প্রস্তুত ১১৫ ইঞ্জিন, ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে শৃঙ্খলা

9

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ট্রেনের টিকিটের জন্য মানুষের ভিড় ততই বাড়ছে। তবে তা এখনও সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গতকাল সোমবার গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। তবে ঈদের টিকিট সংগ্রহ করতে নারীদের ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ রেখেই ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়ে নারীদের যাতে টিকিট নিতে সমস্যা না হয় সেজন্য আলাদা কাউন্টারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ট্রেনের টিকিট কাটতে যাত্রীদের এনআইডি অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ দেখানো রেল কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূল করায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকেই।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার দে জানান, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত যাত্রীরা চট্টগ্রাম স্টেশনের ১০টি কাউন্টার থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট কিনতে পারছেন। ঈদ উপলক্ষে ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি করা হলেও ঈদের সময় প্রতিদিন লোকাল ট্রেনগুলো চলবে। এছাড়া চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ২টি স্পেশাল ট্রেন চলবে। এখানে নারীদের জন্য আলাদা কাউন্টারে ‘বিশেষ ব্যবস্থা’য় টিকিট সংগ্রহ করা যাচ্ছে।
তথ্যমতে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন রুটে ১০ আন্তঃনগর ট্রেনের ৭ হাজার ৩৪টি টিকিট বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে অর্ধেক টিকিট চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের কাউন্টারে এবং অর্ধেক অনলাইনে পাওয়া যাবে। ২৪ এপ্রিল বিক্রি করা হয়েছে ২৮ এপ্রিলের, ২৫ এপ্রিল বিক্রি করা হয়েছে ২৯ এপ্রিলের, ২৬ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ৩০ এপ্রিলের এবং ২৭ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ১ মে এর টিকিট। ঈদের টিকিট বিক্রয়ের প্রথমদিনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্টেশনগামী ট্রেনের জন্য প্রায় ছয় হাজার টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়। তবে সকালের দিকে সার্ভারে একটু সমস্যা থাকলেও তা দ্রæত ঠিক হয়ে যায় বলেও জানান তিনি।
গত শনিবার দেয়া হয়েছে ২৭ এপ্রিলের টিকিট। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন কাউন্টারে গতকাল যাত্রীদের ভিড় তেমন দেখা যায়নি।
ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে আসা মোহাম্মদ আরমান জানান, ঈদে বাড়িতে যাওয়ার জন্য টিকিট সংগ্রহ করতে এসেছি। টিকিট নিলাম। পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মোহাম্মদ সাকিব নামে আরেক যাত্রী জানালেন, অনলাইনে টিকিট কেটেছি। রেল স্টেশনে টিকিটটি প্রিন্ট কপি নেয়ার জন্য এসেছি। সকালের দিকে অনলাইনে টিকিট নেওয়ার সময় সার্ভারে সমস্যা ছিল বলেও জানান তিনি। অনলাইনে সার্ভার ব্যস্ত থাকার কারনে অনেকে স্টেশনে চলে এসেছেন টিকিট কিনতে।
রেলওয়ে থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ১ থেকে ৮ নম্বর কাউন্টারে আলাদা আলাদা ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। ১ নম্বর কাউন্টারে নারী, ওয়ারেন্ট ও রেলওয়ের পাশ টিকিটের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২ নম্বর কাউন্টারে সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (স্নিগ্ধা ও শোভন চেয়ার), ৩ নম্বর কাউন্টারে পাহাড়িকা ও উদয়ন, ৪ নম্বর কাউন্টারে মহানগর গোধূলী ও মহানগর এক্সপ্রেস, ৫ নম্বর কাউন্টারে ত‚র্ণা এক্সপ্রেস, ৬ নম্বর কাউন্টারে চট্টলা ও বিজয় এক্সপ্রেস (স্নিগ্ধা, শোভন চেয়ার ও শোভন), ৭ নম্বর কাউন্টারে মেঘনা এক্সপ্রেস, চাঁদপুর স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে ঈদে যাত্রীসেবায় ১১৫ ইঞ্জিন প্রস্তুত করেছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। রেল পূর্বাঞ্চল মেয়াদোত্তীর্ণ ৬৮টি ইঞ্জিনসহ মোট ৮৮টি ইঞ্জিন মেরামত করেছে। এছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা ২৭টি নতুন ইঞ্জিনও প্রস্তুত রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রস্তুত রয়েছে মোট ১১৫টি ইঞ্জিন। গতকাল সোমবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পাহাড়তলী কারখানা ডিজেলশপ সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
তথ্যমতে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৮৮টি পুরাতন ইঞ্জিনের মধ্যে ৬৮টি মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন মেরামত করা হয়েছে যাত্রীসেবায়। এছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা নতুন ২৭টি ইঞ্জিনও প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাত্রীসেবায়।
এ বিষয়ে রেল পূর্বাঞ্চল পাহাড়তলী কারখানা ডিজেলশপের কর্ম-ব্যবস্থাপক রাজীব কুমার দেবনাথের বক্তব্য হচ্ছে, যাত্রীদের ঝামেলাহীন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ১১৫টি ইঞ্জিন প্রস্তুত।