প্রশাসনের অভিযানের মধ্যেই চবি শাটলে ফের পাথর নিক্ষেপ

29

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাটল ট্রেনে বহিরাগত ও টোকাইদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অভিযান চলাকালেই পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ৪:২০ টার শাটল ট্রেনটি ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন সংলগ্ন শান্তি কলোনি নামক স্থানে পৌঁছালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছোড়া পাথরের আঘাতে পুনম বড়ুয়া নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী আহত হয়। এসময় তার ঠোঁট ও নাকের মাঝামাঝি অংশ ফেটে যায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অরুপ বড়ুয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আজকে (গতকাল) থেকে বহিরাগত সমস্যা ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা নিয়ে অভিযান শুরু করেছি।
এবং এটা চলমান থাকবে। মাত্র তো শুরু করছি, তাই আজকেও তারা পাথর নিক্ষেপের সুযোগ পেয়েছে। আমরা সাথে সাথে ট্রেন থামিয়ে ওই স্থানে নেমে স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মহানগর পুলিশ প্রশাসন আমাদের সাথে আছে। আমরা খুব দ্রæত সময়ের মধ্যেই বিষয়টি সমাধান করব।
এদিকে, রাত সাড়ে আটটার দিকে অভিযান চালিয়ে শাটল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপকারী সন্দেহে তিন শিশুকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। আটক শিশুরা হলো মোবারক, রাকিব ও রোজিনা।
গতকাল শনিবার বটতলী থেকে ছেড়ে আসা রাত সাড়ে আটটার শাটল ট্রেনটি চৌধুরীহাট স্টেশনে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারিরীক শিক্ষা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে তাদেরকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। পরে তাদেরকে ষোলশহর রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে দু’টি কৌড়া ও পলিথিনে মোড়ানো গাম, বেøড ও একটি গ্যাস লাইটার উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েকজ ছাত্র তিনজন টোকাইকে ধরে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিল। আমরা তাদেরকে ষোলশহর রেলওয়ে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছি। পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
স¤প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চলন্ত শাটল ট্রেনে বারবার ঘটছিল পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। এতে প্রায়ই কোনো না কোনো শিক্ষার্থী আহত হচ্ছিলেন। মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়েছেনও বেশ কয়েকজন। এসব ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছিলেন শিক্ষার্থীরা, আর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়া।
এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৮ মার্চ পূর্বদেশে ‘চবি শাটলে বহিরাগতের উৎপাত, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে শাটল ট্রেনে দিনব্যাপী অভিযান চালায় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা রুখতে বটতলী-বিশ্ববিদ্যালয় রুটের রেল পথের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ টহলে থাকবে। এছাড়াও সাদা পোষাকেও টহলরত পুলিশ থাকবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার ক্যাম্পাস থেকে শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সকাল ৯:২০ এর শাটল, বিকেল চারটার শাটল ও রাত সাড়ে নয়টার শাটলে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। এসময় বহিরাগতদের ট্রেন থেকে নামিয়ে দেন তাঁরা। এছাড়াও বহিরাগতদের শাটল ট্রেনে উঠতে না দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেন তারা।
অভিযান পরিচালনাকারী সহকারী প্রক্টর ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপদ ট্রেন যাত্রা নিশ্চিত করতে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। বহিরাগতদের ট্রেনে উঠতে দেইনি। যারা উঠেছে তাদের নামিয়ে দিয়েছি’।
তিনি বলেন, ‘চলন্ত শাটল ট্রেনে বাইরে থেকে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই ঘটছে বাইরে থেকে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। এতে আমাদের ছাত্ররা রক্তাক্ত হচ্ছে। আমরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে কয়েকদফা এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। এসময় বহিরাগত কাউকে শাটল ট্রেনে উঠতে দেখলে তাদের নামিয়ে দিতেও শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়েছি’।
তিনি আরো বলেন, এছাড়াও আমরা বিভিন্ন থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির সাথে যোগাযোগ করেছি। পুলিশ আমাদের যথেষ্ট সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। রেললাইনের যেসব জায়গা থেকে পাথর নিক্ষেপ হয় সেসব জায়গায় পুলিশ টহল দেয়ার পাশাপাশি সাদা পোশাকেও লোক থাকবে।