বইয়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে চিপস!

10

পূর্বদেশ ডেস্ক

মূল সড়ক থেকে রেলওয়ে স্টেশনে ঢুকতেই দক্ষিণ পাশে চোখে পড়বে দুটি বইয়ের দোকান। একটি বাবুল বড়ুয়ার, অন্যটি মোশাররফ হোসেনের। বাবুলের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান আর মোশাররফের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে।
একসময় দুই দোকানে মাসুদ রানা সিরিজসহ বিভিন্ন গল্প উপন্যাস, পত্রপত্রিকা-সাময়িকী বিক্রি হতো। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেক সময় যাত্রী ও অভিভাবকেরা বাবুলের কাছ থেকে নতুন বই, সাময়িকী কিনতেন। বছর কয়েক আগেও স্টেশন এলাকায় এ বইয়ের দোকান দুটি ছিল খুবই প্রসিদ্ধ। বই বেচে ভালো মতোই সংসার চালাতেন বাবুল বড়ুয়া আর মোশাররফ। কিন্তু করোনা মহামারি কেড়ে নিয়েছে তাদের বইয়ের ব্যবসা। সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে বই বিক্রি ছেড়ে বেছে নিয়েছেন চিপস-বিস্কুট আর হরেক রকম পণ্য সামগ্রী বিক্রির পেশা।
করোনা মহামারিতে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, ট্রেন চলাচল বন্ধ ও সীমিত করায় এ পেশার কষ্ট বুঝেছেন মোশাররফ। বই বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েছেন চিপস, বিস্কুটসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য বিক্রিতে। হরেক রকমের পণ্য বেচে এখন পাঁচ সদস্যের পরিবার চালাচ্ছেন মোশাররফ।
দুজনের মধ্যে বাবুল একসময় নগরের নিউমার্কেট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ থাকতেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বেচা-কেনা কমে যাওয়ায় বাসা ভাড়া আর সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তাই পরিবারকে পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে। এখন ব্যাচেলর বাসায় সিট ভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি।
শুধু বাবুল বড়ুয়া কিংবা মোশাররফই নন। নগরে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বই বিক্রির পেশা ছেড়েছেন অনেক পেশাদার ব্যবসায়ী। স্বল্প পুঁজির এই ব্যবসায়ীরা জানান, বই কোনো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নয়, এ ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমনিতেই বইকেনার মানুষ কমছে, তার ওপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। জমানো পুঁজি শেষে অনেকে এখন ধারদেনা করে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন।
নগরীর চকবাজার এলাকায় বই বিক্রি করতেন আব্দুর রহমান। কিন্তু এখন বই বিক্রির পাশাপাশি আয়না, চিরুনি, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, রুমাল বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, গুদামে ৭-৮ হাজার বই পড়ে আছে। বাধ্য হয়ে ব্যবসা বদল করেছি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে আবারও বইয়ের ব্যবসায় ফিরবো।
তিনি বলেন, বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে বই বেচাবিক্রি বেশি হতো। এখন চাকরির প্রস্তুতির বইও বিক্রি করতে পারছেন না। কিছুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও এখন আবারও দুই সপ্তাহের বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রী নজরুল ইসলাম বলেন, বইয়ের দোকানে চিপস এবং হরেক রকম সামগ্রী দেখে হতবাক হয়েছি। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ঐতিহ্যবাহী বইঘর এটি। একসময় সারি সারি বই সাজানো থাকতো। এখন বই বিক্রি হয় না বাবুল ভাইয়ের দোকানে। আমি ঢাকা যাওয়ার সময় এখান থেকে বই কিনে নিয়ে পড়তাম। কিন্তু এখন বইয়ের বদলে চিপস, বিস্কুট ইত্যাদি দেখে খারাপ লাগছে। খবর বাংলানিউজের
বইঘরের স্বত্ত¡াধিকারী বাবুল বড়ুয়া বলেন, একটাও বই বিক্রি নেই। পরে বাধ্য হয়ে অন্য সামগ্রী বেচাকেনা করতে হচ্ছে। দোকান ভাড়া দিতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগে পরিবারসহ নিউমার্কেট এলাকায় থাকতাম। করোনার কারণে বেচাকেনা বন্ধ হওয়ায় পরিবারের সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে আমি ব্যাচেলর মেসে থাকছি। একসময় মানুষ যখন ট্রেনের জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করতেন তখন বই কিনতেন সময় কাটানোর জন্য। এখন কেনে না। মানুষ মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এরপরও কিছু বই বিক্রি হলেও এখন করোনা ভাইরাস সবকিছু পাল্টে দিয়েছে।
পিপলস বুক এজেন্সির মালিক মোশাররফ হোসেন বলেন, পুরাতন স্টেশনেও আমার বইয়ের দোকান ছিল। তখন থেকেই আমি বই বিক্রি করি। হঠাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সবকিছু কেমন যেন হয়ে গেল। বাধ্য হয়ে বইয়ের পাশাপাশি অন্য সামগ্রী বিক্রি করছি।