ফোর-জি চালু ও বেড়া দেওয়া স্থগিত হবে আত্মঘাতী

44

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্কের থ্রি-জি ফোর-জি চালু ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ স্থগিত করার আহব্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে ৫০টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। সংগঠনগুলোর এ দাবি মেনে নিলে তা ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছেন কক্সবাজারের সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
তারা বলছেন, বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বারবার বলছেন, জনসমাগম এড়ানোর জন্য, ঘরে থাকার জন্য। এক্ষেত্রে ১১ লাখ মানুষকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য কাঁটাতারের বেড়া ব্যাপক সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে। কাজেই এই সময়ে এসে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ স্থগিত করার দাবি একেবারেই অযৌক্তিক। খবর বাংলানিউজের
রোহিঙ্গারা যেহেতু সবাই কাছাকাছি অবস্থানে একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আছে সেহেতু তাদের মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষারও প্রয়োজন নেই। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হলে তারা বাইরে বা মিয়ানমারে গোপনে আসা-যাওয়া করে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়াতে পারে।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমন করতে শিবিরগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া থাকা জরুরি। দ্রুত এ নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। কারণ প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে রোহিঙ্গারা আশ্রয় শিবির থেকে পালানোর চেষ্টা করছে।
এছাড়া খুন, হত্যা, মাদক ও নারী-শিশু পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে তারা জড়িয়ে পড়ছে। ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে। শিবিরগুলো উন্মুক্ত থাকলে যেকোনো সময় তারা লোকালয়ে গিয়ে খুন-রাহাজানিতে লিপ্ত হতে পারে। ইতোপূর্বে এর বহু আলামত আমরা দেখেছি বলেও জানান আয়াছুর রহমান। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মোবাইল ব্যবহার করে ক্যাম্পের ভেতরে মাদক ও মানবপাচার এবং হাটবাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। শরণার্থী আইন অনুসারে উদ্বাস্তুরা অবৈধভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারলেও কিছু এনজিওর কারণে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পে মোবাইল ফোন উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়নি। যে কারণে রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা মোবাইলের নেটওয়ার্ক বন্ধ না হওয়ায় ইতোপূর্বে শিবিরে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত হচ্ছে। অপরাধ দমন করতেই রোহিঙ্গা শিবিরে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা দরকার।
গত ৩০ মার্চ আর্টিকেল-১৯, আসিয়ান পার্লামেন্টেরিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস, অ্যাকশন করাপস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বিঅন্ড বর্ডার্স মালয়েশিয়া, ব্রিটিশ রোহিঙ্গা কমিউনিটি ইউকে, ফরটি রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক ৫০টি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে যৌথভাবে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘করোনা ভাইরাস বা ‘কোভিড ১৯’ ছড়িয়ে পড়া থামাতে মোবাইল ফোনের দ্রæতগতির ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। অবাধ ইন্টারনেট স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সেবা দিতে ভালো ভ‚মিকা রাখে। এছাড়া শরণার্থী শিবিরে যারা কাজ করছেন তাদের জন্যও এটি প্রয়োজন।
চিঠিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের চারপাশে বেড়া নির্মাণের কাজ মহামারি শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয়। এই বেড়া নির্মাণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে তীব্র ভয় ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে যা রোহিঙ্গা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদারকেও।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের সাবেক আহব্বায়ক মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধ ঠেকাতে আশ্রয় শিবিরগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া থাকা জরুরি। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও তারা এখন নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। তারা নানাভাবে মূলধারার লোকজনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় কাঁটাতার বা দেওয়াল নির্মাণ করে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক ৫০ সংগঠন যে দাবি তুলেছে তা অযৌক্তিক এবং রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ পরিস্থিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ স্থগিত করা হলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি বহুগুণ বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, যেসব এনজিও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছে তাদের অধিকাংশের অবস্থান মিয়ানমারে। এই আবেদনের অন্তরালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মহামারি করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটাতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মদদ ও হীন উদ্দেশ্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। কাজেই এসব দাবি মানা হলে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকবে, সব দিক বিবেচনা করে যেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।