প্রধানমন্ত্রী বড় স্বপ্ন দেখেন বাস্তবায়নও করেন

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল দিনভর বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্র ঘোষিত এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সকালে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ, বিকালে মহানগর ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ এই শান্তি সমাবেশ করেছে। দক্ষিণ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াশিকা আয়েশা খান এমপি। কেন্দ্রের নির্দেশনা মতে বিভিন্ন উপজেলা এবং নগরের ১৫টি থানাতেও এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

মহানগর আওয়ামী লীগ : সংগঠনের উদ্যোগে দারুল ফজল মার্কেট সম্মুখস্থ বনফুল চত্বরে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াশিকা আয়েশা খান এমপি বলেছেন, আমরা যে স্বপ্ন দেখতে সাহস করি না নেত্রী শেখ হাসিনা সেই সকল বড় বড় স্বপ্ন নিজেও দেখেন এবং বাস্তবায়ন করেও দেখান। এজন্যই বাংলাদেশ আজ একটি গরীব দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশে উত্তীর্ণ হয়ে উন্নত দেশের মর্যাদা প্রাপ্ত হতে চলেছে। এটা অনেকের সহ্য হয় না।
তিনি বলেন, সুদের কাঙালি যেভাবেই হউক নোবেল পেয়েছেন। এজন্য তিনি সম্মান পেতে পারেন। তবে তিনি যদি ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যাচার করেন, তাহলে কিছুতেই সহ্য করতে পারি না। এই মহামান্য ব্যক্তিটি ৭৮ কোটি টাকা খরচ করে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছেন ৪০ জন স্বনামধন্য বিদেশি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার মর্যাদা ও স্বীকৃতি চান। আমার জানামতে বিজ্ঞাপনে যেই ৪০ জন ব্যক্তির নাম ছাপা হয়েছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি ব্যক্তি জানেন না বিজ্ঞাপনের ভাষাটি কি ছিল। এতে প্রমাণিত হয় একজন মানুষ কত লোভী হলে কী বিশ্রীভাবে উলঙ্গ হতে পারেন।
ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫২ বছর। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল মাত্র ২২ বছর। বাকি ৩২ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কি দিয়েছে সেটা খুঁজতে গেলে কিছুই পাবার নেই। পাবার মধ্যে আছে দুনীর্তিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের বাড়িতে গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ঝুলানো, হত্যা ও ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল, ক্যান্টনম্যান্টে রাজনৈতিক দল বানিয়ে দেশে ধারাবাহিক লুটপাট, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিদের পুর্নবাসন, জঙ্গিবাদের উত্থানসহ নানারকম অপকর্মের দীর্ঘ তালিকা ছাড়া আর কিছুই তো নেই। তারা যদি অহংকার করে বলে, তারা জাতিকে কিছু দিয়েছেন তা মিথ্যা। ভোগ ও দখলদারিত্ব ছাড়া জাতিকে কিছুই দিতে পারেন নি। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থেকেছে তখন দেশের উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।
দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা কল্পনাও করতে পারিনি প্রমত্ত পদ্মার উপর সেতু হবে, মেট্রোরেল হবে, এমনকি কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে সুড়ঙ্গ হবে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক জোন তৈরি হবার পথে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে হু হু করে বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী হচ্ছেন। এতবড় অর্জন বিশ্বে আর কোথাও আছে কী? তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা করোনাকালে জাতিকে যে সেবা দিয়েছেন তা অনেক উন্নত দেশও দিতে পারেন নি। এসময় মানুষকে খাদ্য দিয়েছেন, আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন এবং করোনা প্রতিষেধক টিকা বিনামূল্যে বিনামূল্যে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। বিশ্বে এখন রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে সারা বিশ্বের মানুষ সংকটে পড়েছে। অনেক উন্নত দেশে এখনও ৬ঘন্টা লোডশেডিং থাকে। কোন কোন দেশে নিত্যপণ্যের বাজারে সাধারণ সবজিও পাওয়া যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে সংকট থাকলেও তা কখনো চরম নয়। সংকট উত্তোরণে নেত্রীর নির্দেশে আমরা লড়াই করছি।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, সংবিধান সম্মতভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবেই। নানান অযুহাত দেখিয়ে বিএনপি যদি নির্বাচনী ট্রেন মিস করে তাহলে আমাদের বলার কিছু নেই। এরপরও যদি তারা রাস্তা দখলে রাখতে চায় সেই দখলদারিত্ব থেকে তাদের উৎখাত করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা অরাজকতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ করছি জনগণের জানমাল রক্ষায়। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় যাওয়ার যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আছে তাতে না গিয়ে উল্টো পথে চলা শুরু করেছে। কারণ তাদের জনগণের প্রতি আস্থা ও ভরসা নেই। এই দলটির জন্ম বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতা দখল করার পর ক্যান্টনমেন্টে। তাই জনগণের ভাষা তারা বুঝে না। তারা চায় জনগণকে জিম্মি করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করতে। তাই জনগণের কল্যাণে তারা কখনো রাজনীতি করে না বা করে নি। তারা তিনবার ক্ষমতায় ছিল। তারা জনগণকে কী দিয়েছে তার একটি তালিকা আমরা দেখতে চাই। কিন্তু তাদের সেই সাহস নেই।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, উপদেষ্টা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন এনামুল হক চৌধুরী, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, চন্দন ধর, জালাল উদ্দীন ইকবাল, নির্বাহী সদস্য আবুল মনছুর, বখতেয়ার উদ্দীন খান, থানা আওয়ামী লীগের আলহাজ ফিরোজ আহমদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মো. ইকবাল হাসান, সলিম উল্লাহ বাচ্চু, ফয়জুল্লাহ বাহাদুর, জাহাঙ্গীর আলম, ফারুক আহমদ ও মিথুন বড়ুয়া। সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উপপ্রচার সম্পাদক শহিদুল আলম, নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কৃষাণ চৌধুরী, আব্দুল লতিফ টিপু, হাজী বেলাল আহমদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আবুল হাসেম বাবুল, স্বপন কুমার মজুমদার। একই সাথে গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১৫টি থানার উদ্যোগে পৃথক পৃথকভাবে নগরীর ১৫টি স্পর্টে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ : চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াশিকা আয়েশা খান এমপি বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার জনবান্ধব সরকার, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে কেউ না খেয়ে নেই। অর্থহীন বিভিন্ন অজুহাতে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চালাচ্ছে। দেশের মানুষ সন্ত্রাসী দল বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপি-জামায়াত যতই শক্তিশালী হোক না কেন দেশে কোনো সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যে সৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগ সেটাকে প্রতিহত করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিলেন এ দেশের স্বাধীনতা আর শেখ হাসিনা দিয়েছেন এ দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি।
গতকাল সকাল ১১টায় আন্দরকিল্লাস্থ দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আলহাজ মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, রাজনীতি আর আন্দোলনের নাম করে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চালাচ্ছে। তবে তারা জানেন না তাদের এ আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও আর মানুষ খুন কেউ কখনো মেনে নেবে না। বাংলার জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে। উন্নয়নের সরকার আর শান্তিতে মানুষকে রাখার সরকার হল আওয়ামী লীগ সরকার। আগামীতেও এ সরকারের অধীনে দেশ পরিচালিত হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় শান্তি সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ, এড. মির্জা কছির উদ্দিন, প্রদীপ দাশ, খোরশেদ আলম, আবু জাফর, নুরুল আবছার চৌধুরী, আবদুল কাদের সুজন, আবদুল হান্নান চৌধুরী মঞ্জু, ডা. তিমির বরণ চৌধুরী, আবদুল মতিন চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর, সৈয়দুল মোস্তফা চৌধুরী রাজু, চেয়ারম্যান নাসির আহমদ, বিজন চক্রবর্ত্তী, মাহবুবুর রহমান শিবলী, সেলিম নবী, বোয়ালখালী আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, আনোয়ারা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান, দক্ষিণ জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের, সুরেশ দাশ, নাছির উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম মাস্টার, শহিদুল ইসলাম, আমির উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র দেশে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার দিবাস্বপ্ন দেখছে। এখন সেদিন আর নেই, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসার দিন শেষ হয়ে গেছে।
প্রধান বক্তা সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান বলেন, অপশক্তি মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাজপথে আছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর দোস্তবিল্ডিং চত্বরে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ সভাপতি মো আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম তালুকদার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আলাউদ্দিন সাবেরী, কার্যনির্বাহী সদস্য বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, মো. সেলিম উদ্দিন, আখতার হোসেন খান, জেলা যুব মহিলা লীগ আহŸায়িকা রওশন আরা রত্না, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীর হোসেন তপু, সহসভাপতি মো সেলিম উদ্দিন, বিশ্বজিত দাশ বিশু, অরুন চৌধুরী, জুবায়ের ইসলাম ডলার, অভি চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক প্রমুখ।