ফার্নিচার শিল্পের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও

497

নতুন নতুন ডিজাইন আর রুচির সাথে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে বদলে যাচ্ছে ঘর সাজানোর আয়োজন। রুচি বদলের সাথে তাল মিলাচ্ছে ডিজাইন। এ বদলে তাল মিলাচ্ছে ঘর সাজানোর অন্যতম প্রধান উপকরণ ফার্নিচার। নতুনত্বের কারণে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ফার্নিচার শিল্প সুনাম ছড়াচ্ছে বিদেশেও। তাই চট্টগ্রামের ফার্নিচার শিল্প মালিকরা স্বপ্ন দেখছেন দেশকে ছাড়িয়ে বিদেশকেও জয় করার।
ফার্নিচার শিল্পের নতুনত্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে গত কয়েক বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে ফার্নিচার মেলার। প্রতি বছরেই নতুন নতুন কিছু ডিজাইনের ফার্নিচারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে এ মেলা। তাছাড়া মেলাতে থাকছে ঘর সাজানোর নানা উপকরণের স্টলও। যেখান থেকে দর্শনার্থীরা নানা ধারণা লাভ করতে পারেন।
ফার্নিচার শিল্প সম্ভাবনাময় শিল্প উল্লেখ করে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশের তৈরি আসবাবপত্র এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিযোগিতার যুগে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক ডিজাইনের আসবাবপত্র তৈরি করতে আগামীতে রপ্তানি আরও বাড়াতে হবে। আগামী এক দশকের মধ্যে ফার্নিচার শিল্প দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাতে পরিণত হবে।
ক্রমান্বয়ে ফার্নিচার শিল্পের বিকাশ ঘটছে চট্টগ্রামে। আশির দশকের দিক থেকেই চট্টগ্রামের ফার্নিচার মার্কেটের বিকাশ লাভ করতে থাকে। বলীরহাট, আসকারদীঘির পাড়, এক্সেস রোড, দেওয়ান বাজার, কদমতলীসহ বিভিন্ন জায়গায় বিস্তার করেছে ফার্নিচার শিল্প। দেশিয় চাহিদা ছাড়িয়ে এ শিল্প এখন বিদেশেও জায়গা করে নিয়েছে। শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে এ শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তারাও পরিবর্তনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। দেশি-বিদেশি চাহিদার সাথে সমন্বয় করে একের নতুন নতুন মডেলের ফার্নিচার বাজারে আনতে শুরু করে। সময়, চাহিদা আর রুচির সাথে সমন্বয় করে ক্রমান্বয়ে নানা ফার্নিচার নিয়ে আসছে বাজারে। বাজারেও এসব ফার্নিচার ভালো সাড়া ফেলতে সক্ষম হচ্ছে।
ফার্নিচার মেলার আহব্বায়ক ও জিএমজি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মাকসুদুর রহমান বলেন,গতবারের তুলনায় এবার মেলার পরিধি দ্বিগুন হবে। ফার্নিচার ছাড়াও ঘর সাজানোর নানা উপরকণের স্টল থাকবে। দেশীয় ফার্নিচারের প্রচার ও ক্রেতাদের ফার্নিচার পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে অবহিত করার লক্ষ্যেই আমাদের এই আয়োজন। প্রতিবছর দেশের ফার্নিচার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই খাতকে আরও বেশি শক্তিশালী করাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, মেলাতে একই ছাদের নিচে অনেক কিছুর সাথে পরিচয় হওয়া যায়। মেলা শুধু পরিচিতির জন্য করা হলেও মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের অফার থাকে। যার কারণে অনেক বিক্রিও হয়। দর্শনার্থীদের আগ্রহও থাকে প্রবল।
সাজানো-গোছানো ঘর কার না ভালো লাগে। হরেক রং-এর আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো গোছানো হলে সে ঘরের সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহুগুন। তাছাড়া আসবাবপত্রের মাধ্যমে রুচি ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশও ঘটে। এ ধারণাকে সামনে রেখে বিগত কয়েক বছর ধরে ফার্নিচার মেলা করে আসছে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি।
আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে মেলার দশম আসর বসতে যাচ্ছে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে। মেলা চলবে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলায় প্রদর্শিত হবে নতুনত্বের ছোঁয়া ও ডিজাইনের আসবাবপত্র ও ঘর সাজানোর নানা উপকরণ। অন্যবারের তুলনায় এবার মেলার পরিধিও বাড়ানো হবে। মূলত নতুন ডিজাইনের ফার্নিচারের সাথে গ্রাহকদের পরিচয় করিয়ে দিতে এ মেলার আয়োজন করা হলেও মেলাতেই প্রচুর বিক্রি হয় ফার্নিচার।
সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কাঠ দিয়েই তৈরি করা হয় আসবাবপত্র। চট্টগ্রামের ফার্নিচার বাজারের চাহিদার এসব কাঠ আসে মূলত রাঙামাটি, বান্দরবান ও কাপ্তাই থেকে। কালুরঘাট ও ফিরিঙ্গিবাজারের নিলাম থেকেও কেনা হয় কাঠ। আবার কিছু কিছু কাঠ বিদেশ থেকেও আমদানি করা হয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে তৈরি করা আসবাব কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, ভৈরব, নরসিংদী, চাঁদপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হয়।