প্রসঙ্গ : আবারো চোখ রাঙাচ্ছে করোনা, সতর্কতা জরুরি

7

লিটন দাশ গুপ্ত

ভেবেছিলাম ২০১৯ সালে সৃষ্টি হওয়া করোনা ভাইরাস ২০২২ সালে শেষ হয়েছে বা শেষ হতে চলেছে! কিন্তু না, শেষপর্যন্ত দেখা গেল সেই ভাবনা সঠিক হয়নি। দীর্ঘ সময় দেশ করোনায় মৃত্যুহীন দিন আতিবাহিত করেছিল, সংক্রমণের হার ১ এর নিচে কিংবা আক্রান্তের সংখ্যাও ছিল একেবারে হাতে গোনা। সাধারণ মানুষ করোনা সম্পর্কে ভুলতে বসেছিল বা করোনা আতঙ্ক থেকে মুক্ত হতে চলছিল। প্রায় সকল মানুষ মাস্ক বিহীন নিঃশ্বাস নিতে শুরু করেছিল। বলতে গেলে জনজীবন একেবারে স্বাভাবিকের পথে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এরই মধ্যে দৈনিক দুই হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং তা সময় সময় বেড়েই চলেছে। তাই এখন আবার ভাবতে হচ্ছে তাহলে কি করোনা চতুর্থ ঢেউ কি শুরু হয়ে গেছে! আমরা জানি ওমিক্রনের দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট যেগুলোকে বিএ.৪ এবং বিএ.৫ নামকরণ করা হয়েছে, সেই সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্যবিদদের ধারণা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে ঈদ-উল-আযহার পরের সময়টাতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আরো বৃদ্ধি পাবার আশঙ্কা রয়েছে। একইসাথে যেকোন সময় শুরু হতে পারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। আমরা এখন থেকে সর্তক ও সচেতন না হলে আগামীতে আমাদের চরম সমস্যার সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা আশাবাদী, খানিক সচেতন হলে পূর্বের মত এই চতুর্থ ঢেউও মোকাবেলায় সক্ষম হব। উল্লেখ্য, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট বা আসন্ন কিংবা চলমান চতুর্থ ঢেউ যা বলিনা কেন, এটি আগের তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ। এর কারণ হতে পারে, বারে বারে মিউটেশনের ফলে করোনা দুর্বল হয়ে পড়েছে, অধিকাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে, মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, এছাড়া বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে এন্টিবডি সৃষ্টি হয়েছে। এইসব কারণে হয়ত করোনার আগের সেই অনুকূল পরিবেশ আর নাই। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আমরা স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মেনে না চললেও হবে। সকলকে মনে রাখতে হবে, সরকার কর্তৃক যথাযথ গৃহীত পদক্ষেপ এবং সাধারণ জনগণের তুলনামূলক সচেতনার কারণে আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশ কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় করোনার প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সমর্থ হয়েছি। তাই আমাদের আবারো সেই পুরানো স্বাস্থ্যবিধি আবার আগেরমত নতুনভাবে অনুশীলন করতে হবে। যেমন- সেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা, সঠিক নিয়মে মাস্ক পরা, ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও স্যানিটাইজার ব্যবহার ইত্যাদি যথাযথ ভাবে মানতে হবে। এছাড়া করোনার টিকা ও বুস্টার ডোজ গ্রহণ করে ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রাখতে হবে। এরই মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনার ৪র্থ ঢেউ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে এবং জনসাধারণ সচেতন হতে নির্দেশনা দিয়েছেন। গত একাদশ সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় সমাপনী বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেছেন। একইসাথে করোনার বুস্টার ডোজ নিতে হবে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য করোনার ওমিক্রনের দুটি ধরন অর্থাৎ সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ-৪ এবং বিএ-৫ এই বছর সর্বপ্রথম দিকে দক্ষিণ আফিকায় সনাক্ত হয়। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। গত মে মাসের শেষের দিকে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সনাক্ত হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সংক্রমণ হার ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে চলেছে। এখানে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায়, অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের মত সাধারণ জ্বর, কারো কারো হালকা কাশি, অস্বস্তি অনুভব করা, ঘ্রাণশক্তি হ্রাস ইত্যাদি ঘটতে দেখা গেছে। তবে এই সকল লক্ষণ দেখা গেলে নিশ্চিত করোনায় আক্রান্ত তা কিন্তু নয়। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার জ্বর ও জ¦রের লক্ষণেও এই সব উপসর্গ রয়েছে। তাই আতঙ্কিত হবার কিছু নাই। আগেই বলেছি এই ভ্যারিয়েন্ট ততটা মারাত্বক নয়। তবে এটিতে দ্রæত সুস্থ হবার সম্ভাবনা থাকলেও, অসুস্থ ব্যক্তি বা ইতোপূর্বে আক্রান্ত ব্যক্তি পুণরায় আক্রান্ত হলে, এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞগণ সতর্ক করে দিয়েছেন। এখানে উল্লেখ না করলে নয়, আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্ট টিকা গ্রহণ করার পরেও আক্রান্ত হচ্ছে। তাই টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মুক্তভাবে চলাফেরা করলে চলবেনা। যেহেতু আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এইসব ভ্যারিয়েন্ট অধিকতর সংক্রমণশীল হবে বলে জানা যাচ্ছে, তাই আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। আমাদের এমনভাবে চলতে হবে আর স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, যাতে পূর্বেকার লকডাউন শাটডাউন শব্দগুলো ফিরে আর না আসে।

লেখক : শিক্ষক ও সাহিত্যিক