ফিরিঙ্গিবাজারের রিমন শীল গ্রেপ্তার

98

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মিরপুরে জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে সাহিনুদ্দীন নামে এক যুবককে নৃশংস কায়দায় কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও ক্লিপ নোয়াখালীর যতন সাহা হত্যাকান্ডের বলে সর্বপ্রথম ফেসবুকে আপলোড করে গুজব ছড়ান রিমন শীল (২০)। এরপর তা বিভিন্ন জনের আইডিতে শেয়ার ও ভাইরাল হয়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল রবিবার র‌্যাব-৭ এর একটি দল নগরীর কোতোয়ালি মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া রিমন শীল নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার ইয়াকুব নগরের বিজয় শীলের ছেলে। সদ্যসমাপ্ত শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীর দিনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় যতন সাহা হত্যাকান্ডের পর ফেসবুকে রিমন শীলই সর্বপ্রথম মিরপুরে সাহিনুদ্দিন হত্যাকান্ডের ধারণকৃত ভিডিও ক্লিপটি ফেসবুকে আপলোড করে অপপ্রচার চালান। গুজব রটিয়ে ও অপপ্রচারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) নুরুল আবছার জানান, চলতি বছরের গত ১৬ মে বিকেলে রাজধানী ঢাকার পল্লবী এলাকার সিরামিকস ফটকের কাছে দুর্বৃত্তরা শিশুপুত্রের সামনে বাবা সাহিনুদ্দিনকে নৃশংস কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করে। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত সেই হত্যাকান্ডের ভিডিও ক্লিপটি ক’দিন আগে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নোয়াখালীর যতন সাহার বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে গুজব ছড়ানো হয়। সহিংসতাকে উসকে দিতেই পরিকল্পিতভাবে এই অপপ্রচার চালানো হয়। গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব বলছে, রিমন শীল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে মিরপুরের সাহিনুদ্দীন হত্যার ভিডিও ক্লিপটি নোয়াখালীর যতন সাহা হত্যাকান্ডের বলে ফেসবুকে আপলোডের মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোয় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাকে কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ অক্টোবর র‌্যাব সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, দুর্গাপূজার সময় নোয়াখালীতে সাম্প্রদায়িক হামলা-সহিংসতার মধ্যে যতন সাহার মৃত্যু নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় ‘অপপ্রচার’ চলছে। স্বার্থান্বেষী একটি মহল এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। একইদিন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জানান, মিরপুরের শাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিওটি নোয়াখালীর যতন সাহা হত্যাকান্ডের বলে ফেসবুকে জুড়ে দিয়ে গুজব রটানো হয়। কলকাতার দেবদৃতা ভৌমিক নামের একজনের আইডি থেকে ফেসবুকে এটা আপলোড করা হয়। পরে ওই ভিডিও যতন সাহার উপর হামলার ভিডিওচিত্র হিসেবে স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
র‌্যাবের সাইবার ইউনিট নজরদারির এক পর্যায়ে ফেসবুকে ওই ভুয়া ভিডিও ক্লিপটি আপলোডের মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২০ অক্টোবর রাজধানীর বেগম বদরুন্নেছা সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক রুমা সরকারকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে অপপ্রচারের অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে তাকে রমনা থানায় হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ গত ২১ অক্টোবর ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন দাখিল করে। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মাসুদ-উর-রহমান দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল রবিবার অধ্যাপক রুমা সরকারকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার এসআই মো. শফিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে আদালতে রুমা সরকারের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীরা জামিন চেয়ে বলেন, রুমার ফেসবুক আইডি বøক করা ছিল। তার আইডি থেকে কোনও ভিডিও আপলোড করা হয়নি। যে কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি তার বিরুদ্ধে প্রযোজ্য নয়। এছাড়া, আদালতে আইনজীবীরা অধ্যাপক রুমা সরকারের সাত বছরের যমজ দুটি শিশু রয়েছে জানিয়ে সেই বিবেচনায়ও তার জামিন প্রার্থনা করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী জামিন আবেদন নাকচ করে রুমা সরকারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, সদ্যসমাপ্ত শারদীয়ার মহাষ্টমীর দিন কুমিল্লা শহরের একটি পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগের জের ধরে ওই মন্ডপসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামন্ডপ-মন্দির, দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। তারই অংশ হিসেবে গত ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর বিকালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার নরোত্তমপুরের শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ গৌর নিত্যানন্দ মন্দির (ইসকন মন্দির) এবং সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে হামলায় যতন সাহা নিহত হন। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত মনোরঞ্জন সাহার ছেলে যতন সাহা জাইকার একটি প্রকল্পে চট্টগ্রামে কাজ করতেন। প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় তিনি বোনের বাড়ি নরোত্তমপুরে চলে আসতেন। এবার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে আদিত্যকে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু পূজায় আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসে তিনি নৃশংস সাম্প্রদায়িক তান্ডবের বলি হয়েছেন।