‘ফুসফুস’ বাঁচাতে ফুঁসছে চট্টগ্রাম

51

রাহুল দাশ নয়ন

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদরদপ্তর সিআরবির সবুজ বাঁচাতে ফুঁসছে চট্টগ্রাম। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন সিআরবিতে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও ১০০ সিটের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের বিরোধিতা করছে। ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের এ হাসপাতাল সিআরবির পরিবেশকে দূষিত করবে বলেই মতামত দিয়েছেন তাঁরা। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে গত বছরের ১৮ মার্চ হাসপাতালটি করার চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সিআরবির গোয়ালপাড়া এলাকার ছয় একর জমির উপর হাসপাতালটি নির্মাণ করা হবে।
রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে হাসপাতালটি নির্মাণ করলেও ৫০ বছর পর এ হাসপাতালটি সম্পূর্ণ রেলওয়ের নিকট হস্তান্তর করবে এবং তা সম্পূর্ণরূপে রেলওয়ের হাসপাতাল হিসেবে গণ্য হবে। প্রস্তাবিত এলাকায় শতবর্ষী কোন গাছ নেই। সেই স্থানে বিদ্যমান গাছ এবং ভূমিরূপের অবয়ব ঠিক রেখেই হাসপাতালটি নির্মাণ করা হবে। এ হাসপাতাল নির্মিত হলে সিআরবি এলাকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও শিরীষতলায় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানসহ নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা ও বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না বলেও মনে করছে রেলওয়ে।
এ হাসপাতাল করতে গত বছর চুক্তি হলেও প্রায় দেড় বছরের মাথায় নড়েচড়ে বসে চট্টগ্রামের মানুষ। সিআরবিকে ‘চট্টগ্রামের ফুসফুস’ আখ্যায়িত করে এ জায়গায় যাতে কোনরূপ হাসপাতাল না হয় সেজন্য কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রেলমন্ত্রী সেখানে হাসপাতাল হবে বলে ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর মতামতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, সিআরবির হাসপাতাল নির্মাণ এবং পরিবেশ ও বৃক্ষ সংরক্ষণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে শীঘ্রই আলোচনা করে একটি সমাধান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশের প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই বলেও নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সিআরবি সুবজ বাঁচানোর লক্ষ্যে সরকারকে সংবিধানের ১০২ ধারায় সাত দিনের লিগ্যাল ডিমান্ড নোটিশ জারি করেছে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন নামে একটি পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন। সংগঠনের পক্ষে আইনজীবীরা এ নোটিশ দিয়েছেন।
গতকাল চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সিআরবির প্রস্তাবিত হাসপাতাল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন।
পরিদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘এলাকার মানুষের চাওয়া পাওয়ার বাইরে আওয়ামী লীগ সরকার যাবে না। পরিবেশ ও বৃক্ষরাজি ধ্বংস করে সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ হোক আমরাও চাই না। চট্টগ্রামে হাঁটার জায়গা নেই। সিআরবির এই এলাকায় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। হাসপাতাল নির্মিত হলে সেখানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি হবে। এতে পুরো এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী দ্রæত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত দিবেন। যে সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামবাসীর পক্ষেই যাবে।’
ঐতিহাসিকভাবে সিআরবিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। চট্টগ্রামবাসীর কাছে পহেলা বৈশাখ, বসন্ত উৎসবসহ নানা সাংস্কৃতিক উৎসবের জন্য পরিচিত এই সিআরবি। মুক্ত হাওয়ায় ঘুরতে সিআরবিকেই বেঁচে নেন নগরবাসী। যে কারণে সেখানে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ হাঁটাচলা করেন। সেখানে থাকা শতবর্ষী বৃক্ষরাজির ছায়াতলে বসে বন্ধুমহলের জম্পেশ আড্ডা। এমন সুনিপুন পরিবেশ নষ্ট করে সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন চট্টগ্রামবাসী। সিআরবির সবুজ বাঁচাতে এ প্রকল্প বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরাও।