বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চেতনার আলোকবর্তিকা শহীদ জননী

72

জাতীয় সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেছেন, ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞের অবসান ঘটাতে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলামান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ স্ব-স্ব ধর্ম পালন করবেন। এতে তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। একই সাথে ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে না।’ বঙ্গবন্ধুর এই রাজনৈতিক দর্শনই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সেই চেতনার আলোকবর্তিকা।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রাম জেলা আয়োজিত ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও শহীদ জননীর যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলন’- শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
নগরীর মোমিন রোডস্থ সুপ্রভাত স্টুডিও হলে গতকাল শনিবার সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদারের সভাপতিত্বে এতে প্রধান আলোচক ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা কাজী মুকুল। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা সুকুমার চৌধুরী।
জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অলিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন জেলা সহ-সভাপতি স্বপন সেন, দীপংকর চৌধুরী কাজল, মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, মো. হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর রেখা আলম চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্ল্যা চৌধুরী ভাস্কর, একেএম জাবেদুল আলম সুমন, আবু সাদাত মো. সায়েম, আবদুল মান্নান শিমুল, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম খান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক চৌধুরী, সুমন চৌধুরী, মিথুন মল্লিক, আসাদুজ্জামান জেবিন, মো. সাহাব উদ্দিন, অসিত বরণ বিশ্বাস, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রুবা আহসান, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সূচিত্রা গুহ টুম্পা, সহ-প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক রুবেল চৌধুরী, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ কামাল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাজীব চৌধুরী, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাবু,
সহ-দফতর সম্পাদক ইমরান আহমেদ, বেলাল হোসেন, সদস্য চন্দন চক্রবর্ত্তী, আব্দুল কাদের, মো. আলমগীর, আখতার হোসেন, মোহাম্মদ হাসান, নাছিমা আকতার, মুক্তা জামান, আবু সুফিয়ান, পৌলম দেব, আকিব জাবেদ, আবদুল হাকিম, দিপু বড়ুয়া, রুবেল কুমার শীল প্রমুখ।
প্রধান আলোচক কাজী মুকুল বলেন, দীর্ঘ ২৭ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর কেউ কেউ বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি ক্ষমতায়, সংবিধানের চার মূলনীতি ফিরে এসেছে, শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও সম্পন্ন হয়েছে- এখন আর নির্মূল কমিটির আন্দোলনের কী দরকার? এ কথা সত্য, আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলনের কারণে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের, বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের আন্দোলন না থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো না, সংবিধানের মৌলবাদীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ করা যেত না। তারপরও পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রধর্মের কলঙ্ক থেকে সংবিধান মুক্ত করা যায়নি। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এবং অনেকের মনোজগতে এখনও মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা শেকড় গেড়ে বসে আছে। জঙ্গি, মৌলবাদী ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী যে কোনও দেশের চেয়ে বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে।
প্রধান বক্তা শওকত বাঙালি বলেন, নানা কারণে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে আরও বেড়েছে। আগামীর এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্দোলনের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অব্যাহত রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে উদ্ভাসিত করা, মনোজগতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। দেশ-জাতিকে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে এর বিকল্প নেই।
আলোচনা শেষে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া বসু সাহা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন বসুন্ধরা শিল্পী গোষ্ঠী।
এদিকে, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজাগরণযাত্রা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে স্থগতি করা হয়। আগামী ২৬ জুন শহীদ জননীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গণজাগরণযাত্রা এবং ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হবে। বিজ্ঞপ্তি