ফেসবুককে ‘গণশত্রু’ আখ্যা ট্রাম্পের

6

নতুন করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তোপের মুখে পড়েছে ফেসবুক, যা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে ওয়াল স্ট্রিটের ব্যবসায়ীদেরও। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ফেসবুককে ‘গণশত্রু’ বলে আখ্যা দেওয়ার পর গত সোমবার মেটার শেয়ারমূল্য কমেছে চার শতাংশ। সম্প্রতি শেয়ারবাজারে ‘অন্যতম তারকা’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল ফেসবুকের মালিক কোম্পানিটি।
এ ছাড়াও, নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ ট্রাম্পের একটি পোস্ট প্রকাশের পর শুক্রবার মেটার শেয়ারমূল্য কমেছে এক দশমিক দুই শতাংশ। এ পোস্টেও ফেসবুককে ‘জনগণের প্রকৃত শত্রু!’ বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ট্রাম্পের আক্রমণ শুরুর পর থেকে ছয় হাজার কোটি ডলারের বেশি বাজারমূল্য কমেছে মেটার।
‘এ ঘটনার পেছনে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যগুলো’- সিএনএন’কে বলেন বিনিয়োগ কোম্পানি ‘ডিএ ডেভিডসন’-এর বিশ্লেষক জিল লুরিয়া। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিতর্কে সবসময়ই ফেসবুককে টানা হয়, যা কখনওই তাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি’। খবর বিডিনিউজের
গত সপ্তাহে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ভিডিও অ্যাপ টিকটকের পক্ষে দাঁড়িয়ে অনেককেই চমকে দিয়েছেন ট্রাম্প, যেটিতে নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন কংগ্রেসের অনেকেই। এর মধ্যে রয়েছেন ট্রাম্পের নিজ দল অর্থাৎ রিপাবলিকান সদস্যরাও।
তবে ট্রাম্পের টিকটকের পক্ষে দাঁড়ানোর কারণ কী? এর স্বপক্ষে তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, টিকটকে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তা ফেসবুকের জন্য সহায়ক হবে, যাদের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস আছে।
‘টিকটকে নিষেধাজ্ঞা দিলে আপনি ফেসবুককে আরও বড় হতে সহায়তা করবেন। আর আমি ফেসবুককে জনগণের শত্রু বলে মনে করি, যে তালিকায় আছে বেশ কিছু গণমাধ্যমও’- সোমবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টক মার্কেট খোলার আগে সিএনবিসি’কে বলেন ট্রাম্প।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল দাঙ্গার পর ট্রাম্পের ওপর দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফেসবুক। পরবর্তীতে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ট্রাম্পের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে আনে মেটা।
‘আমি মনে করি, ফেসবুক এ ঘটনার ক্ষেত্রে খুবই অসৎ ছিল। আমার ধারণা বলছে, ফেসবুক আমাদের দেশের জন্য খুবই বাজে, বিশেষ করে নির্বাচনের বেলায়’- বলেন ট্রাম্প।
এ প্রসঙ্গে রয়টার্স মেটার মন্তব্য জানতে চাইলেও সাড়া মেলেনি।
ট্রাম্পের আক্রমণের পর সোমবারের মেটার শেয়ারমূল্য পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত কমতে দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে শেয়ারবাজারে কোম্পানির সবচেয়ে বাজে দিন কাটানোর ঘটনা।
ডিএ ডেভিডসনের বিশ্লেষক লুরিয়া বলেন, ট্রাম্পের এমন মন্তব্য ফেসবুককে আবারও ওয়াশিংটনের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
‘যখন কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তাদেরকে জনগণের শত্রু বলে আখ্যা দেন, তখন এমন বিতর্কের পারদ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যেখানে তারা কয়েক বছর ধরেই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েনি’- বলেন লুরিয়া। তিনি আরও যোগ করেন, বিশেষ করে ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন, তখন ফেসবুকের ওপরও চাপ বাড়বে। ফলে, ভবিষ্যতে কোনো কোম্পানি অধিগ্রহণ করাও জটিল হয়ে উঠবে মেটার জন্য।
কোম্পানিটির অগ্রগতির পেছনে সবচেয়ে বেশি ভ‚মিকা রেখেছে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবাগুলোর অধিগ্রহণ।
‘ভবিষ্যতে এ ধরনের চমকপ্রদ কিছু কিনতে না পারলে প্রতিযোগিতার বাজারেও সমস্যায় পড়বে কোম্পানিটি। একজন প্রেসিডেন্ট অনেক প্রভাবশালী সিদ্ধান্তই নিতে পারেন, যার একটি হতে পারে একটি সুনির্দিষ্ট ভোটার শ্রেণির ওপর কোম্পানিটির আকর্ষণ কমে যাওয়ার বিষয়টি’- বলেন লুরিয়া।
এক্ষেত্রে, ট্রাম্প নিজেই সোশাল মিডিয়ায় অনেক বেশি সক্রিয় থাকেন।
সম্প্রতি ‘ট্রুথ সোশাল’-এর মালিক কোম্পানি ‘ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রæপ’ ও এক ‘বø্যাংক-চেক’ কোম্পানির মধ্যে জোট বাঁধার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা।
এ মাসের শেষে কোম্পানির শেয়ার মালিকরা এতে সম্মতি দিলে ট্রাম্প নতুন এক পাবলিক কোম্পানির বড় শেয়ার অংশীদার হতে চলেছেন, যার বাজারমূল্য হতে পারে কয়েকশ কোটি ডলার পর্যন্ত।