প্রিয়া সাহার উদ্ভট অভিযোগ বিশেষ মতলবে : মোমেন

57

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয়া সাহা ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে করেছেন, তা নাকচের পাশাপাশি এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে যে অভিযোগ করেছেন, তা একেবারেই মিথ্যা। বিশেষ মতলবে এমন উদ্ভট কথা বলেছেন তিনি। আমি এমন আচরণের নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মোমেন গত শুক্রবার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এক সমাবেশে যোগ দিয়ে লন্ডন রওনা হওয়ার আগে একথা বলেন।
শনিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর উদ্দেশ্যেই প্রিয়া সাহা এই ধরনের বানোয়াট ও কল্পিত অভিযোগ করেছেন। খবর বিডিনিউজের
ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত বুধবার হোয়াইট হাউজে গিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ওই অভিযোগ করেন প্রিয়া সাহা। তার দাবি, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়েছেন।
ওই সম্মেলনে বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার অভিযোগ বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
প্রিয়া সাহার অভিযোগের অসারত তুলে ধরতে মোমেন বলেন, বাংলাদেশে সরকারী কর্মচারীদের ২৫ শতাংশ হচ্ছে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু, যদিও তারা মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ।
তিনি বলেন, ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করেছেন। তাই প্রিয়া সাহার বক্তব্য যে অন্তঃসারশূন্য এবং বিশেষ উদ্দেশ্যে জঘন্য মিথ্যাচার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের অভিযোগে প্রকারান্তরে শান্তিপূর্ণ সমাজে বিশৃঙ্খলা উষ্কে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তা কখনও হতে দেবে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ‘যাদের সহ্য হচ্ছে না’, সেই গোষ্ঠির উদ্দেশ্য পূরণেই প্রিয়া সাহা এই অভিযোগ করেছেন।
এদিকে ওই অভিযোগ তোলার পর প্রিয়া সাহার সঙ্গে কথা বলতে শুক্রবার সকালে কয়েক দফায় ফোন করা হলেও তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রিয়া সাহার স্বামী মলয় সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা। তার দুই সন্তান পড়াশোনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক ‘হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন’র কর্মকর্তা জয় ক্যানসারার উদ্যোগে প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রে এই সম্মেলনে আসেন। তবে জয় ক্যানসারার মাধ্যমেও প্রিয়া সাহার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, তাদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের কাছে যে অভিযোগ করেছেন, তা একান্তই তার নিজস্ব বক্তব্য, সংগঠনের নয়। ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে ঐক্য পরিষদের একাংশের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপার্সন অশোক কর্মকার বলেছেন, তার অভিযোগকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে না নিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে যে শঙ্কা বিরাজ করছে, তা সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। ঐক্য পরিষদের আরেক অংশের মুখপাত্র শিতাংশু গুহও বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতে হবে।
এদিকে এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ড. ইউনূস, বিচারপতি এসকে সিনহা , শিতাংশু গুহ ও প্রিয়া সাহা- এরা সবাই একই সূত্রে গাঁথা । এরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ষড়যন্ত্রকারী।
এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকে প্রিয়া সাহার অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক খোরশেদ খন্দকার বলেন, প্রিয়া সাহা নিজের স্বার্থে বাংলাদেশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের সহজ পথ হিসেবে এমন উদ্ভট-আজগুবি কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে।