ফুটুক একুশের ফুল

269

বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান লিখেছেন: ‘আমার সন্তানেরা সবাই বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া শিখেছে, আমার নাতি-নাতনিরা সবাই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করছে। … তাদের মন্ত্র অনেকটা ‘আমার এই দেশেতে জন্ম যেন ওই দেশেতে মরি’ ( শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, পৃ. ২৮৯)। গীতিকার ও শিল্পী আবদুল লতিফ এর গানের কথায় আছে, ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায় / ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমাদেরই হাতে পায়’। পাকিস্তান সৃষ্টির সাথে সাথেই বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী-র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া ঠেকাতে তৎপর হয় পশ্চিম পাকিস্তানের এলিট শ্রেণি, আমলাতন্ত্র এবং আরও অনেকে। তারই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী মুসলিম লীগের সক্রিয় নেতা-কর্মীসহ অধিকাংশ সচেতন বাঙালিকে শেকল পরিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছিল-সত্য। কিন্তু বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল-এ কথা কি ঠিক? মুখের ভাষা বা বুলিকে ইংরেজিতে বলে মাদার ট্যাং। আমরা বলি মাতৃভাষা বা মায়ের ভাষা। একটি রাষ্ট্র পরিচালনাকারী সরকার তাঁর রাজনৈতিক দলের আদর্শ মেনে কিংবা আমলাতন্ত্রের কাছে নতি স্বীকার করে তাঁর পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে নির্বিচারে নিজ দেশের নাগরিকদের হাতে-পায়ে শিকল পরাতে পারে বটে। মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে পারে না। এ একান্তই কবি-কল্পনা, গানের আবেগের কথা। আবেগের প্লাবনে আমরা আস্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছি আর আদিবাসীদের বা ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীদের তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের জন্য সচেষ্ট হচ্ছি। অথচ বাঙালি সন্তানকে বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমে পড়িয়ে এদেশেই চাকুরির সুযোগ করে দিচ্ছি।
এমন আবেগের ফুল ফোটে আরও অনেক গানে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গানে মোহাম্মদ শফি লিখেন: ‘মুজিব বাইয়া যাওরে / নির্যাতিত দেশের মাঝে / জনগণের নাও ওরে / মুজিব বাইয়া যাও রে\’ আর গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার লিখেন: ‘শোন, একটি মুজিবরের থেকে / লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি / আকাশে বাতাসে উঠে রণি।’ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত সমবেত সংগীতে আছে: ‘মুজিবর মুজিবর মুজিবর/ সাতকোটি মানুষের কণ্ঠস্বর’। এমন গান শুনে শুনে অজান্তে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নাম লিখতে গিয়ে কেউ হয়তো ভুল করে শেখ মুজিবর রহমান লিখছেন। তবু শিল্পীর স্বাধীনতা, কল্পনার মুক্তির জন্যেই মানতে হয়। কেননা ফল চাইলে প্রথমে ফুল ফোটাতে হয়, তারপর ফুল থেকে ফল ফলেÑএ প্রকৃতির নিয়ম।
আরেকটি আবেগের কথা অহরহ শোনা যায়: বাঙালি একমাত্র জাতি যাঁরা মাতৃভাষার জন্য রাজপথে প্রাণ দিয়ে (ঢাকা, ২১/০২/১৯৫২; শিলচর, ১৯/০৫/১৯৬১) বাংলা ভাষার মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছে। শহীদমিনারে ফুল দিয়ে ভাষা-শহীদদের আমরা শ্রদ্ধা জানাই যে দিনটাকে স্মরণ করে সে ২১ শে ফেব্রæয়ারি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ। এই খ্রিস্টাব্দকে আবেগীরা বলেন ইংরেজি বছর, আর দাবি করেন এর পরিবর্তে আমাদের স্মরণীয় দিন ৮ই ফাগুন ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ হোক। ওরা বাংলা ভাষার জন্যে প্রাণদানকারী শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চায় বাংলা তারিখ দিয়ে। আক্ষেপের বিষয় বর্তমান বাংলাদেশ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিনপঞ্জিতে বাংলা তারিখেরই মিল নেই। বেশিরভাগ সময়ে দুই দেশে বাংলা নববর্ষ পালিত হয় ভিন্ন দুই দিনে। এটাতো একদিক। আরেক দিকে আছে ঐতিহাসিক পটভ‚মি।
ইতিহাসের পাতায় দেখা যায়: ৮ ফেব্রæয়ারি ১৯৪৮ খ্রি. করাচিতে পাকিস্তান সংবিধান সভার বৈঠকে মুসলিম লীগ নেতারা উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করবার প্রস্তাব করেন। তখন কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবি করলেন: বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক। কিন্তু বৈঠকে তা আগ্রাহ্য করা হলে অব্যবহিত পরেই তমদ্দুন মজলিশ ও পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে। এই রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ এর সভায় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১১মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ ঘোষণা করা হয় (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ৯২)। এ সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ-এর সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হন এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নিজেই পূর্ব বাংলা আইন সভায় প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যে, পূর্ব বাংলার অফিসিয়াল ভাষা ‘বাংলা’ হবে। তাছাড়া যাতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় আইন সভায় কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করা হবে। এ প্রস্তাব পূর্ব বাংলার আইনসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ১৯৬)। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে লিয়াকত আলী রাওয়ালপিন্ডিতে এক জনসভায় গুলিতে নিহত হলে খাজা নাজিমুদ্দীন গভর্নর জেনারেল পদ ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি দ্বিতীবার পূর্ব বাংলায় এসে পল্টন ময়দানের এক জনসভায় (জানুয়ারি, ১৯৫২) ঘোষণা করলেন,‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু লিখেন: ‘যে ঢাকায় বসে তিনি ওয়াদা করেছিলেন সেই ঢাকায় বসেই উল্টা বললেন। দেশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হল। … আমি হাসপাতালে আছি। … সেখানেই ঠিক হল আগামী ২১ শে ফেব্রæয়ারি রাষ্টভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ করতে হবে। … একুশে ফেব্রæয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। কারণ, ঐদিনই পূর্ব বাংলার আইনসভা বসবে।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ১৯৭)। সুতরাং বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় সময়ের প্রয়োজনে সর্বোপরি ঐতিহাসিক পটভ‚মিতেই ২১ শে ফেব্রæয়ারি ১৯৫২ নির্ধারিত হয়েছিল। সুতরাং, একুশ বাঙালির অহঙ্কার। এর ভিত্তিতেই ১৯৫৪র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের আগে প্রণীত হয়েছিল একুশ দফা, ১৯৬৬র ছয়দফা । সর্বোপরি ২১ শে ফেব্রæয়ারি যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ১৯৯৯ খ্রি. থেকে বিশ্ববাসী পালন করছে, তখন একুশ নিয়ে আমাদের ভুল দুর হোক, বাঙালির মনে ফাগুনের কৃষ্ণচূড়া ফুটুক। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে, আমরা বলি বাঙালির বুকে একুশ উঠুক জেগে।
আরেকটি বিষয় ভাষা আন্দোলন বিষয়ক আলোচনায় আসে; এমনকি আলোচিত দৈনিকের শিরোনাম হয়: ‘বাংলা ভাষার সংগ্রামের প্রস্তাব লেখা হয়েছিল ইংরেজিতে’। মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রামের যে প্রস্তাব, সেটি লেখা হয়েছিল ইংরেজিতে। অলি আহাদের তথ্য অনুযায়ী, সেদিন শামসুল হকের লেখা যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিল তা লেখা হয়েছিল ইংরেজিতে। অথচ এরা সবাই সংগ্রাম করেছিলেন মাতৃভাষা বাংলার জন্য (দৈনিক আজাদী, ১২/০২/২০২০)। প্রতিবেদনটির ভাষা দেখে মনে হতে পারে যেনো আন্দোলনকারীগণ ইংরেজি ব্যবহার করে ভুল করেছেন। আসলে কিন্তু তা নয়। এটিও ছিল সেই সময়ের বাস্তবতা। আমাদের অজানা নয় যে, হাজার বছর আগে থেকেই এ বঙ্গ জনপদের মানুষের মুখের ভাষা বাংলা। বৌদ্ধ পাল শাসন আমলে রাষ্ট্রীয় কাজ চলছে পালি ভাষায়, হিন্দু সেন আমলে সংস্কৃত ভাষায় আর চারশত বছর মুসলিম শাসনের সময়ে ফারসি ভাষায়। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশরা আদালতের ভাষা ফারসিকে বাতিল করে ইংরেজি করে দেয়। তার আরও আগে উনিশ শতকের শুরু থেকেই এঅঞ্চলে শিক্ষার ভাষা ছিল ইংরেজি। বাঙালি ইংরেজি ভাষার বিরুদ্ধে নয়, এমনকি উর্দুরও বিরুদ্ধে নয়। আমাদের দাবি ছিল উর্দুর সাথে বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হোক। আমাদের মুখের বুলিকে, মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে এই ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হোক। তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে, বিশ্বায়নের দোহাই দিয়ে আমাদের দেশের টাকায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে হবে কিংবা বাঙালির সেবা করবার চাকুরির নিয়োগ পরীক্ষা (বিসিএস) ইংরেজিতে দিবো। অনেকেই ভারতের উদাহরণ দেন ইরেজিতে দক্ষতার কারণে ওরা আজ বিশ্বের উচ্চ বেতনের চাকুরিগুলো দখল করে নিয়েছে। অথচ তারা খেয়াল করেন না যে চীন ইংরেজি না শিখে মাতৃভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা চালু রেখেই বিশ্ববাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে, বিশ্বের সেরা চাকুরিদাতা হবার পথে এগুতেও তাদের মাতৃভাষার শিক্ষাব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। যাঁরা ‘নিজ দেশ ত্যাগি’ বিদেশে যাবেন, তাঁরা এবং তাঁদের প্রজন্ম বিদেশি ভাষায় পড়াশোনা করুক আপত্তি নেই। তবে বাংলাদেশের সর্বস্তরে আবিলম্বে বাংলা ভাষা চালু হোক। যেহেতু ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ লেখা প্লেকার্ড নিয়ে রাজপথে আমার ভায়েরা রক্ত দিয়েছে। যেহেতু আমাদের সংবিধানে আছে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’।
রাষ্ট্রীয় কাজের সর্বস্তরে বাংলা চালু করতে গিয়ে ইংরেজি শব্দের অপ্রচলিত পরিভাষার প্রয়োগও পরিহার করা প্রয়োজন। রেডিওর পরিবর্তে বেতার ব্যবহারের ঐতিহাসিক পটভূমি আছে, আমাদের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অস্বীকার করবার নয়। তবে টেলিভিশন এর পরিবর্তে দূরদর্শন ব্যবহারের চেষ্টা নিশ্চই দূরদর্শিতার পরিচায়ক নয়। একইভাবে একুশের ‘বইমেলা’ কখন যে হয়ে গেল বাংলা একাডেমি ‘গ্রন্থমেলা’ সে খেয়াল নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত দোসরা ফেব্রæয়ারি ২০২০ বাংলা একাডেমিতে গ্রন্থমেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন: বইমেলা না গ্রন্থমেলা বলেন ? বইমেলা বলতেই আপন আপন মনে হয় বেশি।’ অথচ আপন শব্দগুলোই আমাদের মাতৃভাষায় আমরা আজকাল ব্যবহার করছি না। এ অবস্থা যেমন ঢাকায় তেমনি কলকাতায়। ওখানেও বইমেলা কে ‘পুস্তকমেলা’ অভিধা দিয়ে স্বনির্ভর বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের দুহিতা প্রমাণের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা প্রবহমান। আরেক দল নগ্নপায়ে প্রভাতফেরি করে গান গেয়ে গেয়ে শহীদমিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়াকে ‘পৌত্তলিক পূজা’, ‘শিরক’ ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে একুশের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করবার চেষ্টায় রত আজও। অবশ্য মিডিয়ার কল্যাণে আধুনিকতার ছোঁয়াতে জনসচেতনতা বড়ছে। ফলে ধর্মান্ধতা ধোপে টিকছে না। ফাগুন এলেই তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরেরা ফুলে ফুলে সেজে পুরো ফেব্রæয়ারি মাস জুড়ে বইমেলায় ঘুরছে। মনে হয় তারা যেনো বলছে: ‘অনেক ভুলের মাশুল তো ভাই / দিলাম জীবন ভরে / অনেক তো দিন কাটলো বৃথাই / দলাদলির ঘোরে\ / আর কত দিন এমনি ভাবে, নানান দ্বিধা আসবে যাবে / দিন বদলের লগ্ন কি তাই সত্যি অনেক দূরে’ (অনল চট্টোপাধ্যায়)। তাঁদের জানাতে হবে সে লগ্নের সুবাস বইছেÑদিন বদলের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বই মেলায় পাঠকের ভিড় সে কথাই প্রমাণ করে। প্রভাত ফেরিতে মানুষের ঢল সে ঈঙ্গিত দেয়। হাজার হাজার নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষত কবিতার বই: ওঁরা সবাই হয়তো কবি নয়; কবিতাকর্মী ভাবতে দোষ কি। ওখানেও কিছু ভুলে ভরা মানহীন বই থাকতেই পারে। পাঠকের রুচি তৈরি হলেই ভুলগুলো দূর হবে। বাংলায় নতুন ফুল ফোটবেই। তখন একটি সার্থক ভাষানীতি প্রণীত হবে। সে ভাষানীতির ভিত্তিতে বাংলা ভাষার অবয়ব পরিকল্পনার পাশাপাশি অবস্থান পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। বাংলা ভাষার অবস্থান মর্যাদাপূর্ণ হবে। বাঙালির ভাষা আন্দোলন আর বাংলা ভাষা নিয়ে গর্ব হবে আকাশছোঁয়া। এই স্বপ্ন নিয়েই বাঙালি বাংলা ভাষা শিক্ষায় অবশ্যই আরও যতœবান হবে। বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান লিখেছেন: ‘আমার সন্তানেরা সবাই বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া শিখেছে, আমার নাতি-নাতনিরা সবাই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করছে। … তাদের মন্ত্র অনেকটা ‘আমার এই দেশেতে জন্ম যেন ওই দেশেতে মরি’ ( শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, পৃ. ২৮৯)। গীতিকার ও শিল্পী আবদুল লতিফ এর গানের কথায় আছে, ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায় / ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমাদেরই হাতে পায়’। পাকিস্তান সৃষ্টির সাথে সাথেই বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী-র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া ঠেকাতে তৎপর হয় পশ্চিম পাকিস্তানের এলিট শ্রেণি, আমলাতন্ত্র এবং আরও অনেকে। তারই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী মুসলিম লীগের সক্রিয় নেতা-কর্মীসহ অধিকাংশ সচেতন বাঙালিকে শেকল পরিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছিলÑসত্য। কিন্তু বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিলÑএ কথা কি ঠিক? মুখের ভাষা বা বুলিকে ইংরেজিতে বলে মাদার ট্যাং। আমরা বলি মাতৃভাষা বা মায়ের ভাষা। একটি রাষ্ট্র পরিচালনাকারী সরকার তাঁর রাজনৈতিক দলের আদর্শ মেনে কিংবা আমলাতন্ত্রের কাছে নতি স্বীকার করে তাঁর পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে নির্বিচারে নিজ দেশের নাগরিকদের হাতে-পায়ে শিকল পরাতে পারে বটে। মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে পারে না। এ একান্তই কবি-কল্পনা, গানের আবেগের কথা। আবেগের প্লাবনে আমরা আস্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছি আর আদিবাসীদের বা ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীদের তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের জন্য সচেষ্ট হচ্ছি। অথচ বাঙালি সন্তানকে বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমে পড়িয়ে এদেশেই চাকুরির সুযোগ করে দিচ্ছি।
এমন আবেগের ফুল ফোটে আরও অনেক গানে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গানে মোহাম্মদ শফি লিখেন: ‘মুজিব বাইয়া যাওরে / নির্যাতিত দেশের মাঝে / জনগণের নাও ওরে / মুজিব বাইয়া যাও রে\’ আর গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার লিখেন: ‘শোন, একটি মুজিবরের থেকে / লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি / আকাশে বাতাসে উঠে রণি।’ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত সমবেত সংগীতে আছে: ‘মুজিবর মুজিবর মুজিবর/ সাতকোটি মানুষের কণ্ঠস্বর’। এমন গান শুনে শুনে অজান্তে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নাম লিখতে গিয়ে কেউ হয়তো ভুল করে শেখ মুজিবর রহমান লিখছেন। তবু শিল্পীর স্বাধীনতা, কল্পনার মুক্তির জন্যেই মানতে হয়। কেননা ফল চাইলে প্রথমে ফুল ফোটাতে হয়, তারপর ফুল থেকে ফল ফলেÑএ প্রকৃতির নিয়ম।
আরেকটি আবেগের কথা অহরহ শোনা যায়: বাঙালি একমাত্র জাতি যাঁরা মাতৃভাষার জন্য রাজপথে প্রাণ দিয়ে (ঢাকা, ২১/০২/১৯৫২; শিলচর, ১৯/০৫/১৯৬১) বাংলা ভাষার মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছে। শহীদমিনারে ফুল দিয়ে ভাষা-শহীদদের আমরা শ্রদ্ধা জানাই যে দিনটাকে স্মরণ করে সে ২১ শে ফেব্রæয়ারি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ। এই খ্রিস্টাব্দকে আবেগীরা বলেন ইংরেজি বছর, আর দাবি করেন এর পরিবর্তে আমাদের স্মরণীয় দিন ৮ই ফাগুন ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ হোক। ওরা বাংলা ভাষার জন্যে প্রাণদানকারী শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চায় বাংলা তারিখ দিয়ে। আক্ষেপের বিষয় বর্তমান বাংলাদেশ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিনপঞ্জিতে বাংলা তারিখেরই মিল নেই। বেশিরভাগ সময়ে দুই দেশে বাংলা নববর্ষ পালিত হয় ভিন্ন দুই দিনে। এটাতো একদিক। আরেক দিকে আছে ঐতিহাসিক পটভ‚মি।
ইতিহাসের পাতায় দেখা যায়: ৮ ফেব্রæয়ারি ১৯৪৮ খ্রি. করাচিতে পাকিস্তান সংবিধান সভার বৈঠকে মুসলিম লীগ নেতারা উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করবার প্রস্তাব করেন। তখন কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবি করলেন: বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক। কিন্তু বৈঠকে তা আগ্রাহ্য করা হলে অব্যবহিত পরেই তমদ্দুন মজলিশ ও পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে। এই রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ এর সভায় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১১মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ ঘোষণা করা হয় (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ৯২)। এ সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ-এর সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হন এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নিজেই পূর্ব বাংলা আইন সভায় প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যে, পূর্ব বাংলার অফিসিয়াল ভাষা ‘বাংলা’ হবে। তাছাড়া যাতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় আইন সভায় কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করা হবে। এ প্রস্তাব পূর্ব বাংলার আইনসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ১৯৬)। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে লিয়াকত আলী রাওয়ালপিÐিতে এক জনসভায় গুলিতে নিহত হলে খাজা নাজিমুদ্দীন গভর্নর জেনারেল পদ ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি দ্বিতীবার পূর্ব বাংলায় এসে পল্টন ময়দানের এক জনসভায় (জানুয়ারি, ১৯৫২) ঘোষণা করলেন,‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু লিখেন: ‘যে ঢাকায় বসে তিনি ওয়াদা করেছিলেন সেই ঢাকায় বসেই উল্টা বললেন। দেশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হল। … আমি হাসপাতালে আছি। … সেখানেই ঠিক হল আগামী ২১ শে ফেব্রæয়ারি রাষ্টভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ করতে হবে। … একুশে ফেব্রæয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। কারণ, ঐদিনই পূর্ব বাংলার আইনসভা বসবে।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ১৯৭)। সুতরাং বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় সময়ের প্রয়োজনে সর্বোপরি ঐতিহাসিক পটভ‚মিতেই ২১ শে ফেব্রæয়ারি ১৯৫২ নির্ধারিত হয়েছিল। সুতরাং, একুশ বাঙালির অহঙ্কার। এর ভিত্তিতেই ১৯৫৪র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের আগে প্রণীত হয়েছিল একুশ দফা, ১৯৬৬র ছয়দফা । সর্বোপরি ২১ শে ফেব্রæয়ারি যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ১৯৯৯ খ্রি. থেকে বিশ্ববাসী পালন করছে, তখন একুশ নিয়ে আমাদের ভুল দুর হোক, বাঙালির মনে ফাগুনের কৃষ্ণচূড়া ফুটুক। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে, আমরা বলি বাঙালির বুকে একুশ উঠুক জেগে।
আরেকটি বিষয় ভাষা আন্দোলন বিষয়ক আলোচনায় আসে; এমনকি আলোচিত দৈনিকের শিরোনাম হয়: ‘বাংলা ভাষার সংগ্রামের প্রস্তাব লেখা হয়েছিল ইংরেজিতে’। মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রামের যে প্রস্তাব, সেটি লেখা হয়েছিল ইংরেজিতে। অলি আহাদের তথ্য অনুযায়ী, সেদিন শামসুল হকের লেখা যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিল তা লেখা হয়েছিল ইংরেজিতে। অথচ এরা সবাই সংগ্রাম করেছিলেন মাতৃভাষা বাংলার জন্য (দৈনিক আজাদী, ১২/০২/২০২০)। প্রতিবেদনটির ভাষা দেখে মনে হতে পারে যেনো আন্দোলনকারীগণ ইংরেজি ব্যবহার করে ভুল করেছেন। আসলে কিন্তু তা নয়। এটিও ছিল সেই সময়ের বাস্তবতা। আমাদের অজানা নয় যে, হাজার বছর আগে থেকেই এ বঙ্গ জনপদের মানুষের মুখের ভাষা বাংলা। বৌদ্ধ পাল শাসন আমলে রাষ্ট্রীয় কাজ চলছে পালি ভাষায়, হিন্দু সেন আমলে সংস্কৃত ভাষায় আর চারশত বছর মুসলিম শাসনের সময়ে ফারসি ভাষায়। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশরা আদালতের ভাষা ফারসিকে বাতিল করে ইংরেজি করে দেয়। তার আরও আগে উনিশ শতকের শুরু থেকেই এঅঞ্চলে শিক্ষার ভাষা ছিল ইংরেজি। বাঙালি ইংরেজি ভাষার বিরুদ্ধে নয়, এমনকি উর্দুরও বিরুদ্ধে নয়। আমাদের দাবি ছিল উর্দুর সাথে বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হোক। আমাদের মুখের বুলিকে, মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে এই ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হোক। তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে, বিশ্বায়নের দোহাই দিয়ে আমাদের দেশের টাকায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে হবে কিংবা বাঙালির সেবা করবার চাকুরির নিয়োগ পরীক্ষা (বিসিএস) ইংরেজিতে দিবো। অনেকেই ভারতের উদাহরণ দেন ইরেজিতে দক্ষতার কারণে ওরা আজ বিশ্বের উচ্চ বেতনের চাকুরিগুলো দখল করে নিয়েছে। অথচ তারা খেয়াল করেন না যে চীন ইংরেজি না শিখে মাতৃভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা চালু রেখেই বিশ্ববাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে, বিশ্বের সেরা চাকুরিদাতা হবার পথে এগুতেও তাদের মাতৃভাষার শিক্ষাব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। যাঁরা ‘নিজ দেশ ত্যাগি’ বিদেশে যাবেন, তাঁরা এবং তাঁদের প্রজন্ম বিদেশি ভাষায় পড়াশোনা করুক আপত্তি নেই। তবে বাংলাদেশের সর্বস্তরে আবিলম্বে বাংলা ভাষা চালু হোক। যেহেতু ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ লেখা প্লেকার্ড নিয়ে রাজপথে আমার ভায়েরা রক্ত দিয়েছে। যেহেতু আমাদের সংবিধানে আছে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’।
রাষ্ট্রীয় কাজের সর্বস্তরে বাংলা চালু করতে গিয়ে ইংরেজি শব্দের অপ্রচলিত পরিভাষার প্রয়োগও পরিহার করা প্রয়োজন। রেডিওর পরিবর্তে বেতার ব্যবহারের ঐতিহাসিক পটভূমি আছে, আমাদের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অস্বীকার করবার নয়। তবে টেলিভিশন এর পরিবর্তে দূরদর্শন ব্যবহারের চেষ্টা নিশ্চই দূরদর্শিতার পরিচায়ক নয়। একইভাবে একুশের ‘বইমেলা’ কখন যে হয়ে গেল বাংলা একাডেমি ‘গ্রন্থমেলা’ সে খেয়াল নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত দোসরা ফেব্রæয়ারি ২০২০ বাংলা একাডেমিতে গ্রন্থমেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন: বইমেলা না গ্রন্থমেলা বলেন ? বইমেলা বলতেই আপন আপন মনে হয় বেশি।’ অথচ আপন শব্দগুলোই আমাদের মাতৃভাষায় আমরা আজকাল ব্যবহার করছি না। এ অবস্থা যেমন ঢাকায় তেমনি কলকাতায়। ওখানেও বইমেলা কে ‘পুস্তকমেলা’ অভিধা দিয়ে স্বনির্ভর বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের দুহিতা প্রমাণের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা প্রবহমান। আরেক দল নগ্নপায়ে প্রভাতফেরি করে গান গেয়ে গেয়ে শহীদমিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়াকে ‘পৌত্তলিক পূজা’, ‘শিরক’ ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে একুশের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করবার চেষ্টায় রত আজও। অবশ্য মিডিয়ার কল্যাণে আধুনিকতার ছোঁয়াতে জনসচেতনতা বড়ছে। ফলে ধর্মান্ধতা ধোপে টিকছে না। ফাগুন এলেই তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরেরা ফুলে ফুলে সেজে পুরো ফেব্রæয়ারি মাস জুড়ে বইমেলায় ঘুরছে। মনে হয় তারা যেনো বলছে: ‘অনেক ভুলের মাশুল তো ভাই / দিলাম জীবন ভরে / অনেক তো দিন কাটলো বৃথাই / দলাদলির ঘোরে\ / আর কত দিন এমনি ভাবে, নানান দ্বিধা আসবে যাবে / দিন বদলের লগ্ন কি তাই সত্যি অনেক দূরে’ (অনল চট্টোপাধ্যায়)। তাঁদের জানাতে হবে সে লগ্নের সুবাস বইছে-দিন বদলের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বই মেলায় পাঠকের ভিড় সে কথাই প্রমাণ করে। প্রভাত ফেরিতে মানুষের ঢল সে ঈঙ্গিত দেয়। হাজার হাজার নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষত কবিতার বই: ওঁরা সবাই হয়তো কবি নয়; কবিতাকর্মী ভাবতে দোষ কি। ওখানেও কিছু ভুলে ভরা মানহীন বই থাকতেই পারে। পাঠকের রুচি তৈরি হলেই ভুলগুলো দূর হবে। বাংলায় নতুন ফুল ফোটবেই। তখন একটি সার্থক ভাষানীতি প্রণীত হবে। সে ভাষানীতির ভিত্তিতে বাংলা ভাষার অবয়ব পরিকল্পনার পাশাপাশি অবস্থান পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। বাংলা ভাষার অবস্থান মর্যাদাপূর্ণ হবে। বাঙালির ভাষা আন্দোলন আর বাংলা ভাষা নিয়ে গর্ব হবে আকাশছোঁয়া। এই স্বপ্ন নিয়েই বাঙালি বাংলা ভাষা শিক্ষায় অবশ্যই আরও যত্নবান হবে।