প্রাণে বাঁচলেও পা বাঁচেনি আদরের

50

চোখে ঘোর অন্ধকার। অপরিচিত মানুষ দেখেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। মৃদু স্বরে কথা বলতে গিয়ে চোখজোড়া বারবার ভিজে আসছিল। পাশে বসেই কাঁদছেন মা। এটি নগরীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালের ৯০৭নং কক্ষের চিত্র। যেখানে শুয়ে পঙ্গুত্ব জীবনের শুরুর সময়টা পার করছেন পা হারানো নাজিম উদ্দিন আদর। তিনি সরাইপাড়া সিটি কর্পোরেশন ডিগ্রি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
গত ২১ জানুয়ারি রাতে বন্দর থানাধীন পোর্ট কলোনি এলাকায় বন্ধুরা ছুরিকাঘাতে আদরকে হত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রামের পাঁচটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে প্রাণে বাঁচলেও আদরের পা রক্ষা পায়নি। তাঁর বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় বন্ধু মেহেদী, রিয়াদ হোসেন, জয়দাশ, মাঈন উদ্দিন, মো. হারুন, আমিনুর রাশেদ প্রকাশ জীবন ও অনিককে আসামি করে বন্দর থানায় মামলা করেছেন আদর।
বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আদরের উপর হামলার ঘটনায় অনেক দেরিতে মামলা হয়েছে। ভিকটিম পক্ষ প্রথমদিকে নানা কারণে মামলা করতে চায়নি। পরে মামলা দিলে আমরা তা গ্রহণ করি। আমরা আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের সবধরনের কৌশল অবলম্বন করে আসামি ধরতে কাজ চালাচ্ছি। আসামিরা এলাকার বাইরে আছে।’
জানা যায়, স›দ্বীপ উপজেলার মৌলভী বাজার এলাকার প্রবাসী মো. বেলালের দুই সন্তান্তের মধ্যে ছোট নাজিম উদ্দিন আদর। বাবা বিদেশে থাকায় দুই সন্তানকে নিয়ে বন্দর থানাধীন পোর্ট কলোনির ৭নং রোডে থাকেন মা শাহেনা বেগম। ঘটনার দিন রাত ৯টার দিকে একা হেঁটে টি-স্টুডেন্ট কোচিং সেন্টারের সামনে গেলেই কয়েকজন মিলে আদরকে হত্যার চেষ্টা করে। ছুরিকাঘাতের কারণে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আদরকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মামলার বাদি ও ঘটনার শিকার নাজিম উদ্দিন আদর পূর্বদেশকে বলেন, যারা আমাকে মেরেছে ওরা সবাই আমার বন্ধু ছিল। সবার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল। একসাথে রেলওয়ে সরকারি স্কুলে পড়ালেখা করেছি। পরবর্তীতে ওরা লেখাপড়া ছেড়ে দিলেও আমি এখনো লেখাপড়া করছি। কি কারণে আমার উপর হামলা চালিয়েছে এখনো বুঝতে পারছি না। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদর বলেন, হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ ছুরিকাঘাত করায় আমার বাম পা কেটে ফেলা হয়েছে। ঘটনার দিন প্রথমে বন্দর হাসপাতাল এরপর চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা কোনোধরনের সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতাল, হৃদরোগ হাসপাতাল ও এপ্যালো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। এপ্যালো হাসপাতালেই চিকিৎসকরা আমার পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দেন। পায়ে এখনো প্রচুর ব্যথা। আগামী মার্চে আমার এইচএসসি পরীক্ষা। আমি পরীক্ষা দিতে চাই।
আদরের মা শাহেনা বেগম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার ছেলের সারাটা জীবন শেষ করেছে ওরা। আমি তাদের শাস্তি চাই। কেউ যেন রেহাই না পায়। এভাবে আমার ছেলেকে পৃথিবীতে বাঁচতে হবে কখনো কল্পনা করতে পারি না। ছেলের এমন অবস্থায় ওর বাবা বিদেশ থেকে একেবারে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে। মামলার হওয়ার পরই আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সেখানে রক্তের দাগ দেখেছি। তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে।’