বই উৎসবে নতুন বইয়ের গন্ধে মাতে শিক্ষার্থীরা

171

পয়লা জানুয়ারি। সারাদেশে ওইদিনে বই উৎসব পালিত হয় প্রতি বছর। বই উৎসবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়। বই উৎসব পেছানোর কথা থাকলেও তা ১জানুয়ারিই বহাল থাকছে। নতুন বইয়ের গন্ধে মাতবে শিশু-কিশোরেরা। নতুন বই হাতে পেয়ে তারা উচ্ছ¡সিত আর উল্লসিত হবে। এবার নতুন বইয়ের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেসের জন্য টাকাও দেওয়ার কথা রয়েছে। যেটাকে যুগান্তকারী পদক্ষেপই বলা চলে। এতে পড়ালেখার প্রতি বাড়ে ঝোঁক। খুশি মন নিয়ে ক্লাসে যায়। এই উৎসব সারাদেশে বেশ আড়ম্বরভাবেই পালিত হয়। কেন্দ্রিয়ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বই উৎসবের উদ্বোধন করেন। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটে সমাবেশ।
অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে এই উৎসবটি পালন করে থাকে। যেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি, বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দসহ অনেকেই অংশ নেন। নতুন বই পেয়ে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায় শিশুরা। শিশুরা এমনিতে নতুন কিছু পেলে, দেখলে আনন্দ লাভ করে। এই বই উৎসব তাদের মাঝে আরো আনন্দ বাড়িয়ে দেয়। সবার মাঝে একটা উদ্দীপনা জাগে। বই উৎসবের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে শিশু- কিশোররা বাড়তি আনন্দ লাভ করবে এবং তাদের মাঝে পাঠ্যাভ্যাসের আগ্রহ সৃষ্টি হবে। যা শিক্ষার ক্ষেত্রকে বিকশিত করবে। মা-বাবা, অভিভাবকবৃন্দ তাদের সন্তানদেরকে পড়ালেখার ব্যাপারে উৎসাহিত হবেন।
এমনিতে শিক্ষাক্ষেত্রে নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। দেয়া হচ্ছে নানা উপবৃত্তি, মিড-ডে মিলের মত উৎসাহব্যঞ্জক সুবিধা। যাতে মা-বাবা কিংবা অভিভাবক উপকৃত ও উজ্জীবিত হচ্ছেন। আর এবার ড্রেসের জন্য টাকা দেওয়ার ঘোষণা আসায় আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ‘বই উৎসব’কে আরো প্রাণবন্ত করতে নতুন বই বিতরণের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি সুনজর দিতে হবে। কারণ, যেখানে এদের একবেলা খেতে চরম কষ্ট পেতে হয় সেখানে এই বই উৎসব কতটুকু তাদের মাঝে স্থায়ী প্রভাব ফেলবে তা বলা মুশকিল। দেশের দারিদ্রবস্থা দূর করতে না পারলে বই উৎসবের মতো অন্য আরো কর্মসূচিও পূর্ণতা পাবে না। এজন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র নিরসনে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। তাদের সন্তানদের স্কুলমুখী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নিতে হবে তাদের জন্য কর্মসংস্থান ও বিভিন্ন সহায়তার ব্যবস্থা। পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নেই বা থাকলেও তা জনপদ থেকে অনেক দূরে। এসব অঞ্চলে কাছাকাছি বা যৌক্তিক স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা জরুরী। সরকারীভাবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি বিত্তবান লোক ও নানা সংস্থা চাইলে এগিয়ে আসতে পারেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। এমন উদাহরণ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। ‘বই উৎসব’ আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছরের নতুন কর্মসূচি হলেও এর প্রভাব সুদূর প্রসারী।
উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় ছাপ ফেলবে সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে। বই বিতরণ কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সঠিক সময়ে বই ছাপানো দ্রæত করতে হবে। অন্যদিকে, বইয়ের মোড়ক ছাপা ও ভেতরের কাগজের মান করতে হবে উন্নত, ঝকঝকে। যা দেখে কোমলমতি শিশুর মন আরো আন্দোলিত হয়। পূর্ণ সেট বই যথাসময়ে বিতরণ সম্পন্ন করতে পারলে উৎসব আরো পরিপূর্ণ হবে। পুরো এই কার্যক্রমকে যেন কোন ধরনের দুর্নীতি স্পর্শ করতে না পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে। বিনামূল্যের বই যেন টাকা দিয়ে কেনাবেচা না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। কারণ, কিছু কিছু অভিযোগ থাকে যে, বই বিতরণে টাকা নেয়া হয়! আমরা চাই ‘বই উৎসব’ সারাদেশে সুন্দর ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হোক। বই পৌঁছুক সব শিক্ষার্থীর হাতে।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক