বইছে তাপপ্রবাহ আসছে কালবৈশাখী

76

তুষার দেব
বৈশাখের বিদায়লগ্নে প্রকৃতিতে মৌসুমের দ্বিতীয় মৃদু তাপদাহ বইছে। চট্টগ্রামসহ দেশের সাতটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে গত ক’দিন ধরে বয়ে চলা এই তাপদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যেই গত রাত থেকে পরবর্তী আটচল্লিশ ঘন্টায় চট্টগ্রামসহ অন্তত পাঁচটি অঞ্চল কালবৈশাখী ঝড়ে পড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পূর্বাভাস বলছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী বজ্রমেঘ তৈরি হয়েছে, যা ক্রমশ পূর্বদিকে এগিয়ে আসছে। যার ফলে গত রাত থেকেই পরবর্তী আটচল্লিশ ঘন্টায় ও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের বেশকিছু স্থানে ঘন্টায় ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বা তারও অধিক বেগে কালবৈশাখী ঝড় অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে উক্ত বিভাগসমূহের সকল এলাকায় বৃষ্টিপাত না হলেও ঝড়ো বাতাসের কারণে তাপদাহের উষ্ণতা থেকে সাময়িক স্বস্তি মিলতে পারে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টার জন্য দেয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া ও বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, কিশোরগঞ্জ, স›দ্বীপ, সীতাকুন্ড, রাঙামাটি, ফেনী, হাতিয়া, রাজশাহী এবং পাবনা অঞ্চলসহ খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা কোনও কোনও এলাকায় অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী আটচল্লিশ ঘন্টা বা দু’দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক চার ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলগুলোতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক চার থেকে ৩৬ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম শহর এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া, রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কোনও কোনও এলাকায় কমবেশি বৃষ্টিপাতও হয়েছে। সর্বোচ্চ ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায়।
চলতি মে মাসে আবহাওয়ার বিরাজমান দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসের তথ্য উদ্ধৃত করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, এ মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের লক্ষণই বিদ্যমান রয়েছে। একই সময়ে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। মে মাসজুড়ে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিনদিন মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী এবং দেশের অন্যত্র তিন থেকে চারদিন হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। একইসময়ে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু বা মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এবার কালবৈশাখী মৌসুম শুরু হওয়ার পর গত ৩ মার্চ ভোরে প্রথম শিলাবৃষ্টির দেখা মেলে। ওইদিন ভোরের আলো না ফুটতেই মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুর ও চাঁদপুরে কয়েক মিনিট স্থায়ী শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে আমের মুকুল ও ফসলের ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সাত জেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুরে শিলাবৃষ্টির দেখা মিললেও সদরসহ অধিকাংশ এলাকায় এখনও কালবৈশাখী ঝড়ে আক্রান্ত হয়নি। বরং এখানকার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতেই গত কয়েকদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। শিলাবৃষ্টির পরদিন অর্থাৎ গত ৪ মার্চ রাতে ঢাকা ছাড়াও ফরিদপুর, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ আশপাশের এলাকার ওপর দিয়ে মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। এসময় কোথাও ঝড়ো বাতাসের গতি, আবার কোথাও বৃষ্টির দাপট বেশি ছিল।
প্রকৃতিবিশারদদের মতে, নামে বৈশাখ যুক্ত থাকলেও শীতের বিদায়ের পর ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, সমগ্র পূর্ব এবং উত্তরপূর্ব ভারতে যে ঝড় বয়ে যায় তাই কালবৈশাখী। বাংলা বর্ষের শুরুতে মানে বৈশাখ মাসে এ ঝড় তুলনামূলকভাবে বেশি হয় বলেই এ ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত লাভ করেছে। কালবৈশাখীর আসল নাম,‘নর-ওয়েস্টার।’ অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড় ধেয়ে আসে বলে একে বলে ‘নর-ওয়েস্টার’। তাই বলে কালবৈশাখী শুধুমাত্র বৈশাখ মাসেই (১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত) দেখা যাবে- এমনটি নয়। কালবৈশাখী এবং সাধারণ ঝড়ের মধ্যে পার্থক্য বিচার করার কিছু মাপকাঠি রয়েছে। মোটা দাগে বলা যায়, ঝড়ের গতিবেগ ঘন্টার ৫০ কিলোমিটারের বেশি এবং স্থায়ীত্ব অন্তত একমিনিট হলে সেটাই কালবৈশাখী ঝড়। উল্লেখ্য, এশিয়া অঞ্চলের আবহাওয়াবিদরা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে গণনা করেন।