প্রেসক্রিপশনে শিশুর জন্য গুঁড়ো দুধের নাম লিখতে বাধ্য করা হচ্ছে

33

 

জন্মগ্রহণের পরে পরিপূর্ণ সুস্থ সবল শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই। জন্মের সাথে সাথে মায়ের শাল দুধই শিশুর প্রথম টিকা ও খাবার। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সংক্রামক থেকে শিশুকে দ্রæত রক্ষা করে। শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে হলে জন্মের প্রথম ৬ মাস অবশ্যই বুকের দুধ দিতে হবে। আর কিছুই দেয়া যাবে না। এর পর দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ঘরে তৈরি শিশুর উপযোগী তরল সুষম ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। তাহলে শারীরিক-মানসিক বিকাশ সাধনসহ শিশুটি বুদ্ধিমান হবে। কিন্তু মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে যেসব গুঁড়ো দুধ বাজারে বিক্রি হয় সেগুলো শিশু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বুকের দুধের পরিবর্তে এগুলো খাওয়ালে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগে ও বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আয়োজিত মাতৃদৃগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ ও বিধি ২০১৭ এবং পুষ্টিখাতের অর্জন বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়নে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় কর্মশালার আয়োজন করেন।
বক্তারা বলেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর খুব দ্রæত শাল দুধ খাওয়ালে মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয় ও গর্ভফুল পড়তে সাহায্য করে। ফলে মা রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা পায়। দেশি-বিদেশি কিছু অসাধু কোম্পানি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে শিশুদের জন্য মায়ের দুধের পরির্বতে গুঁড়ো দুধের প্রচার প্রচারণা চালায়। তারা এক শ্রেণির ডাক্তারদের চুুক্তিতে শিশুদের জন্য মায়ের বিকল্প হিসেবে প্রেসক্রিপশনে গুঁড়ো দুধ লেখানোর জন্য বাধ্য করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতাল ও কিনিক্লগুলোতে গুঁড়ো দুধের প্রচারণা বন্ধে ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। মা ও শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে গুঁড়ো দুধ বর্জন করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, সন্তান প্রসবের পর কোন মা মারা গেলে শুধুমাত্র ঐ শিশুর জন্য বুকের দুধের পরিবর্তে রেজিষ্টার্ড শিশু চিকিৎসকেরা তাদের ব্যবস্থাপত্রে কারণ উল্লেখ করে বিকল্প হিসেবে ভালোমানের গুঁড়ো দুধ দিতে পারবে। মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে কোন কোম্পানি তাদের উৎপাদিত গুঁড়ো দুধের প্রচার-প্রচারণা চালালে তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে। মাতৃদুগ্ধের বিকল্প গুঁড়ো দুধের বিরুদ্ধে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। তাদেরকে হাসপাতাল ও ডাক্তারের চেম্বার বা ক্লিনিক থেকে বয়কট করতে হবে। কর্মশালায় উপস্থিত বিশেষ অতিথিরা এই আইনটি বাস্তবায়নে সর্বত্র প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত¡াবধায়ক সুজন বড়–য়ার সঞ্চালনায় কর্মশালা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। প্রধান অতিথি ছিলেন মহাখালীস্থ জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমের জাতীয় পুষ্টিখাতের অর্জন বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের পরিচালক ডা. তাহেরুল ইসলাম ও মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শোয়াইব। স্বাগত বক্তব্য দেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল-মাসুম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারজান হোসেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উ-পরিচালক মো. সেলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মাহমুদা আক্তার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আহমেদ তানজিমুল ইসলাম, ডা. নাবীল চৌধুরী, ডা. জিল্লুর রহমান, ডা. আবদুল মজিদ ওসমানী, ডা. মোহাম্মদ হানিফ, ডা. শাহীন হোসাইন চৌধুরী, এএসএম ইমতিয়াজ হোসাইন, ডা. মো. নুর উদ্দিন, ডা. মো. শাফিউর রহমান মজুমদার, মো. নুর আলম দ্বীন, আবু জাহিদ মো. শরফুদ্দিন, ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সব্যসাচী নাথ, ডা. ওয়াজেদ চৌধুরী অভি, ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার, ডা. এফ এম জাহিদ, রনজিত কুমার শীল, এডভোকেট সেলিম চৌধুরী, ডা. রুমি দাশ, ডা. রুমানা রশিদ, ডা. ফারিয়া সিলভী, ডা. নারগীস আক্তার সিদ্দিকী, ডা. ফাহিমা আফরিন প্রমুখ। কর্মশালায় বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স অংশ নেন। বিজ্ঞপ্তি