ফটিকছড়িতে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ

199

ফটিকছড়িতে কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার খেজুর গাছ। ফলে খেজুর রসের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধু বৃক্ষ খেজুর গাছ। শীতে গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক উৎসব শুরু হয় এ গাছকে ঘিরে। কিন্তু কালের পরিবর্তনে বিগত এক থেকে দেড় দশকের মধ্যে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ। এই বৃক্ষ হারিয়ে যাওয়ার ফলে দেখা দিয়েছে খেজুর রসের ব্যাপক সংকট।
যার ফলে গাছ কাটা গাছিরা আর আগের মত তেমন করে খেজুর গাছ কাটছেনা। আর এ কারনেই নতুন প্রজন্ম চিনছেনা খেজুর রস বা রস দিয়ে তৈরি রসালো নানান মুখরুচি খাবার খাওয়ার মজা। আজ থেকে ১৫বছর পূর্বেও দেখা গেছে, এলাকার গাছিরা গাছ কেটে গাছে মাটির তৈরি হাড়ি বসিয়ে রস সংগ্রহ করে তা দিয়ে জালিয়ে গুড় বা পাটালি তৈরি করত। সাধারণ জনতা ও লাইন দিত নতুন খেজুর পাটালি সংগ্রহের জন্য এমনকি কেউ কেউ আগের থেকেই গাছিকে নতুন পাটালির জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়ে রাখতো।
গাছিরাও ওই সময় রস,গুড় ও পাটালি বিক্রি করে প্রচুর টাকা রোজগার করতো। গ্রামের লোকজনেরা ওই নতুন পাটালি ক্রয় করে শীতের বিভিন্ন পিঠা, পায়েশ তৈরি করে উৎসব পালন করেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কেহ-কেহ আবার টাটকা রস খাওয়ার জন্য দৌড়াতো গাছির বাড়ি অথবা দাড়িয়ে থাকতো গাছের নিকট কখন গাছ থেকে রস নামাবে গাছি আর ঠিক তখনই খাবে টাটকা খেজুর রস। যদিও উপজেলার হারুয়ালছড়ি, কাঞ্চননগর, নানুপুরের খিরাম, খিফায়তনগর, উত্তর ফটিকছড়ির বাগানবাজার, দাতঁমারা, নারয়ানহাটসহ পাহাড়ী টিলা এলাকাগুলোতে কিছু খেজুর গাছ মেলে, তবুও তার সংখ্যা আগের তুলনায় একেবারেই কম। এলাকায় ইটের ভাটার পরিমান বেড়ে যাওয়ায় এখন গাছ একটু বড় হলেই তা কেটে সাবাড় করে ইটের ভাটার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। একারনেই ক্রমান্বয়েই কমতে শুরু করেছে খেজুর গাছ।
শীত বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই গাছিরা গাছ কাটাকে একটা শৈল্পিক কাজ মনে করে। গাছিরা সাধারণত বিকালে গাছ কেটে গাছের মুখে হাড়ি পেতে দিয়ে আসে। সকাল হলেই গাছিরা ছুটে যায় গাছের গোড়ায়। গাছে পুনরায় উঠে নামিয়ে নিয়ে আসে একহাড়ি টাটকা খেজুরের রস। পরিপূর্ণ এক হাড়ি রস দেখে গাছে উঠার কষ্ট ও গাছ কাটার কষ্ঠ ভুলে গাছির মুখে দেখা যায় শীতের সকালে মৃদু এক ঝলক হাসি।
একাদিক গাছিরা বলেন, এক সময় গাছ কেটে, রস সংগ্রহ করে, তা জালিয়ে গুড়-পাটালি তৈরী করে বিক্রি করে বেশ ভাল টাকা আয় হত এখন আর তেমন বেশি একটা খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। এখন আগের মত আয় উপার্জন হয়না খেজুর পাটালি বা রস বিক্রি করে।
তারা আরো বলেন, পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এবং ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সকলে একযোগে খেজুর চারা রোপন করা হলে দেশে আবারও আগেরমত সেই রস পেত আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আমরা আবার ফিরে পেতাম সেই ঐতিহ্যবাহী খেজর রস।