প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জনসচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ

108

বিশ্ব প্রকৃতি ও জলবায়ু বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, তাপপ্রবাহ, ভ‚মিকল্প এবং ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কার কথা বলছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৈশাখের শেষ দিকেও দেশে কালবৈশাখির দেখা তেমন মেলেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দফায় দফায় বাড়ছে দাবদাহ। ঝড় বৃষ্টি নেই। উত্তপ্ত ধরাধাম। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহজনিত কারণ এবং অনাবৃষ্টির ফলে খরা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। শুধু পাহাড়ে নয়, সমতল এলাকায় পর্যন্ত অনাবৃষ্টির কারণে বনজ ফলদ গাছ মরে যাচ্ছে। পুকুর জলাশয় শুকিয়ে চৌচির। কৃষকরা বীজতলা তৈরি করে বিভিন্ন শাক সব্জির চারা বাঁচাতে পারছে না। কৃষকের সব্জি খেতে ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে খরা ও অনাবৃষ্টির। ফলে বাজারে শাকসব্জির দাম আকাশছোঁয়া। একশত টাকার নিচে কোন সব্জি পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করায় বৈশ্বিক জলবায়ুতে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। গোলা বারুদ, বোমা ও ক্ষেপনাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এবং পারমাণবিক পরীক্ষা ইত্যাদির কারণে আবহাওয়া উত্তপ্ত। যার কারণে আবহাওয়াবিদ ও ভ‚তাত্তি¡করা বলছেন বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার এলাকায় ভ‚মিকল্পের ঝুঁকি রয়েছে। মিয়ানমার হতে বাংলাদেশ হয়ে ভারত পর্যন্ত ভ‚-স্তরে ফাটল দেখা যাওয়ায় দেশে উচ্চমাত্রার ভ‚মিকল্পের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন সম্প্রতি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে দেশে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কাও বেড়েছে। দেশে যেকোন মুহূর্তে ভ‚মিকম্প, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হবার ঝুঁকি রয়েছে। এমতাবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, বর্ডারগার্ড, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট দুর্যোগকালীন বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা প্রয়োজন। ঘূর্ণিঝড় ও ভ‚মিকম্প মোকাবেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষে দেশের সর্বস্তরের প্রচার মাধ্যমকে সরকারি ও প্রশাসনিক ভাবে তাগাদা দেয়া জরুরি।
দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর বর্তমান চরিত্র বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় দেশে যেকোন মুহূর্তে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হতে পারে। তার জন্য জনগণকে বার বার সতর্ক করা জরুরি। সচেতন নাগরিক, শিক্ষক সমাজ এবং স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করতে পারেন। বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড়, ভ‚মিকম্পসহ বিভিন্ন দুর্যোগে জনগণের করণীয়গুলো রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে বারবার প্রচার করে জনগণকে সচেতন করা জরুরি। এই গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশে ব্যাপক অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটছে। অগ্নিকাÐ নিয়ন্ত্রণেও জনগণকে সচেতনতা অবলম্বন করানো প্রয়োজন। যেকোন দুর্যোগে আগাম সতর্কতা ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হতে রক্ষা পাওয়া যায়। দেশের প্রকৃতি তার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। তা জনগণকে সব সময় মাথায় রেখে কাজকর্মে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বজ্রপাতের সম্ভাবনায় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। ভ‚মিকম্পে ঘর হতে বের হয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া প্রয়োজন। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য বিপদ হতে রক্ষা পেতে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি। দেশের সর্বস্তরের মানুষ সম্ভাব্য দুর্যোগে সচেতন হলে মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। আসুন আমরা আসন্ন দুর্যোগের বিষয়ে নিজেরা সতর্ক হই এবং সাধারণ জনগণকে সতর্ক করি। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ হতে দেশে আগাম সতর্কতা মূলক ব্যবস্থার প্রস্তুতি রাখা জরুরি। জনগণ, সরকার ও প্রশাসন সচেতন হলে যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশের মানুষকে বেগ পেতে হবে না এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের।