ফলের দামও আকাশচুম্বী

35

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফলের বাজারেও আকাশচুম্বী দাম। পবিত্র রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে নগরীর বাজারগুলোতে ফলের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। শুধু ঈদের মৌসুমে ফলের চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। এছাড়া রমজানেও ইফতারের টেবিলে দেশি-বিদেশি ফল রাখেন অনেকেই। তাই ব্যবসায়ীরা সব নিত্যপণ্যের মতো ফলের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন মাত্রাতিরিক্তভাবে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ক্রেতা সংকট এবং ফলের দামও কম আছে। অন্যদিকে ফলের দাম আরো বাড়ার সংকেত দিলেন খুচরা বিক্রেতারা।
গতকাল শুক্রবার নগরীর ফলমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্যারেটে ক্যারেটে ফল নামছে কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক থেকে। আবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও পাঠানো হচ্ছে এ ফল। সুতরাং ফলের কোনো ঘাটতি নেই। তাহলে দাম কেন বাড়তি- এমন প্রশ্ন সচেতন বিশ্লেষকদের।
জানতে চাইলে ফলমন্ডি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আলী হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, কনটেইনার, জাহাজ ভাড়া ও পণ্যের বুকিং দর বাড়ার কারণে কমলা, আপেলসহ বিভিন্ন ফলের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। তাই ফলের দাম কিছুটা বাড়তি ছিল। এখনও তার প্রভাব কিছুটা রয়েছে। এছাড়া কমলার মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বাজারে ফলটির সরবরাহ কম তাই দাম বেড়েছে। আবার মাল্টার দাম আগের থেকে কমেছে। প্রতি কন্টেইনার মাল্টায় তিন লাখ টাকা লস দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। সুতরাং, দাম বাড়তি বললে ভুল হবে।
এদিকে গত অর্থ বছরের তুলনায় এ অর্থ বছরে ফলের আমদানি ভাল হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র। এ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ৩০ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত আপেল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৩৭ দশমিক ৮৮৪ টন। আর এসব আপেল চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, ব্রাজিল, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও মলদোভা থেকে আমদানি করা হয়েছে। একই সময়ে লেবু জাতীয় ফল যেমন- কমলা, মাল্টা আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৫ দশমিক ০৮৭ টন। আর এসব ফল আমদানি হয়েছে মিশর, চীন, পাকিস্তান ও মরক্কো থেকে। আঙ্গুর আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৮ দশমিক ৫১ টন। এসব আঙ্গুর চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরষ্ক থেকে আমদানি হয়েছে। নাশপতি আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ৫৭২ দশমিক ৬২৮ টন। এসব নাশপতি চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে এসেছে, শুধুমাত্র ভিয়েতনাম থেকে ড্রাগন আমদানি হয়েছে ৯৫০ দশমিক ৩২৭ টন।
নগরীর ফলমন্ডির পাইকারি দোকান ও রেয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আপেলের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানিকৃত গালা ও রয়েল গালা পাইকারিতে কেজি ১৭৮ টাকা খুচরায় ২০০ টাকা, একই দেশের গোল্ডেন আপেল পাইকারিতে কেজি ১৫০ টাকা খুচরায় ১৮০ টাকা, চীন থেকে আমদানিকৃত হানি ফুজি আপেল পাইকারিতে কেজি ১৩৩ টাকা খুচরাতে ১৫০ টাকা, একই দেশের এক নম্বর ফুজি পাইকারিতে ১৩৩ টাকা কেজি খুচরাতে ১৫০ টাকা, মিশর থেকে আমদানিকৃত মাল্টা পাইকারিতে কেজি ১৩১ টাকা খুচরায় ১৬০ টাকা, ভারত থেকে আমদানিকৃত সাদা আঙ্গুর কেজি পাইকারিতে ১৪০ টাকা খুচরায় ২২০ টাকা, লাল আঙ্গুর পাইকারি ৪০০ টাকা খুচরায় ৪৫০ টাকা, আঙ্গুরের মত দেখতে মুনাক্কা পাইকারিতে কেজি ১৩১ টাকা খুচরায় ১৫০ টাকা, নাশপতি পাইকারিতে ১৮৮ টাকা কেজি খুচরাতে ২৫০ টাকা, ড্রাগন পাইকারিতে কেজি ৩৭০ টাকা খুচরায় ৪০০ টাকা, ডালিম পাইকারিতে ৩০০ টাকা খুচরায় ৩৫০ টাকা, ভারতীয় কমলা পাইকারিতে ডজন ২০০ টাকা খুচরায় ২৪০ টাকা, দেশি পেয়ারা প্রতি কেজি পাইকারিতে ৩০ টাকা খুচরায় ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁপে গতকাল ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি বেল আগে ছিল পিস ৫০ টাকা অথচ গতকাল ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি কলার ডজন গতকাল শুক্রবার ছিল ৯০ টাকা। তরমুজ আকারভেদে ১২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় খুচরা দোকান থেকে ফল কিনতে আসা মারুফুল ইসলাম হৃদয় বলেন, রোজার আগে আমি ৭০ টাকায় পেঁপে কিনেছি। আজ আমার কাছে ১২০ টাকা দাম চাচ্ছে। আপেল ১৮০ টাকা চাচ্ছে। অবাক লাগে। এভাবে রোজা ও ঈদকে পুঁজি করে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়ার কোনো মানেই হয় না। আবার বাজারে ফল বিক্রেতা ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে দাম ধরে রাখে। তাই মধ্য, নি¤œবিত্ত গরীবরা ফলের ছোঁয়া পাচ্ছে না।
খুচরা ফল বিক্রেতা মো. সাহাবউদ্দিন অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক মো. আলমগীর পূর্বদেশকে বলেন, পাইকারের কাছ থেকে আমরা বেশি দামে মাল কিনে বিক্রি করছি। তাছাড়া ফল তো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়ে গেছে। ফলের দাম বাড়া মানে আমরা বেশি লাভ করে ফেলছি তা কিন্তু নয়। ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে তাই ফলের দামও বেড়েছে। ঈদকে সামনে রেখে ফলের দাম আরো বাড়তে পারে।
ফলমন্ডির ইশরাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইমাম শরীফ ও সার্ফ ওয়ান ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল বলেন, পর্যাপ্ত ফল আছে মন্ডিতে। ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো সংকট নেই। যে পরিমাণে ফল আছে সে পরিমাণে ক্রেতা বাজারে নেই।
ফলমন্ডি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আলী হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, এখানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো সিন্ডিকেট নেই। পরিবহন, লেবার ও অন্যান্য খরচ যুক্ত করার পর আমরা সামান্য লাভে বিক্রি করে দিই।
এদিকে সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের ফল খাওয়া জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসার ডা. শহিদুল আলম পূর্বদেশকে বলেন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক মানুষের অন্যান্য সবুজ শাকসবজির পাশাপাশি পর্যাপ্ত ফল খাওয়া দরকার। দেশীয় ফলে বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে। যা শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মহিলাদের বেশি পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। না হলে শিশু অপুষ্টিতে ভুগবে।