্থা বা বিশ্বাস দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনা। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী রবীঠাকুরের গান ও সাহিত্যকে নিষিদ্ধ করে প্রতিটি বাঙালি পরিবারেই তাঁকে স্থাপিত করেছেন। একইভাবে নজরুলের দ্রোহ, দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্য ও মানবমুক্তির গান ও কবিতায় প্রাণিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির প্রাণস্পন্দন। নজরুল সম্পর্কে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান যেমন বলেছেন, ‘জীবনে ও শিল্পে তিনি সকলকে জাগাতে চেয়েছেন মঙ্গলের জন্যে, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে, মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রাণপণ বিদ্রোহ ঘোষণার জন্যে’। একইভাবে নির্দ্বিধায় বলা যায় বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন আরাধ্য মানব-বুদ্ধির মুক্তি, শোষণ-বঞ্চনা, ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত আধুনিক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য দেশের সমুদয় উৎপাদিত ও প্রাকৃতিক সম্পদ কৃষক-শ্রমিক ও সর্বশ্রেণির মানুষের মধ্যে সুষমভাবে বন্টনে কৃষকদের সুদসহ বকেয়া খাজনা, পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত জমির কর, লবণ উৎপাদকদের আবগারি শুল্ক, নিবর্তনমূলক ইজাদারী প্রথা ইত্যাদি বিলুপ্ত করেন। দরিদ্র চাষিদের ঋণ, সার, বীজধান প্রদান নিশ্চিতকল্পে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, ক্ষতিগ্রস্ত রেল ও সড়ক সেতু দ্রæত সময়ে পুন:নির্মাণ, ব্যাংক-বীমা-শিল্প-ব্যবসা সকল বিরাজমান অরাজকতা নির্মূলকল্পে দক্ষ পরিচালক নিয়োগ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ক্রয়/আমদানি এবং চলমান ক্রিয়াশীল পুঁজির সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। ব্যাংক-বীমা, পাট-বস্ত্র-চিনিশিল্প, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, বৈদেশিক বাণিজ্যসহ শিল্প-কারখানার বৃহদাংশ জাতীয়করণ করেন। জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী দাবি দেওয়া উত্থাপনের মনোভাব পরিহার করে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কার্যকর প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজতান্ত্রিক শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেন।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় অমিত সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনের পথপ্রদর্শক। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে নিয়ে ২০৪১ সালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ অভিধায় উন্নত বিশ্বের মহাসড়কে পদার্পণের অভিষ্ট লক্ষ্যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মযোগী হতে হবে। তরুণ কর্মবীরদের সততা-নিষ্ঠা-মেধা-প্রজ্ঞা-দেশপ্রেম মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী আদর্শিক চেতনায় ঋদ্ধ করে নিজেদের সোনার মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত মুক্তির সংগ্রাম সার্থক ও সফলভাবে দৃশ্যমান করতে হবে। সহযাত্রী হিসেবে অগণিত নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর-যুবকদের অন্তরে ‘চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ-প্রেরণায় বঙ্গবন্ধু’, ‘জয় বাংলা’ জয়ধ্বনি, সভ্যতার সূচক সচকিত সত্য-সুন্দর-কল্যাণ-আনন্দধারাকে অপরাজিত করার মনীষায় ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস এক অবিস্মরণীয় প্রেরণার ব্যঞ্জনা যুগিয়ে যাবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাঙালির জীবনে নিরন্তর বঙ্গবন্ধু শুধু আশাজাগানিয়া শক্তি-সাহসের প্রতিধ্বনি হিসেবে নয়; শোক ও গৌরবোজ্জ্বল দেশপ্রেম-দৃঢ়চেতা-সুদূরপ্রসারী প্রজ্ঞা-মেধার কিংবদন্তী-অবিসংবাদিত নেতার আসনে চিরঞ্জীব-চির জাগরুক থাকবেন। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিশ্ব ইতিহাসে এমন এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়; যাকে খÐিত বা বিভাজিত করার যেকোন অশুভ অপপ্রয়াস সর্বত্রই সর্বোতভাবে পরাজিত হবেই।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চ.বি