প্রস্তাবেই বেড়ে গেল ভোজ্যতেলের দাম বাজারে কমে গেছে কয়েকটি কোম্পানীর তেলের সরবরাহ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি নেয়া হচ্ছে

37

নিজস্ব প্রতিবেদক
দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের পর ভোজ্যতেলের বাজার আবারও লাগামহীন হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানীর তেলের সরবরাহও কমে গেছে বাজারে। খুচরা বাজারে বোতলজাত তেলের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি নিতে দেখা গেছে দোকানীদের। একইভাবে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার মনিটরিংয়ের কথা বলছেন ভোক্তা সংশ্লিষ্টরা।
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে। প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ১৯০০ থেকে ১১০০ ডলারে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে আবারও সয়াবিনসহ ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ভোজ্যতেল আমদানিকারক মিল মালিক সমিতি। স¤প্রতি ডলারের মূল্য বৃদ্ধিকে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা। তবে এ প্রস্তাবে এখনও সাড়া দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরই মধ্যে খুচরা বাজারে বাড়তি মূল্যে তেল বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, কিছু দিন আগে মূল্য সমন্বয় করে কিছুটা কমানো হলেও বাজারে সেই দামে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন কৌশলে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। বিশ্ববাজারেও তেলের দাম কমার পথে, সেখানে আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অপ্রত্যাশিত।
জানা গেছে, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম যখন বাড়তি ছিল, তখন আমদানিতে সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাট ছাড়, এলসি কমিশন ও এলসি মার্জিন প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব সুবিধা নিয়ে আমদানিকারকরা দেশের বাজারে তেল আনলে দাম কমার কথা। লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষ কম দামে সয়াবিন তেল কেনার সুযোগ পাবেন। কিন্তু দেখা গেছে, প্রকৃতপক্ষে তার বিপরীত ঘটেছে এবং ভোক্তারা এর কোনো সুফলই পাচ্ছেন না।
নগরীর বহদ্দারহাট ও চকবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, নানা অজুহাতে আবারও সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে মানুষের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এসব বাজারে বোতলজাত এক লিটারের তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। অথচ বোতলের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা। একইভাবে ৫ লিটারের বোতলের দাম ৯৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ ৯২০ টাকায় বিক্রি করছে। অথচ গত সপ্তাহে একই তেল বিক্রি হয়েছে ৮৯০ টাকায়। এছাড়া বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব ও কয়েকটি তেল ক্রয়-বিক্রয় ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে জুলাই মাসে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দর কমে ১ হাজার ৫৩৩ ডলারে নেমে এসেছে। গত ৪ আগস্ট সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল গড়ে ১ হাজার ৪০৬ দশমিক ৬৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হিসাব ধরে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে ট্যারিফ কমিশনের তৈরি করা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২৩ মে’র তুলনায় ৩১ জুলাই সয়াবিন তেলের দাম ৩১ শতাংশ কম ছিল।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জুলাই ট্যারিফ কমিশনের মধ্যস্থতায় সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণা আসে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, এক লিটারের বোতল ২০৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৮৫ টাকা, আর ৫ লিটারের বোতলের দাম হওয়ার কথা ছিল ৯১০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ১৬৬ টাকা, আর পাম অয়েল বিক্রি করার কথা সর্বোচ্চ ১৫২ টাকা। তবে এটি যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। এতে প্রকৃতপক্ষে বাজারে তেলের দাম কমেনি। ‘আগের দরে কেনা মাল’ অজুহাতেই বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।