পড়ে আছে ২৩ হাজার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স

32

মনিরুল ইসলাম মুন্না

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দীর্ঘ জটিলতার পর চট্টগ্রাম কার্যালয়ে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ শুরু করলেও গ্রাহক পর্যায়ে খুব একটা সাড়া মিলছে না। গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে বিআরটিএ থেকে মেসেজ পাঠানো হলেও তার বিপরীতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) শফিকুজ্জামান ভূঞা পূর্বদেশকে এমন তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক লাইসেন্সের আবেদনকারীর মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়েছি। পাশাপাশি টেলিভিশনের স্ক্রলে বিজ্ঞপ্তি আকারে দিয়েছি। স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরও স্মার্ট লাইসেন্স নিচ্ছেন না গ্রাহকরা।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৮৬ হাজার ৬৬৫টি স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সেনাবাহিনীর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৬১ হাজার ৬৪টি ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হলেও বাকি ২৩ হাজার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স এখনো রয়ে গেছে। এসব স্মার্ট কার্ড গ্রাহকরা এখনও নিতে আসেননি।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে আটকে ছিল সারাদেশের ১২ লাখ ৪৫ হাজার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স, যার মধ্যে শুধু চট্টগ্রামের ছিল ৮৬ হাজার ৬৬৫টি। গত ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে আটকে পড়া এসব লাইসেন্স গ্রাহককে দেওয়া শুরু করেছে। যা এখনও বিতরণ চলছে।
লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু গ্রাহক আছেন যারা দেশের বাইরে চলে গেছেন, আর কিছু গ্রাহক আছেন যারা মোবাইল ফোনের সিম পরিবর্তন করে ফেলেছেন। ফলে মেসেজ পাঠালেও তাদের কাছে তা পৌঁছাচ্ছে না। অনেক সময় আমরা নির্দিষ্ট নম্বরে বারবার ফোন দেওয়ার পরও বন্ধ পাচ্ছি।
দেশে গাড়ি চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্বাভাবিক সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকে। টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে বিআরটিএ এর চুক্তি শেষ হয় ২০২১ সালের ২২ জুন। ২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের পর লাইসেন্সের আবেদনকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই লাইসেন্স ফুরিয়ে যায়। অর্থাৎ মেয়াদ থাকলেও বিপুল চাহিদার ফলে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সরবরাহ শেষ হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১২ লাখ কার্ড বিতরণ শেষ করে।
এরপর আটকে পড়া ১২ লাখ ৪৫ হাজার লাইসেন্স মুদ্রণের জন্য ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট বিএমটিএফের সঙ্গে বিআরটিএ চুক্তি সই করে। এরপর একই বছরের ১০ অক্টোবর থেকে স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স সরবরাহ শুরু করেছে বিআরটিএ। এর আগে প্রায় দুই বছর ধরে বিআরটিএ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারেনি। অন্তর্বর্তীকালীন প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ মোটরযান চালানোর অস্থায়ী অনুমতিপত্র হিসেবে ব্যবহার করছিলেন চালকরা। লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাননি ১২ লাখ ৪৫ হাজার গাড়িচালক।
পরবর্তীতে ‘ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ড’-এ ছাপা ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের কাজ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড’। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ১২০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের চুক্তি হয় বিআরটিএ’র। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরে ৪০ লাখ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে।