ফটিকছড়িতে ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল

10

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি

ফটিকছড়ির ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাছাই-বাছাইয়ের শেষ দিন নির্ধারণ ছিল গত ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার। মনোনয়নপত্রের তথ্য প্রদানে গড়মিল, ঋণ খেলাপী, তথ্য গোপনসহ বিভিন্ন অভিযোগে চেয়ারম্যান পদের ৩ জনসহ ১০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার। উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের নির্দিষ্ট তিনটি বুথে দিনব্যাপী চলে মনোনয়নপত্র যাছাই-বাছাই কার্যক্রম।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, ১৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৫১ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০৯ জন প্রার্থীর প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে লেলাং ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, বখতপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুল আজম এবং আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নাছির উদ্দিন মহসিনসহ সাধারণ সদস্য পদে ৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদের একজনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে সুন্দরপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদুল আজমের মনোনয়নপত্রে তথ্যের গড়মিল ও জাল সনদ ব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ। তিনি এ দিন সন্ধ্যায় উপজেলা কম্পাউন্ডে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদুল আজম একাধিক মামলার আসামি। এছাড়াও মনোনয়নপত্রে তিনি বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন, এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করা সত্তে¡ও তিনি তার প্রার্থিতা বাতিলে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে সুন্দরপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদুল আজম বলেন, আমার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী শাহনেওয়াজ যে অভিযোগ এনেছেন তা ভিত্তিহীন। মনোনয়নপত্রে যেসব তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে তার সবটুকু পূরণ করা হয়েছে। যেখানে যাছাই-বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসার আমার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন। সেখানে শাহনেওয়াজের বিরোধীতা বলে দেয় তিনি মূলত ভোটে আমার অংশগ্রহণকে ভয় পাচ্ছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা রাজীব আচার্য বলেন, একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে যা যা চাওয়া হয়েছে, সব শর্ত শহিদুল আজম পূরণ করেছেন। তার মনোনয়নপত্র বাতিলের জন্য প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী শাহনেওয়াজ যে অভিযোগ এনেছেন তা এখানে গ্রহণযোগ্য হয়নি বিধায় শহিদুল আজমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে সমিতিরহাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হারুনুর রশীদ ইমনের মনোনয়নপত্রে দেয়া তথ্য গোপন ও গড়মিলের অভিযোগ এনেছেন এ ইউনিয়নের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় চত্বরে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও মোহাম্মদ আব্দুল সবুর বলেন, আমাদের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী হারুনুর রশীদ ইমন শিক্ষাগত যোগ্যতায় এসএসসি পাশ হলেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার ক্ষেত্রে এইচএসসি পাশ উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষা সনদ, পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধন সনদে নিজের নাম কখনো হারুনুর রশীদ, কখনো হারুনুর রশীদ ইমন, আবার অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইমন নাম ব্যবহার করেছেন। তার একাধিক জন্মতারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি সহ বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে তারা বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি এভাবে তথ্য গোপন করতে পারেন না। আমরা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সবগুলো বিষয়ে প্রমাণ সহকারে লিখিত অভিযোগ করলেও রহস্যজনক কারণে তিনি গ্রহণ না করে হারুনুর রশীদ ইমনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছেন যা প্রশ্নবিদ্ধ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হারুনুর রশীদ ইমন বলেন, আমার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তা মনোনয়নপত্র বহিভ‚র্ত। মূলত এ সময়ে তারা অন্য বিষয় এনে নির্বাচনী মাঠে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন রোমান খান বলেন, সমিতিরহাটে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হারুনুর রশীদ ইমনের মনোনয়নপত্র বাতিল করতে যেসব অভিযোগ তুলেছেন, তার সবটুকু যাছাই-বাছাই করে দেখেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনে একজন প্রার্থীর ক্ষেত্রে যেসব তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন পড়ে, তার সবটুকু তিনি দিয়েছেন, যার কারণে হারুনুর রশীদ ইমনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।