ফুল নিয়ে এমপির দপ্তরে ‘শিবির ক্যাডার’ জাবেদ

266

চন্দনাইশ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে ফুলের তোড়া দিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সাতকানিয়ার চাঞ্চল্যকর যুবলীগ কর্মী আবদুল জব্বার হত্যা মামলার আসামি জাবেদ জাহাঙ্গীর। এলাকায় ‘দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত একাধিক মামলার এই আসামি গত বৃহস্পতিবার কেওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির আহমদকে সাথে নিয়ে সাংসদের নগরীর সদরঘাটের কার্যালয়ে হাজির হন। সাংসদের হাতে তিনি ফুলের তোড়া দেন। ছবিও ধারণ করেন। পরে সাংসদকে ফুল দেয়ার ছবিটি ফেসবুকে আপলোড করলে তা ভাইরাল হয়। একইসাথে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। জাবেদের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর যুবলীগ কর্মী আবদুল জব্বার হত্যা মামলাসহ নাশকতা ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার একাধিক মামলা আছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চন্দনাইশ-আংশিক সাতকানিয়া আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী সুব্রত বড়–য়া ফোন ধরেন। এসময় সংসদ সদস্য দোহাজারীতে একটি অনুষ্ঠানে আছেন বলে জানান। হত্যা মামলার আসামি জাবেদের ফুল দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন চেয়ারম্যানের সাথে ফুল দিতে এসেছিলেন জাবেদ। সে কোনো হত্যা মামলার আসামি কিনা বিষয়টি জানতেন না এমপি মহোদয়। আমি বিষয়টি এমপি মহোদয়ের নজরে আনবো। এরকম হত্যা মামলার আসামিকে নিয়ে ফুল দেয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান মনিরকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।’
জানা যায়, ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর সরকারের শেষ সময়ে সাতকানিয়া থানার মাদারবাড়ি এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীদের হামলায় গুরতর আহত হন যুবলীগ কর্মী আবদুল জব্বার (২৬)। আশঙ্কাজনকভাবে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে আনা হলে ১৯ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জব্বার। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করলে নিহত জব্বারের পরিবারকে ঢাকায় ডেকে দশ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচিত এ মামলার অন্যতম আসামি কেওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়া এলাকার মো. ইলিয়াছ ড্রাইভারের ছেলে জাবেদ জাহাঙ্গীর। যুবলীগ কর্মী জব্বার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন এ শিবির ক্যাডার। তার বিরুদ্ধে সেসময় ১৭টির মত মামলা বিচারাধীন থাকার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরমধ্যে কোনো একসময় অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যান জাবেদ। সেখানেও শেষ রক্ষা হয়নি। ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর জেএমবির জঙ্গি সন্দেহে জাবেদকে গ্রেপ্তার করে ভারতের পশ্চিবঙ্গের বনগাঁ থানা পুলিশ। পরে দেশে ফেরত আসার পর পুলিশ তাকে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করে।

জামিনে এসে জাবেদ আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে কুকীর্তি আড়ালের মিশনে নেমে পড়েন। সম্প্রতি কেরানিহাট ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন জাবেদ। বিজয়ী হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ফুলের তোড়া নিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় স্থানীয় কেওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমদও উপস্থিত ছিলেন।
সাতকানিয়া কেওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির আহমদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘জাবেদকে আমি চিনি। এমপিকে ফুলও দিয়েছি। তবে, জাবেদ যুবলীগ নেতা জব্বার হত্যা মামলার আসামি কিনা আমার জানা নেই। রাজনৈতিকভাবে কোনো দলের সাথে নেই জাবেদ। ও একটু পাগল টাইপের। কোনো রাজনীতি করে না।’
জানতে চাইলে জব্বার হত্যা মামলার আসামি জাবেদ জাহাঙ্গীর পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি এমপিকে ফুল দিয়েছি। হত্যা মামলার আসামি ছিলাম কিনা সেটি থানা ভালো জানবে। আমার সম্পর্কে কেরানিহাটের লোকজনই ভালো জানবে।’
এদিকে, যুবলীগ কর্মী আব্দুল জব্বারকে নৃশংসভাবে খুন করা হলেও হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে বলে জানান জব্বারের মা হোসেনে আরা বেগম। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল জামায়াত-শিবির। সেসময় থানার দারোগা ইয়ামিন বাদি হয়ে মামলা করেছিল। পরে শেখ হাসিনা আমাদেরকে ঢাকায় নিয়ে দশ লক্ষ টাকার চেক দিয়েছিলেন। এখন আসামিরা সবাই এলাকায় আছে। তাদের সাথে দেখা হলেও কথা বলি না। জাবেদ নামে যে আসামি আছে তাকেও চিনি। যদিও তার বাড়ি আমাদের চেয়ে একটু দূরে আবদুল হক চেয়ারম্যানের বাড়ি। আমার দুই ছেলের একজনকে খুন করা হয়েছে, আরেকজন কিছুদিন আগে মারা গেছে। এখন আমার শুধু দুইটা মেয়ে ছাড়া কেউ নাই। ছেলে হত্যার বিচারও পেলাম না। এখন শুনছি অনেকেই আওয়ামী লীগ করছে।’
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিউল কবীর পূর্বদেশকে বলেন, ‘জাবেদ জাহাঙ্গীর নামে কেউ জব্বার হত্যা মামলার আসামি ছিল কিনা কিংবা তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে কিনা খোঁজ নেয়া হচ্ছে। থানার ফাইলপত্র দেখেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্য কোনো মামলায় আসামি থাকলেও ছাড় দেয়া হবে না। বিষয়টি দ্রæত তদারকি করা হচ্ছে।’