বইয়ের প্রেমে মেলায় তারা

10

আসহাব আরমান

গায়ে সাদা পাঞ্জাবি আর সাদা টুপি পড়া একদল কিশোর। চসিক বইমেলার বাতিঘর স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিলেন মোবাইলে। কথা বলে জানা গেল তারা নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার দারুল মা’আরিফ ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার ছুটিরদিনে একাডেমিক পড়ালেখার ফাঁকে বইমেলায় এসেছেন। একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের নানা রকম বই পড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
মাদ্রাসাটির উচ্চ মাধ্যমিক (সানোভিয়া) শ্রেণির শিক্ষার্থী তারেক ইবনে মোহাম্মদ পূর্বদেশকে বলেন, ছুটিরদিনে মেলায় এসেছি, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বই কিনব। বেশ কয়েকটি বই ইতোমধ্যে দেখেছি। কয়েকটি স্টলে বই পছন্দ হয়েছে। তবে এখনও কিনিনি। আমার পছন্দ ইসলামিক বই হলেও বাংলা বেশ কয়েকটি বই পড়েছি। আমাদের মাদ্রাসার লাইব্রেরিতেও বাংলা সাহিত্যের অসংখ্য বই রয়েছে। হুজুরও আমাদের সব সময়ই বই পড়ার প্রতি জোর দেন।
আরেক শিক্ষার্থী আবুল বাশার জানান, আমি ইতোমধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের বেশ কয়েকটি বই পড়েছি। এর মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’ ও ‘নৌকাডুবি’, কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ ‘সঞ্চিতা’। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন লেখকের পড়েছি। প্রতিটি মানুষের বই পড়া উচিত। বই জানার পরিধিকে বাড়িয়ে তোলে। ইসলামেও জ্ঞান অর্জনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মেলায় আসার বিষয়টি ইতিবাচক উল্লেখ করে মহসিন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ প্রফেসর অঞ্জন কুমার নন্দী পূর্বদেশকে বলেন, মেলা শুরুর পর থেকেই অসংখ্য মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি। এমনটি প্রগতিশীল শিক্ষার্থীর চেয়ে মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি লক্ষ্য করা গেছে। যদি সাহিত্য চর্চার জন্য কেউ মেলায় আসে, তাহলে তা ভালো। যদি কে কি লিখছে, তা দেখার জন্য আসে তা সুখকর নয়।
তিনি বলেন, মাদ্রাসায় এক সময় বাংলা সাহিত্য পড়ানো হতো না। এখন মাদ্রাসার লাইব্রেরিতে রবীন্দ্রনাথ কিংবা অন্যান্য প্রগতিশীল লেখকদের বই থাকলে তা দেশ ও জাতির জন্য ইতিবাচক। এর মাধ্যমে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সাহিত্য চর্চাটা বেড়ে উঠবে। একজন প্রকৃত সাহিত্যিক উগ্রবাদী হয় না। তারা সেটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে শিখবে। একতরফা বই পড়লে তো আর শিখবে না। সাহিত্যের কোনো ধর্ম নেই। সাহিত্যের ভিত্তি মানবতা।