ফেব্রুয়ারি এলেই ইংরেজি লেখা সাইনবোর্ডে নজর পড়ে চসিকের

28

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

এসেছে ফেব্রুয়ারি। রক্তে অর্জিত ভাষার মাস। ভাষা আন্দোলনের সাত দশকে বাংলা ভাষার বিস্তৃতি বেড়েছে। তবুও বিদেশি ভাষার দাপুটে, মিশ্রণে হারানোর পথে বাংলা ভাষার মৌলিকতা। নগরজুড়ে ‘সাইনবোর্ডে’ ভিনদেশি ভাষার ছড়াছড়ি। অথচ এসব ‘সাইনবোর্ড’ নির্ধারিত কর পরিশোধপূর্বক অনুমোদন দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। অনুমোদন দেওয়ার সময় কোনো রকম তদারকি না থাকলেও ভাষার মাস আসলে চেতনা বেড়ে যায় সংস্থাটির। কেবল এ মাস আসলে বিদেশি ভাষার হরফমুক্ত সাইনবোর্ড দেখার স্বপ্ন দেখা হয়। জরিমানাও করা হয়। তবে তা যেন মাস শেষ হতেই ফুরিয়ে যায়।
বরাবরের মত এবারও চসিক থেকে ঘোষণা এসেছে ভাষার মাসেই ইংরেজি লেখা সাইনবোর্ড মুক্ত হবে চট্টগ্রাম। এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথম দিনেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৩ দোকানিকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলীর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামসংলগ্ন চত্বরে বাংলায় নামফলক প্রতিস্থাপন কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়র তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাদের মাতৃভাষা বাংলা পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার চেয়ে গৌরবের ও গর্বের। কারণ এই একটি ভাষা একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই।আমাদের দেশই পৃথিবীর একমাত্র ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বাঙালির মাঝে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। সেই চেতনাই জন্ম দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলনের যা একাত্তরে স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম। তিনি বলেন, ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর সবচেয়ে বড় উপায় হলো বাংলা ভাষার স্বাতন্ত্র্য, শুদ্ধতা এবং সৌন্দর্য যাতে অক্ষুণœ থাকে সে লক্ষে সক্রিয় থাকা। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বাংলা ভাষাকেও আধুনিক প্রযুক্তিগত ভাষা হতে হবে নইলে বাংলাদেশ বিশ্ব সভ্যতার অগ্রগতির যুগে পিছিয়ে যাবে। মেয়র আগামী ২১ ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগে নগরীর সকল সরকারি-বেসরকারি ও দোকানপাটে সাইনবোর্ড বাংলায় প্রতিস্থাপন করার আহব্বান জানান। যদি এর মধ্যে কেউ এই নির্দেশনা না মানে তাহলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও দিলরুবার সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজা মিয়া, ডা. শাহ আলম ভূঁইয়া, তৌহিদুল আলম কাজল, হাসান মারুফ রুমি, আসমা আক্তার, ডা. আর.কে রুবেল, শফিউদ্দিন কবীর আবিদ, সিনঞ্চন ভৌমিক, সুজন্ময় চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন জাফর, মহিম উদ্দীন, সুজাদ্দৌলা বাবুল, ছাত্রলীগ নেতা লিটন চৌধুরী রিংকু, শাহরিয়ার নিলয় প্রমুখ।
মেয়র আরো বলেন, ভাষার জন্য বাংলার দামাল সন্তানদের আত্মত্যাগ স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর। এইদিন ইউনেস্কো ২১ ফেব্রæয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। আত্মত্যাগ ও আত্মজাগরণের গৌরবোজ্জ¦ল অধ্যায়ের কারণে মাতৃভাষা দিবসটি পালিত হয় পরম মমতায়। কিন্তু গতবছরের মত এবারো বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে অন্যান্য দিবসগুলোর মতোই মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ক্ষেত্রেও ঘটছে ছন্দপতন। বাংলা ভাষার শুদ্ধতা রক্ষায় ব্যর্থ হলে পরম গৌরবময় সেই আত্মদান বৃথা যাবে। তাই ভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের পাশাপাশি দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন। ভাষার মাসে মাতৃভাষার প্রতি মানুষের ভালোবাসা জাগিয়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। নবীন প্রজন্মদের জ্ঞান আকাক্সক্ষা আর স্বপ্নের আদান-প্রদান মাতৃভাষার মাধ্যমে সবচেয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হতে পারে। এটা অনস্বীকার্য যে ভালোবাসা লালনের মধ্যে দিয়ে নিজস্ব ভাষাভাষী মানুষের প্রতি সম্প্রীতি ও মমতা তৈরি হয়। আশঙ্কার বিষয় হলো বাংলা ভাষায় ইংরেজি সহ বিদেশি শব্দের অযথা অনুপ্রবেশ ঘটছে, এই বিষয়ে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
মেয়র করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও টিকা গ্রহণ করে নিজের এবং অন্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নগরবাসীকে আহব্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা বাংলায় নামফলক স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। সাবেক মেয়রের আমলে এব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে তা থেমে যায়। এবারও আমরা বিদেশি ভাষায় লিখিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলাম। তবে চসিক মেয়রের আশ্বাসে আমরা উচ্ছেদ থেকে সরে আসি। আশা করি তিনি যে আশ্বাস দিয়েছেন তা ভাষাদিবসের আগেই বাস্তবায়ন করবেন।