প্রসঙ্গ রোহিঙ্গা

149

বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি বিরক্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার মানুষের বিরক্তি ও ক্ষোভ চরমে। দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসন স্থগিত হওয়ায় রোহিঙ্গারা বেজায় খুশি হলেও স্থানীয়রা চরম বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা সন্ত্রাশীদের গুলিতে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা খুন হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বের হয়ে মানুষ রাস্তায় নামেন। তবে আমাদের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর তড়িৎ তৎপরতার কারণে অস্থিরতা কমলেও খারাপ পরিস্থিতির শঙ্কা বাড়ছে। এই ঘটনার তিন দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা গণহত্যা বিদবস পালনের নামে লক্ষাধিক উদ্বাস্তু রোহিঙ্গারা ৫ দফা দাবি নিয়ে মহাসমাবেশ করে আশ্রয় পাওয়া আমাদেরই জমিতে। যা দেশের জন্য মোটেও ভাল খবর নয়, হতেও পারেনা। এখনো এক জনকে গুলি করার সাহস দেখিয়েছে, মহাসমাবেশ নামের লাল সংকেতও দেখিয়েছে, ভবিষ্যতে তাদের সাহস ও উগ্রতার মহড়াও দেখার অপেক্ষায় আছে জাতি।
২০১৭ সালে রাষ্ট্রবিহীন, দেশহীন হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর মিছিল থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে যখন আশ্রয় নিচ্ছিল লাখো রোহিঙ্গা জনগোষ্টি। তখনই লিখেছিলাম মানবিক হতে গিয়ে মানবাধিকার খোয়ানোর শঙ্কার কথা। আজ সেই শঙ্কাই বাস্তাবায়িত হওয়ার পথে হাঁটছে। তারা আমাদের দেশের সবুজ বন, পাহাড় উজাড় করে পরিবেশ-পরিস্থিতির এত অবনতিতেও শুধু মানবিকতা দেখিয়ে সহ্য করার পরও তাদেরই হাতে খুন হতে হচ্ছে আমাদেরই ভাইকে, তাদের কারণেই প্রতিনিয়ত অপমানিত হতে হচ্ছে, তাদের জন্য মানবতা দেখাতে গিয়ে অমানবিকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে শুধু এই অঞ্চলের মানুষকেই।
আমরা জানি যে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে, রোহিঙ্গাদের পুঁজি করে ব্যবসা করা রাজনৈতি বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার আড়ালে থাকা বুর্জোয়াদের জন্য নতুন কিছু নয়। তবে এই ব্যবসায় যে বা যারা আর্থিক লাভবান হচ্ছেন তারা শুধু আর্থিক বিষয়টাই দেখছেন, কিন্তু রোহিঙ্গা নামক বারুদের ময়দানে আগুন দেয়ার জন্য মশাল হাতে নিয়ে নেপথ্যে যারা কাজ করছে তাদেরই মুখোশ থেকে বের করা দরকার। এবং সেটা সরকারেরই করা উচিৎ, যদিও এ বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা ও কূটনৈতিক বিচক্ষণতা জরুরী। কিন্তু এখন আমাদের কাছে আশ্রিত যারা শুধু তাদেরকেই কেন আমরা প্রতিপক্ষ ভাবছি? যেখানে মূলত আশ্রিতরা দাবার গুটি, চালছে অন্য কেউ। এই অপরাজনৈতিক দাবাড়ুদের সাথে আমাদের অভ্যন্তরে যারা সহযোগীতা করছে তাদেরও চিহ্নিত করা দরকার। অন্যথা স্থানীয়রা ক্ষোভে মরবে আর অপরাজনীতিকরা লোভে মারবে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ঘর পোড়া আগুনে এরা ওম পোহাবে! আর সতর্ক না হলে সে আগুনে চামড়া পোড়বে স্থানীয়দের।
একটু ভেবে দেখুনতো! রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশের জন্য মিয়ানমারের চাপিয়ে দেওয়া একটি বড় ঝামেলা বা মহা বিপদ, সে বিষয়ে আমাদের দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ এখনো সচেতন হয়েছে কি না! যারা এ বিষয়টাকে মানবিক বিপর্যয় বা সা¤প্রদায়িক বৈষম্য হিসেবে দেখিয়েছিলেন তাদের কেউ কিন্তু এখন সামনে নেই। যে যার মত করে সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে সরে যেতে ব্যস্ত। আমাদের অনেক আগেই সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের ধর্মান্ধতা ও অতী আবেগপ্রবণতা আমাদের সতর্ক হতে দেয়নি, যা আমরা ভোগ করছি তিলে তিলে। শুধু ভাষা, ধর্ম কিংবা নৃতাত্তি¡ক গঠনে মিল থাকার কারণেই বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ২০ লাখ লোকের ভার শুধু টেকনাফ-উখিয়াতো বয়তে পারে না! রোহিঙ্গাদের জন্য যারা মায়া কন্না কাঁদছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি মিয়ানমারে যান, ঐ সরকারকেই বাধ্য করুন তাদের ঝামেলা তাদের সামলাতে। আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে দাবির নামে কুরূপ দেখানোর চেয়ে নিজের অধিকার রক্ষায় নিজেদের লড়তে বলুন। আমাদের মাটি, আমাদের বন, আমাদের পরিবেষকে বাঁচতে দিন। স্থানীয়দের আরো বেশি সতর্কতার সাথে চলতে হবে, তারা যেন আমাদের সমাজে মিশে যেতে না পারে সে ব্যাপারে সামাজিক সচেতনা বৃদ্ধি করার বিকল্প নাই।
জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী, কিন্তু এ ব্যাপারে তারা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় যারা তাদেরও মানবিক জীবন যাপন করার, পরিষ্কার আবাসস্থল পাওয়ার, সবুজ প্রকৃতির নির্মল ঘ্রাণ পাওয়ার, সুষ্ঠ ও স্বাভাবিক জনপথ পাওয়ার অধিকার আছে। সুতরাং আশ্রিতদের সহায়তার জন্য আশ্রয় দাতাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনতো বাধাগ্রস্ত হতে পারে না!! পৃথিবীর সভ্য সমাজে সব মানুষেরই শিক্ষা ও দেশ পাওয়া জন্মগত অধিকার। তাই বলে আশ্রয় দাতার উপর বোঝা হয়ে, অকৃতজ্ঞতার ইতিহাস গড়ে, অপরাজনীতির স্বীকার হয়ে অধিকার ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। নিজেদের মাটি রোহাঙ গিয়ে, এনজিওগুলোকে সাথে নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করা উচিৎ। আর এ বিষয়ের সমাধানে যারা বাধা তাদেরই হাতে যেন সিদ্ধান্ত বা মধ্যস্থতার সুযোগ না থাকে। সে দিকে সুদৃষ্টি না রাখলে বিশ্ব বিবেক বা বিশ্ব নেতৃত্বকে আাগামীর ইতিহাসে নিন্দা বা প্রশ্নের সম্মুখিন হতেই হবে।

লেখক : সাংবাদিক