ফাঁসির আসামিকে দেখতে যেতেই গ্রেপ্তার ওরা ৬ জন

23

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাঁসির আসামিকে দেখতে যাওয়ার সময় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। গতকাল সোমবার তাদের নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন মামলার আসামি। বিষয়টি নিশ্চিত করে ডবলমুরিং থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, তাদের নামে বিভিন্ন থানায় নানা অপরাধে মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন তানিয়া বেগম (৩০), তাহমিনা বেগম (২১), রেনু বেগম (৫০), রিনা বেগম (৪২), মো. জাহাঙ্গীর (১৯) এবং মো. তোফাজ্জল হোসেন (৩২)। এর মধ্যে তানিয়া বেগম ও তাহমিনা বেগম হচ্ছেন রেনু বেগমের মেয়ে। একইভাবে মো. জাহাঙ্গীর রেনু বেগমের ছেলে। তোফাজ্জল হোসেনও রেনু বেগমের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন আহমেদকে গুলি করে হত্যার ১৮ বছর পর আজ মঙ্গলবার ফাঁসিতে ঝুলবে দুই হত্যাকারী। আজ রাত ১১টা ৩০ মিনিটে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হতে যাচ্ছে খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় বসবাসকারী শফি হত্যার দুই খুনি শিপন হাওলাদার ও নাইমুল ইসলাম ইমনের। আর শিপন হাওলাদারের আপন বোন হচ্ছেন রেনু বেগম। তারা সকলেই কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন।
ডবলমুরিং থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন, যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা কার বোন বা কোথায় যাচ্ছিলেন, তা আমার জানা নেই। তারা বিভিন্ন মামলার আসামি। এদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুজনই ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণের অনুসারী। শফিউদ্দিনকে বাসায় গুলি ও কুপিয়ে হত্যার ১৮ বছর পর কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসির সাজা কার্যকর হতে যাচ্ছে। রেলওয়ে বস্তিতে মদ, জুয়া ও অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদ। সুপ্রিম কোর্টে তাদের ফাঁসির সাজা বহাল রাখার চিঠি গত ১৬ ডিসেম্বর কুমিল্লা কারাগারে যায়। তারপর গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার চিঠিও কুমিল্লা কারাগারে এসে পৌঁছে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুতি শুরু করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। শিপন হাওলাদার খুলশীর দক্ষিণ আমবাগানের মৃত ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ার নন্দন সদর এলাকায়। আরেক খুনি নাইমুল ইসলাম ইমন লালখান বাজার ডেবারপাড় এলাকার ঈদুল মিয়া সরকারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের পূর্বপাড়ার রতনপুর এলাকায়।
মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী মামলার বাদী মাহমুদা বেগম বলেন, খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের অপেক্ষায় আছি। যেদিন ফাঁসি হবে সেদিন মন শান্ত হবে। ঘরে ঢুকে তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় আমার স্বামীকে সেদিন খুন করেছিল।
শেষবারের মতো দেখা করার চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে ইমনের ভগ্নিপতি তকদির জানান, ইমনের মা ও বাবা মারা গেছেন। তার দুই ভাই ও বোন আছে। তারা শিগগিরই কুমিল্লা কারাগারে ইমনের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করবে।
এদিকে কুমিল্লা কারাগারের সুপার শাহজাহান আহমেদ জানান, ‘মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারটায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এনিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে।’
এদিকে ফাঁসির দড়ির কাছাকাছি আসা শিপন হাওয়ালাদের প্রাণভিক্ষা ও মামলাটি অধিকতর তদন্ত করতে আবেদন করেছেন তার বোন রেনু বেগম। গত রবিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে রাষ্ট্রপতির কাছে এই প্রাণভিক্ষা ও মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদন জানান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনিও পুলিশের জালে আটকা পড়েন।