বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জনগণের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছিল

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং আরো কিছু লোকের হত্যাকান্ডই ঘটেনি, এদিনটিই ছিল অনেক ত্যাগ ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভকারী একটি দেশের সম্পূর্ণ বিপরীত স্রোতে যাত্রার সূচনা।
এদিন একটি বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসনের অনাচারি ইতিহাস রচিত হয়। প্রায় ১৫ বছর ধরে এ দেশে জেনারেল জিয়া ও এরশাদের সামরিক স্বৈরাশাসন অব্যাহত থাকে।
ড. হাসানুজ্জামান ‘১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থান মুজিব হত্যা ও ধারাবাহিকতা’ শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, এদিন কেবল শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডই ঘটেনি, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারেরই ক্ষমতাচ্যুতি হয়নি, ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার, সরকার পরিবর্তনে তাদের ইচ্ছে-শক্তি ও রায়কে অস্বীকার করা হয়েছিল। কার্যত পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণতন্ত্রকেই নিধন করা হয়েছে।
হাসানুজ্জামান বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থান সংঘটিত করে শেখ মুজিব এবং তাঁর সহযোগীদের হত্যা করে এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে, নিজেদের ইচ্ছে মাফিক বেয়নেটের ডগায় রাষ্ট্রপতি বানিয়ে, মন্ত্রীসভা গঠন করে, সরকার তৈরি করে সম্পূর্ণভাবে সংবিধান-বিযুক্ত করে সমগ্র দেশকে সামরিক আইনের আওতায় আনা হয়েছিল। খবর বাসস’র
বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র কয়েকদিন পর ২৮ আগস্ট ‘দি গার্ডিয়ান’ লিখে ১৫ আগস্টের ঘটনার ভেতর দিয়ে যেন বাংলাদেশের জনগণ আইয়ুবের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় প্রচারণা এবং সামরিক শাসনের কালে প্রত্যাবর্তন করেছে।
পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ঘটনার ক’বছর পর ১৯৮২ সালের ৫ এপ্রিল টাইম ম্যাগাজিনেও বলা হয়, ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থান ও শেখ মুজিবের হত্যার পর গণতান্ত্রিক আমলের অবসান হয়।
এদিকে ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছিল, তা যে সাংবিধানিকভাবে বৈধ ছিল না খোদ সরকার প্রধান হিসেবে খন্দকার মোশতাক আহমদও তার প্রথম ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন।
১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে অধিষ্ঠিত হন খন্দকার মোশতাক আহমদ। সামরিক আইনের জবর দখলকারী স্বত্বের জোরে, সরকার প্রধান ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতির উদ্দেশ্যে রেডিও ও টেলিভিশনে তিনি এদিন এক ভাষণ দেন।
১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকে এ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হয়। ভাষণে মোশতাক বলেন, দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন… বিধান অনুযায়ী সম্ভব না হওয়ায় সরকার পরিবর্তনের জন্য সামরিক বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হয়েছে।
মোশতাকের ভাষণে অবশ্য আরো একটি দাবি করা হয়েছে, সেনাবাহিনীও এই পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে এবং সরকারের (তার) প্রতি অকুন্ঠ আনুগত্য ও আস্থা প্রকাশ করেছে। তবে, সেনাবাহিনীর পুরো অংশ এই ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত ছিল তা কিন্তু এখনো উদঘাটিত হয়নি। আর বিধান অনুযায়ী পরিবর্তন সম্ভব না হওয়ার কথা বলে মোশতাক নিজেই নিজের সরকারকে অবৈধতার সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন।
বিশিষ্ট জনদের মতে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারায় মৌলবাদের রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটে।