প্রাণনাশে নয় মনের খাদ্য পূরণ পরিবেশের ক্ষতিকর বিনোদন বন্ধ করা জরুরি

11

 

মানুষ দেহকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আহার করে। দেহের পুষ্টি ও সুস্থতা বিধানে খাদ্য গ্রহণ অপরিহার্য। শুধু খাদ্য গ্রহণ করলেই দেহের কর্মকাÐ স্বাভাবিক থাকে না, তাই বিজ্ঞানী ও চিকিৎসা শাস্ত্র মানবদেহের স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। সাধারণ বিজ্ঞানের পাঠ্য বইতে সুষম খাদ্যের তালিকা নির্দেশ করা হয়েছে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাক-সব্জি ইত্যাদি খাবার কি পরিমাণ খেতে হবে তা সুষম খাদ্যের তালিকায় লিপিবদ্ধ। দরিদ্র সাধারণ মানুষ বর্তমানে সুষম খাদ্যের তালিকা মেনে খাদ্য গ্রহণ করতে সক্ষম নয়। কারণ শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান স্বাভাবিক রাখতে পারলে রোগবালাই এবং জটিল রোগ হতে মানবদেহ অনেকখানি নিরাপদ থাকবে। কিন্তু স্বল্প আয়ের দরিদ্র সাধারণ মানুষ আমাদের দেশে কোনরকম তরল ডাল আর আলুভর্তা খেয়ে প্রাণ বাঁচায়। এজন্য দেশের অধিকাংশ দরিদ্র সাধারণ মানুষ অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগে থাকে।
বাঁচার জন্য তথা দেহ রক্ষার জন্য দেশের মানুষ অন্তত দু’বেলা ডালভাত গ্রহণ করে। দেহ রক্ষায় আহারের বিকল্প নেই। তবে মানুষ দেহ রক্ষার জন্য আহার করলেও মন রক্ষার প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না। দেহের পুষ্টির সাথে মনের স্বাভাবিক পুষ্টিও প্রয়োজন। মন ভালো না থাকলে দেহের মধ্যে তার প্রভাব পড়ে। মন কোন কারণে আক্রান্ত হলে দেহে তার প্রকাশ ঘটে। মন ভালো না থাকলে মানুষের আহারে অরুচি আসে। আহারে বিঘœতা ঘটলে দেহ দুর্বল হয়ে যায়। এজন্যে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক হেনিম্যান তার অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থে এতদ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে বলেন- মন আক্রান্ত হয় পূর্বে, দেহে তার লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই হেনিম্যান মন ও দেহের সম্মিলিত চিকিৎসার উপর গুরুত্ব আলোপ করেছেন। মন মানবজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মন ভালো থাকলে দেহেও সুস্থতা বোধ হয়। কাজেকর্মে মনোসংযোগ স্বাভাবিক থাকে। এজন্যে প্রবাদ আছে ‘অবসর কাজের অঙ্গ এক সূত্রে গাঁথা’। মনকে চাঙ্গা করতে মানব জীবনে অবসর ও বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই মানুষ অবকাশ যাপন ও বিনোদনের সুযোগ গ্রহণ করে। গান-বাজনা, সাহিত্য পাঠ, নাটক, সিনেমা ইত্যাদি নিচক বিনোদন নয়, মন ও আত্মার আহারও বটে। মানুষের অপরিহার্য প্রেমভালোবাসা উপভোগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের প্রয়োজন। পরিবেশ পরিস্থিতিই নরনারীর মনের আনন্দের চাহিদা সুচারু রূপে মেঠাতে সক্ষম। মানবজীবনে আনন্দ বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে বলতে চাই, অসম পরিবেশজনিত সংকটময় স্থানে শব্দদূষণ ও অস্বাভাবিক স্থানে কেউ বিনোদনে মত্ত হলে সেই বিনোদন বহুজনের ক্ষতি সাধন করে। নিজেরা বিনোদন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষতির কারণ সৃষ্টিকরা সত্যিকার এবং সুষ্ঠু বিনোদন নয়।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়নকারী শাহ আমানত সেতুতে জনগণের চলাচল ও গাড়ির স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্নতা ঘটিয়ে এক শ্রেণির কিশোর ও যুবক বিকালে শাহ আমানত সেতুর উপর নাচ-গানে মত্ত হচ্ছে। যা খুবই অসুন্দর ও ক্ষতিদায়ক কাজ। আমরা দেখেছি এক শ্রেণির বিকৃত সংস্কৃতি চর্চাকারী তরুণ ও যুবক রাস্তায় রাস্তায় মিনি ট্রাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে নেচে গেয়ে রাস্তা সরগরম করে থাকে। ঈদ, পূজা কিংবা পয়লা বৈশাখে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এদের কার্যকলাপে প্রচুর শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়। যার ফলে বাজারের সাধারণ মানুষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হতে দেখা যায়। অনেক সময় নামাজের সময় মসজিদের পাশেও তাদের বিকৃত রুচির নাচ-গান চলে। বাঁশখালীর বর্তমান ইউএনও মহোদয় এমন উগ্র ও পরিবেশের ক্ষতিসাধক নাচ-গানের দলকে জরিমানা করতে দেখা গেছে। শাহ আমানত সেতু দক্ষিণ চট্টগ্রামের আটটি উপজেলা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা এবং সমগ্র কক্সবাজার জেলার যান চলাচলের সেতু। অসংখ্য গাড়ি এ সেতু দিয়ে আসা যাওয়া করে। কর্ণফুলী উপজেলার বহুলোক পায়ে হেঁটে শাহ আমানত সেতু পার হয়ে বাড়িতে আসা-যাওয়া করে। বিকালে অনেক দর্শনার্থী শাহ আমানত সেতুতে বেড়াতে যায়। যার ফলে শাহ আমানত সেুতর ফুটপাত বিকালে অতিমাত্রায় ভিড় দেখা যায়। এমন সময় সেতুর উপর ভিড় সৃষ্টিকারী এবং যান চলাচলে বিঘœতা সৃষ্টিকারী নাচ-গান প্রেমিদের সুযোগ দেয়া যায় না। এমনিতে শাহ আমানত সেতুর উত্তর-দক্ষিণ দু’পাশে সড়ক দুর্ঘটনা নৈমিত্তিক ব্যাপার। এমন পরিস্থিতিতে সেতুর উপর বেখেয়ালী বিনোদন বন্ধ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে কর্ণফুলী থানা এবং বাকলিয়া থানার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজরদারী জরুরি। বৃহস্পতিবার বিকালে এবং শুক্রবার সারাদিন গাড়ি ও পথচারী চলাচলে খুবই ব্যস্ত থাকে শাহ আমানত সেতু। সেই সময়ে সেতুতে বেড়া আসা লোকজনকেও নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। শাহ আমানত সেতুতে আড্ডাবাজি, ফুটপাতে অহেতুক ভিড়, সেতুর মিড আইল্যান্ডে টিকটক ভিডিও বুননকারী এবং যাচ্ছেতাই ভাবে আনন্দ আয়োজন বন্ধ করতে জেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমন দাবী সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর।