প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে ‘মোখা’ আতঙ্ক নয়, সতর্কতা জরুরি

21

সম্পাদকীয় যখন লেখা হচ্ছে, তখন আবহাওয়া দপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে মোখা। এটি অতি প্রবল আকার ধারণ করে বাতাসে সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠে যাচ্ছে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা আরো বাড়বে। তাই সকল সমুদ্রবন্দরে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত নামিয়ে তোলা হয়েছে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত। গতকাল শুক্রবার আবহাওয়া অধিদফতরের ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ (ঊঈচ: ৯৮৩ ঐচঅ) উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (১৩.৯ক্ক উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.২ক্ক পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এতে আরো বলা হয়, এটি শুক্রবার (১২ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। আবহাওয়া অফিস আরো জানিয়েছে এ ঘূর্ণিঝড় আগামী রবিবার বিকেল নাগাদ উপক‚লীয় এলাকায় আঘাত আনতে পারে। সেই সাথে ৭ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ¡াস বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অফিসের এ সংকেত পাওয়ার পর নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর এটি চট্টগ্রামের জন্য বড় একটি অশনি সংকেত। এটিকে হেলায় উড়িয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বিশেষ করে উক‚লীয় এলাকার লোকজন অতি সাহস দেখিয়ে সতর্কতা সংকেতকে তোয়ক্কা না করে এলাকায় থেকে যাওয়ার এক ধরনের প্রবণতা আমরা দেখতে পাই। ১৯৯১ সালে সরকার, রেডক্রেসেন্ট ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোর বারবার সতর্কতার পরও এলাকা ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে না আসার চরম খেসারত দিতে হয়েছে উপক‚লীয়বাসীকে। ৩২ বছর আগের এ ক্ষত এখনও শুকায়নি।এর পর সিডর, আয়েলা ইত্যাদি ঘূর্ণিঝড় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে সর্বশান্ত করে গেছে। যদিও পরের দুটি ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের প্রাণের ক্ষতি হয়নি, তবে ঘরবাড়ি, জমি ও ফসলের এবং গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব বাস্তবতায় এলাকার মানুষদের উচিৎ অতি সাহসি কিংবা আতঙ্কে কিংকর্তব্য বিমোড় না হয়ে বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে নিরাপদ আশ্রযে চলে যাওয়া। আমরা জানি, ১৯৯১ সালের ঘর্ণিছড়ের আগে দেশের উপক‚লীয় এলাকায় পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র ছিল না, অধিকাংশ স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দিরকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হত। এখন সেই অবস্থা আর নেই। বিগত ত্রিশ বছরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপক আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, এছাড়া স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোও অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, রেড ক্রিসেন্টসহ প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ স্ব স্ব অবস্থান থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কাজ করছে। কোস্টগার্ড সাগর ও নদীতে ট্রলারে করে জেলে ও সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য প্রচারণাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উপক‚লীয় এলাকার মানুষ, গবাদি পশুসহ মালপত্র সরিয়ে আনার উদ্যোগসহ ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষকে নিরাপদে সরানোর পাশাপাশি যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় খাদ্য-সামগ্রি মজুদসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে এক্ষত্রে কোন রকম গুজবে কান না দিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আমরা জানি, বাংলাদেশ এখন অনেক আত্ম নির্ভরশীল। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অতীতের তীক্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এখন অনেক পরিপক্ষ। আন্তর্জাতিক বিশ্ব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন করায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। এরপরও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে উপক‚লীয় এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তাদের সহায়-সম্পদের উপর একটি পূর্ণ ডাটাবেস তৈরি করা জরুরি। আমরা জেনেছি, পরিসংখ্যান ব্যুরো এ ধরনের একটি উদ্যোগ অনেক আগে নিয়েছে, এর অবস্থা কি সেটা আমাদের জানা না থাকলেও ডিজিটালাইজড এর এ যুগে সকল উপক‚লবাসীর একটি পূণাঙ্গ ডাটা শিগগরই তৈরি করা হবে-আশা করা যায়। মোখা নামক ঘুর্ণিঝড় যদিও চট্টগ্রামের জন্য বড় ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে, এরপরও আমরা মনে করি সরকারের প্রস্তুতি এবং জনসচেতনতা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে দেশ ও দেশের মানুষ রক্ষা পাবে। আমরা পরম করুণাময়ের কাছে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য প্রার্থনা করছি। মহান স্রষ্টা আমাদের সহায় হোক।