প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর অমীমাংসিত বিষয়গুলো গুরুত্ব পাক

11

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের সফরে ভারতে গিয়েছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফিরবেন। নানা কারণে প্রধানমন্ত্রীর এবারের দিল্লি সফর গুরুত্ব বহন করে। দীর্ঘ চৌদ্দবছর ধারাবাহিক ক্ষমতায় আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দক্ষতার সাথে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার বহুমাত্রিক চিন্তা-চেতনা, দুরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা বাংলাদেশকে অভীষ্ঠ লক্ষ্যে নিয়ে যাচ্ছে, একথার সাথে কারো দ্বিমত করার সুযোগ নেই। পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার বিশাল সীমানাজুড়ে রয়েছে ভারত। সংগতকারণে বাংলাদেশের সাথে ভারতের বন্ধুত্বের পাশাপাশি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিরোধও রয়েছে। আশার কথা শেখ হাসিনার সরকার ফারাক্কা বিরোধ, করিডোরসহ নানা বিষয়ে সফলভাবে মীমাংসা করে বাংলাদেশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেছেন অতীতে। তবে তিস্তায় পানির ভাগ নিয়ে সমস্যার সমাধান এখনও আলোর মুখ দেখেনি। বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছে দুইদেশ বাণিজ্যিক বৈষম্য দুরীকরণসহ নানা বিষযে যে আলোচনা বা চুক্তি হবে তাতে প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে এ নিয়ে কোন একটি সুখবর থাকবে। কিন্তু গত মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে তিস্তা নিয়ে কোন চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক হয়নি। তবে কুশিয়ারার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। দৈনিক পূর্বদেশসহ বুধবারের সকল সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। স্মারক সইগুলো হল, বহুল আকাঙ্ক্ষিত কুশিয়ারা নদী থেকে পানি প্রত্যাহার নিয়ে সমঝোতা। এছাড়া দুই দেশের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, উভয় দেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সমঝোতা, রেলের আধুনিকায়ন ও রেলকর্মীদের প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর বাইরে গুরুতপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বৈশ্বিক সংকটকালীন এ সময়ে ভারত বাংলাদেশকে জ্বালানী তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও খাদ্য সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। তিস্তার ব্যাপারে উভয় নেতা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, শিগগিরই তিস্তার পানি বন্টন সংকটের নিরসন হবে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে যে মতপার্থক্য রয়েছে, সমঝোতার মাধ্যমে তার অনেকটা নিরসন হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই সূত্রে জানা গেছে, হায়দ্রাবাদ হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের সম্পর্ক পর্যালোচনা এবং আরও জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে দেশগুলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, তার মধ্যে ভারতের নাম আসে সর্বাগ্রে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা হয়, তা সম্প্রতি আরো উচ্চতায় পৌঁছলেও অতীতে নানা কারণে নি¤œগামীও হয়েছিল। এক্ষেত্রে ভারতের ভ‚মিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে আসে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উদারতার পরিচয় দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের ভূখÐে আশ্রয় না দেওয়া, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতকে ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিটের সুবিধা করে দেওয়ার মতো বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ বন্ধুত্ব বিকশিত করার সদিচ্ছার পরিচয় দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের পক্ষ থেকে এমন কিছু ব্যাপারে মৌন থাকার ঘটনা ঘটেছে, যা সম্পর্কের মধ্যে শীতলতা আনে। তিস্তা নদীর পানিবণ্টনে ভারতের গড়িমসি সেরকম একটি ঘটনা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যথার্থই বলেছেন, ‘সমস্যা ভারতে’। তিস্তা নদীসহ অভিন্ন ৫৪ টি নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়টির আশু সমাধান না হলে পানির অভাবে নদীতীরবর্তীর মানুষই শুধু নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষই তাতে ভুগবে। তিস্তা নদীর পানিবণ্টনের ব্যাপারে দিল্লি আন্তরিক বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বাধার কারণে কাজটি এগোচ্ছে না বলে মনে করে মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের এই বিরোধের বলি হচ্ছে বাংলাদেশ, এটা কাজের কথা নয়।
আরেকটি বড় সমস্যা হলো সীমান্ত সংঘাত। এই সংঘাতের উৎসও একপক্ষীয়। সীমান্তে এ রকম ঘটানো হবে না বলে ভারতের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রæতি পাওয়া গেলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে এ বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বা পেয়েছে। এদেশের মানুষ ভারতের সাথে বন্ধুত্বে কখনো কার্পণ্য করেনি, তবে সীমান্ত হত্যাসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধান হলে বন্ধুত্ব গাঢ় হবে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফর সফল হোক-এমনটি প্রত্যাশা দেশবাসীর।