ফেটে গেছে মাতামুহুরী নদীর রাবার ড্যাম, সংকটে মিঠা পানি

25

পূর্বদেশ অনলাইন
কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর সেচ প্রকল্পের রাবার ড্যাম ফেটে নোনা পানি ঢুকে পড়ছে। এতে এ প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল নদীর দু’কুলের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ২০ হাজার একর বোরো চাষের মিঠা পানি সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সোমবার ভোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঘগুজারা রাবার ড্যামের একটি স্প্যানের রাবার ব্যাগ ফেটে গেলে এ সংকট তৈরি হয়।
কৃষি অধিদপ্তর, এলাকাবাসী ও কৃষকদের সূত্রে জানা যায়, রাবার ড্যামের ব্যাগ ফেটে যাওয়ায় বোরো চাষের জন্যে আটকানো মিঠা পানি সাগরের দিকে নেমে যাচ্ছে এবং জোয়ারে নোনা পানি ঢুকে পড়ছে। এতে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী, বিএমচর,পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, বদরখালী, ঢেমুশিয়া ও বরইতলী এবং পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও শীলখালী ইউনিয়নের বোরো চাষ মিঠা পানি সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এসব ইউনিয়নে এ ড্যামের ওপর অন্তত ২০ হাজার একর জমির বোরো ও রবি শষ্যের চাষ হয়ে আসছে।
রাবার ড্যামের তত্ত্বাবধায়ক আবদুর রহিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অতিরিক্ত সামুদ্রিক জোয়ারের চাপে ড্যামটির ২ নাম্বার স্প্যানের রাবার ব্যাগ ফেটে গেছে। যে কারণে লোনা পানি ঢুকে পড়ছে। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ড্যামের ওপরের অংশে বালু তোলার জন্যে ৫ থেকে ৬টি ড্রেজার রয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে ড্রেজার মালিকরা রাবার ব্যাগ ডাউন করে ড্রেজারগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে তদবির করে আসছিল। এতে কৃষক ও এলাকাবাসীর সন্দেহ, ড্রেজারগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্যে ব্যাগ ফুটো করে দিয়ে ফেলতে পারে। আগেও নৌকা চলাচল ও বাঁশ-গাছ ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ রকম ঘটনা ঘটেছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১২ সালে মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া-পেকুয়া অংশের বাঘগুজারা ও চকরিয়ার পালাকাটায় দুইটি এবং এর আগে ২০০৩ সালে পেকুয়ার ভোলা খালে আরও একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। এই তিনটি রাবার ড্যামের সাহায্যে প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে দুই উপজেলায় অন্তত ৬০ হাজার একর জমিতে ইরি-বোরো ও রবি শষ্যের চাষ হয়ে আসছে। ইরি-বোরো চাষ শেষে প্রতি বছরের মে মাসের শুরুর দিকে রাবার ড্যাম গুলোর রাবার ব্যাগ আবার নামিয়ে দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু বোরো চাষে পানি সেচের প্রয়োজনীয়তা আরও প্রায় ১ মাস রয়ে গেছে। এ অবস্থায় সোমবার ভোর রাতের কোন এক সময় পেকুয়ার বাঘগুজারা রাবার ড্যামটির ২ নাম্বার স্প্যানের রাবার ছিঁড়ে গিয়ে নদীর উপরের দিকের আঁটকানো মিঠা পানি বের হয়ে যাচ্ছে। চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন জানান, এখন বোরো ধানের থোড় আসা শুরু হয়েছে। আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫দিন সেচের প্রয়োজন রয়েছে। এ মুহূর্তে মিঠা পানি আটকিয়ে রাখা না গেলে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া শাখা কর্মকর্তা জামাল মোরশেদ জানান,জরুরি ভিত্তিতে ড্যামের ব্যাগ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। হয়তো ৭দিন সময় লাগতে পারে। বালু উত্তোলনকারীরা ড্রেজার বের করতে কোনো নাশকতা করেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ড্যাম এলকায় সার্বক্ষনিক পাহারা থাকে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
তিনি আরও বলেন, ড্যামের ব্যাগগুলো প্রায় ১২ বছরের পুরনো। লবণ পানির ভেতরে ডুবে থাকে। তাতে ব্যাগগুলো জরাজীর্ণ হয়ে এসেছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, এখন মৌসুম শেষ পর্যায়ে। আপাতত ফুটো রাবার ব্যাগ মেরামত করা হচ্ছে। আগামী বর্ষা শেষে নতুন ব্যগ বসানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা চাওয়া হয়েছে।