বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠুক ত্যাগী নেতৃত্ব : রাষ্ট্রপতি

28

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে সাহসী-ত্যাগী নেতৃত্ব গড়ে উঠবে প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, তার (বঙ্গবন্ধু) নীতি ও আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষ উদ্যাপনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। ভাষণটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মিত ‘মুক্তির মহানায়ক’ অনুষ্ঠানে সম্প্রচার করা হয়।
মুজিববর্ষের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাস বিপর্যয়ের কারণে তা বাতিল করা হয় এবং মুক্তির মহানায়ক অনুষ্ঠান নির্মাণ করে তা সম্প্রচার করা হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজির মাধ্যমে মুক্তির মহানায়ক অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর শত শিশু-কিশোরের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সংগীতের পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্প্রচার করা হয়। খবর বাংলানিউজের
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার আদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তার নীতি ও আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক। গড়ে উঠুক সাহসী, ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব, এ প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করাই হোক মুজিববর্ষে সবার অঙ্গীকার।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নীতি ও আদর্শের প্রতীক। বঙ্গবন্ধু রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ তার ওপর লিখিত গ্রন্থ অধ্যয়ন করে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আগামিতে জাতি গঠনে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
বক্তব্যের শুরুতে বছরজুড়ে দেশ-বিদেশে সাড়ম্বরে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত মুজিববর্ষের বর্ণাঢ্য আয়োজন যথাযথ উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে উদ্যাপনের জন্য দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ (বঙ্গবন্ধু) শৈশব থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মানবদরদি। ছিলেন অধিকার আদায়ে আপসহীন। বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে ছিল বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। এ কারণে তাকে বহুবার কারাবরণও করতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। কিন্তু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনও শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করেননি।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বাঙালির আবেগ ও আকাঙ্খাকে ধারণ করে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক।
রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি ভাষণ কিভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ। তাই ইউনেসকো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ডড়ৎষফ’ং উড়পঁসবহঃধৎু ঐবৎরঃধমব- এর মর্যাদা দিয়ে গবসড়ৎু ড়ভ ঃযব ডড়ৎষফ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ জবমরংঃবৎ-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এ ভাষণের কারণে বিশ্বখ্যাত নিউজউইক ম্যাগাজিন ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুকে ‘চড়বঃ ড়ভ চড়ষরঃরপং’ হিসেবে অভিহিত করার কথা উল্লেখ করেন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতভাবে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালালে ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাঙ্খিত স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। দেশ ও জনগণের প্রতি তার অসামান্য অবদানের জন্য বাংলা, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু আজ এক ও অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।
ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, দেশে ফিরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠনে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। মিত্রবাহিনীর সদস্যদের দেশে প্রত্যাবর্তন, স্বল্পসময়ের মধ্যে দেশের সংবিধান রচনা, জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণ, সবস্তরে দুর্নীতি নির্মূল, কৃষি বিপ্লব, কলকারখানাকে রাষ্ট্রীয়করণসহ দেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি।