‘প্রবিধান’ অনুমোদনের আগেই পদোন্নতি নিয়ে তোড়জোড়!

182

তিন বছর আগে ১ হাজার ৪৬টি পদের অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। তবে এই জনবল কাঠামোতে নতুন সৃষ্ট পদের প্রবিধানমালা এখনও অনুমোদিত হয়নি। কিন্তু পূর্বের অর্গানোগ্রামের শূন্যপদ পূরণ করতে গিয়ে অর্গানোগ্রামের নতুন সৃষ্ট পদে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে করপোরেশন। ফলে এসব পদে পদোন্নতি পেতে তোড়জোড় শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিধিবহিভূতভাবে এসব শূন্যপদ পূরণ করতে গিয়ে আবারও মন্ত্রণালয়ের বাধার মুখে পড়তে সিটি করপোরেশন। এমনটায় মনে করছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। প্রসঙ্গত ১৯৮৮ সালে সরকার চসিককে ৩ হাজার ১৮০টি সাংগঠনিক পদের অনুমোদন দেয়। সেই সাংগঠনিক কাঠামোর ৮৬৬টি শূন্যপদ পূরণ করতে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল করপোরেশন। কিন্তু সাংগঠনিক কাঠামোর (অর্গানোগ্রাম) বিপরীতে প্রবিধানমালা না থাকায় সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিল মন্ত্রণালয়। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কারণে প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহাকে শোকজ করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এছাড়াও পরবর্তীতে এ সকল শূন্যপদ পূরণে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়েছিল করপোরেশন। কিন্তু তখনও প্রবিধানমালা না থাকায় অনুমোদনের আবেদন নাকচ করেছিল একই মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ১ হাজার ৪৬টি নতুন পদ সৃষ্টির অনুমোদন দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সৃষ্ট পদগুলোর বেতন ‘স্কেল ভোটিং’ ছাড় ও কোনো প্রবিধানমালার অনুমোদন না হওয়ায় কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি চসিক। সর্বশেষ চলতি বছরের ১১ জুলাই ১৯৮৮ সালের অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর চাকরির বিধামালার অনুমোদন হয়। ফলে ওই অর্গানোগ্রামে সৃষ্ট শূন্যপদের নিয়োগে কোনো বাধা রইল না। তবে ১ হাজার ৪৬টি পদের সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন সৃষ্ট পদের অর্গানোগ্রাম এখনও অনুমোদন হয়নি। অনুমোদনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে অনুমোদন হওয়ার আগেই এই সাংগঠনিক কাঠামোর শূন্যপদের বিপরীতে পদোন্নতি করতে তোড়জোড় শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গত মঙ্গলবার করপোরেশনে অনুষ্ঠিত পদোন্নতি বোর্ডের সভায় ওই সাংগঠনিক কাঠামোর শূন্যপদে বেশ কয়েকজনকে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। তেমন একটি পদ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর। সেই পদে বর্তমানে তত্ত¡াবধায় প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা রফিকুল ইসলামকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী সপ্তাহের শুরুতে এই সভার রেজুলেশন লিখিত আকারে প্রকাশ করার কথা রয়েছে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা।
অন্যদিকে ১৯৮৮ সালের সাংগঠনিক কাঠামো অনুসারে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের বিদুৎ শাখায় নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ রয়েছে ১টি। সেটি পূর্ণ রয়েছে। তবে ১ হাজার ৪৬টি পদের অর্গানোগ্রামে আরও একটি পদ বাড়ানো হয়েছে। সেই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে রেজাউল বারী নামের এক প্রকৌশলীকে। যার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র শিবিরের ভিপি ছিলেন। পরবর্তীতে বিএনপির মেয়র মঞ্জুর আলমের আমলে দাপুটে অবস্থানে ছিলেন তিনি। এমনকি ২০১১ সালের মার্চে অস্থায়ী ভিত্তিতে কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ৭ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র। তাদের মধ্যে পাঁচজনই ছিলেন ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের পদধারী নেতা। বিএনপির মেয়র ও সাবেক শিবির নেতা বারীর সক্রিয় হস্তক্ষেপে তার ভাইসহ এই পাঁচজনের নিয়োগ হয় বলে জানা গেছে। এমন বিতর্কিত প্রকৌশলীর পদোন্নতি খবর জেনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীনতার স্বপক্ষের প্রকৌশলীদের মাঝে। এছাড়াও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনকে তত্ত¡াবধায় প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। শুধু এই তিনজন নয়, অনেককেই প্রবিধানমালা অনুমোদন না হলেও নতুন সৃষ্ট পদের বিপরীতে পদোন্নতি দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। এই পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের শভংকরের ফাঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ১৯৮৮ সালের জনবল কাঠামোর প্রবিধানমালা অনুমোদন হয়েছে। যেখানে যেসকল পদ রয়েছে তারজন্য আলাদা প্রবিধানমালার দরকার নেই। তবে ১ হাজার ৪৬টি নতুন সৃষ্ট পদের অর্গানোগ্রামের প্রবিধানমালা এখনও অনুমোদন হয়নি। তবে অনুমোদনের একদম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে একজনকে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতার কথা উল্লেখ রয়েছে। একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য নিশ্চয় এর চেয়ে বেশি যোগ্যতার প্রয়োজন হবে না। তাই এমন কাউকে নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে যার প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে, বলেন এই কর্মকর্তা।
এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, প্রবিধানমালা অনুমোদন না হওয়ায় দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নিয়োগ বন্ধ ছিল। এখন সেটার অনুমোদন হয়েছে। তবে নতুন ১ হাজার ৪৬ পদের অনুমোদিত অর্গানোগ্রামের বিপরীতে প্রবিধানমালা অনুমোদন হয়েছে কি না, সেটা দেখে বলতে হবে।
নতুন সৃষ্ট পদে প্রবিধানমালার অনুমোদন হওয়ার আগে পদোন্নতি দেওয়া যাবে কি না ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি আমলে নিয়েছি। খতিয়ে দেখা হবে। পুরো বিষয়টা আগে আমার দেখতে হবে, তারপর আমি বিস্তারিত বলতে পারবো। তবে নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই।