বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনসহ বছরব্যাপী কর্মসূচি

47

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র শতবর্ষ পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামী ১৭ মার্চ ২০২০ ইং। উক্ত বছরটিকে সরকার ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বছরব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এই উপলক্ষে নগরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রধান ও প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির ১ম সভা গতকাল বুধবার সকালে নগরীর টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী পালনের ১’শ দিন আগে থেকে শুরু হবে গণনা দিন। জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি বছরব্যাপী কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের মাঝে জাতির জনকের কর্মজীবন ও রাজনৈতিক জীবনকে তুলে ধরার প্রয়াসে নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই সাথে কর্মসূচিকে সফল করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল সেবা সংস্থার মতামত ও পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আগামী প্রজম্মের নাগরিকদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আর্দশ তুলে ধরা এবং মুজিব বর্ষকে স্মরণীয় বরণীয় করে রাখা নিমিত্তে নগরীর বাটালী হিলে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের ঘোষণা দেন মেয়র। এছাড়া পাহাড়তলী শেখ রাসেল পার্ক এবং বঙ্গবন্ধু সড়কের বড়পুল গোলচত্বরের ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করা হবে।
মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন গণতন্ত্রের অতন্দ্র সৈনিক। তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের পথ প্রদর্শক। কৈশোর থেকেই তিনি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে ছিলেন স্বোচ্চার। তিনি শোষিত মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলতেন। এক অর্থে বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশের ইতিহাস। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্ত স্বদেশে পা রেখেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন মাটি ও মানুষকে কাজে লাগিয়েই তিনি এদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করবেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত উন্নয়ন ভাবনা ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দীপ্ত পথে এগিয়ে যাচ্ছেন তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন ধাবমান সেই সোনালী পথে, যেই পথের আলোক দিশারী বঙ্গবন্ধুর সুমহান আদর্শ আর অবিনাশী চেতনা। বঙ্গবন্ধু তার কর্মের মাঝেই আমাদের হৃদয়ে বেঁচে আছেন, থাকবেন অনন্তকাল। এই মহান নেতাকে স্বরণীয় বরণীয় করে নতুন প্রজন্মের কাছে তার বর্ণাঢ্য সংগ্রামী কর্মময় ও রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই আমাদের এই আয়োজন।
সিটি মেয়র বলেন, আগামী মাসে এ কর্মসূচি চ‚ড়ান্ত করা হবে। বঙ্গবন্ধু জনসভায় যোগদান ছাড়াও অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানে এসেছেন। অনেকের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক ছিল। এ নগরীতে স্মৃতি জাতির পিতার। পায়ে হেঁটে, রিকশায় চড়ে অনেক জায়গায় গেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর পোস্টার, ব্যানারে জাতির পিতা ছাড়া আর কোনো ছবি থাকবে না। এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন মেয়র। এই মুজিব বর্ষ উদযাপনে দলমত সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
সভায় চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো সামসুদ্দোহা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চসিক সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শহিদুল ইসলাম, চসিক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, প্রধান পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম, শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, থিয়েটার ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহমেদ ইকবাল হায়দার, সাংবাদিক তাজুল ইসলামসহ সেবা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
এই সময় চসিক প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাসেম, ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. নাসিম ভ‚ইয়া, সিডিএ উপ সচিব অমল গুহ, সিএমপি’র পুলিশ সুপার মো. মঞ্জুর মোরশেদ, সহকারী কমিশনার নুর জাহান আজগর সাথী, রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবরার হোসেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী সজিব বড়–য়া, সোহেব আহম্মদ, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিদর্শক দেবী রানী দে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জাতীয় পর্যায়ে গৃহিত কর্মসূচির পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীর উপর রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, রক্তদান কর্মসূচি, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের জন্য ‘ছোটদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নামক গ্রন্থ বিতরণ, ১০০টি সড়কের পাশে বৃক্ষ রোপন, প্রত্যেক ওয়ার্ডে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ছাদ ও আঙ্গিনায় বাগানকারীদের ১০% গৃহ কর মওকুফ, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ওয়ার্ডে বছরব্যাপী আলোচনা, দোয়া মাহফিলের আয়োজন, নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক সমূহের পাশে নির্মিত বাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় রং করণ, বঙ্গবন্ধুর মূর‌্যাল স্থাপন, বর্ণাঢ্য র‌্যালী, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে এলইডি সাইনে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও কর্মজীবনের চিত্র ও বক্তব্য প্রদর্শন, বঙ্গবন্ধু অনুর্ধ্ব-১৯ ফুটবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ইনডোর গেমস, এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, নগরীর সকল সেবাদান প্রতিষ্ঠান সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সমূহে আলোকসজ্জা সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। বিজ্ঞপ্তি