‘প্রেম বিষ’

5

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

করোনা কালে শিশুটিকে আর দেখাতে আসতে পারেনি। শিশুর নানা-নানি তাই জানালেন। করোনাপূর্বে একবার দেখিয়েছিলেন। ৫ বছরের নাতি শহিদ। কথাবার্তা বলে না, বসা-হাঁটাতেও অক্ষম। বার্থ এসপাইয়েকশিয়ার শিকার। ভ‚মিষ্টকালীন সময়ে প্রথম মিনিটে শিশু যদি কেঁদে না ওঠে, তবে তার ফুসফুস অক্সিজেন পায় না, শিশু অক্সিজেন স্বল্পতার শিকার হয়।। তখন মস্তিষ্কে থাকা কথাবার্তা বলা- হাঁটা-চলা প্রভৃতির নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র অক্সিজেনের অভাবে হয়তো দুর্বল বা পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। বার্থ এসপাইয়েকশিয়া বা ‘জন্মকালীন শ্বাসরোধ’ অসুখের অন্যতম জটিলতা হলো ব্রেইনে থাকা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের এইসব ক্ষতি। সেই ক্ষতি নিবারণে তাই ‘ভ‚মিষ্টকালীন সময়ে প্রথম মিনিটের মধ্যে’ শিশুকে কাঁদানোর ব্যবস্থা নিতে হয়। এজন্য এই সময়টাপ্রথম সোনালি মিনিট’ নামে অভিহিত। শহিদের ক্ষেত্রে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিলো। ভ‚মিষ্ট হওয়ার আনেকটা সময় পর্যন্ত সে কান্না করেনি। তার জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসাও পায়নি। তদুপরি ডেলিভারি হয়েছে অশিক্ষিত দাইয়ের হাতে। এখন শহিদের বিকাশ ও বৃদ্ধি গুরুতরভাবে অবরুদ্ধ। প্রথমে যখন নিয়ে আসা হয়েছিলো, তখন ওষুধপত্র, শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চিকিৎসা ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু‘ করোনাকালীন প্রায় দুই বছর চিকিৎসাটা যথাযথ নেওয়া হয়নি। নাতি দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। নানা-নানির অনেক আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। তবুও তাঁরা নাতির যত্না-পরিচর্যা চিকিৎসার ভার নিয়েছেন। -‘ওর মা কোথায় ?’ জবাবে জানা গেলো শহিদের মা ছিলেন গার্মেন্টস কর্মী। সেখানে কর্মরত এক ছেলের সঙ্গে প্রেম করে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। মা-বাবার অমতে। এরপর শহিদের জন্ম। জন্মের পর শহিদের এই অবস্থা দেখে ঘরে নিত্য ঝগড়া। বাবা বাহাদুর একদিন ছেলে প্রতিবন্ধী দেখে পালিয়ে বেড়ালেন। শহিদের মা প্রেম-বিয়ের দুই বছরের মাথায় আত্মহত্যা করলেন বিষ পানে। প্রেম বিষ।

লেখক: প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল