ফেঁসে যাওয়ার শঙ্কায় সিডিএ

35

নিজস্ব প্রতিবেদক

খাস জমিতে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে এবার ফাঁসছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির মধ্যে বিরোধের মধ্যে খাস জমিতে স্থাপনার নকশা অনুমোদন করে বেকায়দায় পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আইনজীবী সমিতির ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত ৭ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহমুদুর রহমান হাবিব সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষকে এই চিঠি দেন।
চিঠিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রামস্থ পরীর পাহাড়ে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি খাস জমিতে আইনজীবীদের পাঁচটি বহুতল ভবন অনুমোদন কার্যক্রমের সাথে জড়িত সিডিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম, পদবী, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা (স্থায়ী/ বর্তমান ঠিকানা), মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে’।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চিঠিতে সিডিএ চেয়ারম্যানকে নকশা অনুমোদনের সাথে সংশ্লিষ্ট নথিসমূহের নোটসীটের ফটোকপি, সভার কার্যবিবরণী, অনুমোদিত নকশার কপি, অনুমোদনের বিবরণী সীটও মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়। অন্যদিকে বেশ কয়েকবার অবৈধ স্থাপনাগুলো সরাতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদের অনুরোধ জানিয়ে গত ১১ এপ্রিল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের কাছে আরো একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নূরুল আমিন এই চিঠি দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাচীর সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠা ‘ঘরগুলো’ অপসারণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম অফিস একটি ১ (ক) শ্রেণিভুক্ত কেপিআই প্রতিষ্ঠান। কেপিআই নীতিমালায় প্রণীত নির্দেশনা ৬.১.১ অনুযায়ী কেপিআই এর সীমানার ২০ (বিশ) মিটারের ভেতরে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে কেপিআইডিসির মতামত বা ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। সম্প্রতি ব্যাংকের নতুন ভবনের উত্তর পার্শ্বে কোর্ট বিল্ডিং পাহাড়ের পাদদেশে ২/৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, যা কেপিআই নীতিমালার পরিপন্থী এবং এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে’।
এদিকে বারবার বিভিন্ন সংস্থার অনুরোধের পরও সিডিএ এখনো কোনো ব্যবস্থায় যায়নি। আইনজীবী সমিতি ও জেলা প্রশাসনের বিরোধের মধ্যে নিরব ভূমিকায় থাকা সিডিএ’র কাছে এবার নকশা অনুমোদনে জড়িতদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এতে করে এই বিরোধে সিডিএ-ও যুক্ত হচ্ছে। অবৈধভাবে নকশা অনুমোদন হলে সিডিএ’র কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সিডিএ’র চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষের মোবাইলে একাধিবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কোর্ট হিল বা পরীর পাহাড়ে খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি জমিতে বিধি-বহির্ভূতভাবে আইনজীবী ভবনের পাঁচটি ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন করে সিডিএ’র কিছু কর্মকর্তা। ২০০৩-২০০৪, ২০০৪-২০০৫, ২০০৮-২০০৯ এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এসব নকশা অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর গত বছরের আগস্টে আইনজীবী সমিতি আরও দুটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তখন সেটিতে বাধা দেয় জেলা প্রশাসন। এরপর থেকে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। পরে সরকারের ২৪টি দপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে কোর্ট হিলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বলা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর মধ্যেই সিডিএ’র জড়িত কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়ে চিঠি দিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিডিএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে যাবতীয় সবকিছু দেখেই অনুমোদন দেয়া হয়। এখন দুটি সংস্থার বিরোধের মধ্যে এগুলো নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে যেহেতু তথ্য চাওয়া হয়েছে, সে অনুসারে তথ্য দিবে। সিডিএ’র কোনো দোষ নেই, এরপরও কখন কি হয় বলা যায় না। শেষ পর্যন্ত যে কাউকে ফাঁসানো হবে না সেটাও বলা যাবে না।