প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় চূড়ান্ত ঘোষণা

51

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেছেন, চট্টগ্রামের একটা লোক বেঁচে থাকতেও সিআরবিতে হাসপাতাল করতে দিব না। এটিকে আমরা বঙ্গমাতার নামে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করবো। চট্টগ্রামের সকল মন্ত্রী-এমপিরা যখন সিআরবিতে হাসপাতাল না করার পক্ষে একমত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমাদের সাথে একমত হবেন। রেলমন্ত্রীও হাসপাতাল না করার পক্ষে আমাদের কথা দিয়েছেন। সুতরাং সিআরবিতে প্রকৃতি ধ্বংস করে কোন হাসপাতাল হবে না।
গতকাল বিকালে সিআরবিতে চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
টানা ৪৮২দিন চলমান আন্দোলনের সমাপনী কর্মসূচিতে এই মহাসমাবেশের ডাক দেয় নাগরিক সমাজ। এতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, আমি সংসদ সদস্য হিসেবে একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। উদ্যোগটা হলো চট্টগ্রামের যত সংসদ সদস্য আছেন, আমরা একটা দরখাস্ত লিখলাম রেলমন্ত্রীর উদ্দেশে। সেখানে আমি আগ্রহের সাথে জানাচ্ছি চট্টগ্রামের সকল এমপি, মন্ত্রী যারা আছেন সবাই দরখাস্তে সিআরবিতে হাসপাতাল না করার জন্য দস্তখত করেছেন। সেই দরখাস্ত নিয়ে আমরা রেলমন্ত্রীর অফিসে গেলাম। আমার সাথে মন্ত্রী হাসান মাহমুদ, নওফেলও ছিল।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমার পুরো বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী জনগণের নেত্রী। প্রধানমন্ত্রী মানুষের যে আশা-আকাঙ্খা সিআরবিতে হাসপাতাল না করার জন্য, সে দাবি অবশ্যই উনি রাখবেন। সকল এমপি-মন্ত্রী যখন একমত হয়েছি, উনিও একমত হবেন। সেটা আমাদের বিশ্বাস। সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এটা আমাদের কথা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার কাছে অবাক লাগে, আমি যখন পায়ের চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যাই। সেখানে আমার মেয়ে বড় ডাক্তার। আমাকে হঠাৎ করে আমার মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো, সিআরবিতে কেন হাসপাতাল করছে। ও বললো, এত সুন্দর জায়গায় কেন হাসপাতাল হবে? সেও এটা চিন্তা করলো। সারা বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে যারা চট্টগ্রামের লোক আছে, যারা সিআরবিকে দেখেছে তারা কখনো এখানে হাসপাতাল হোক চাইবে না। আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমাদের সাথে একমত হবেন।
বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ৪ ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী প্রথম জনসভা চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড থেকেই শুরু করবেন। আমরা সবাই পলোগ্রাউন্ডে এসে জমায়েত হবো। উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জনসভা করবো। সুতরাং উত্তর, দক্ষিণের যত থানা আছে, মহানগরের যত ওয়ার্ড আছে সব জায়গা থেকে জমায়েত করবো। যাতে করে পলোগাউন্ড উপচে পড়ে। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী থেকে উনার কন্ঠে সিআরবি নিয়ে জানতে চাইবো। উনি সেখানে ঘোষণা দিবেন সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না।
তিনি সিআরবিতে হাসপাতালের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপানারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ৪ ডিসেম্বর জনসভায় আপনারা সবাই যাবেন। ব্যানার নিয়েই আপনারা সেখানে যাবেন। যাতে করে প্রধানমন্ত্রী এটি দেখেন। আমরা ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না- এই ঘোষণা শোনার চেষ্টা করবো।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সিআরবিতে প্রকৃতি নষ্ট করে কোন স্থাপনা হবে না। প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষায় জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু কেউ কেউ প্রকল্প দিয়ে ফেলেন যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এটিও এমন একটি প্রকল্প ছিল। আমরা সবাই মিলে পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষা করবো। পাহাড় যারা কাটে, তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিব। সিআরবি রক্ষায় যে ঐক্য হয়েছে, সেটি রাখবো।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিআরবিতে একটি হাসপাতাল হওয়ার কথা ছিল। আপনাদের আন্দোলন, আপনাদের শ্রম, ঘাম এখান থেকে হাসপাতাল সরিয়ে নিয়েছে। নান্দনিক চট্টগ্রাম নান্দনিকতা নিয়েই বেঁচে থাকবে। এই এলাকা অমূল্য সুন্দর একটি এলাকা। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে একটি প্রস্তাব করবো, এই এলাকার উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব দেয়া হলে আমি এই এলাকাকে নান্দনিক একটি এলাকায় হিসেবে গড়ে তুলবো।
চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের চেয়ারম্যান ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, ৪৮২ দিনের সমাপনী অনুষ্ঠান এটি। সিআরবি একটি অসাধারণ পরিবেশ আছে। দীর্ঘতম পরিবেশ আন্দোলন এটি। সারাবিশ্ব দেশরতœ শেখ হাসিনাকে পরিবেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে বিবেচনা করে। তিনি কখনেই সিআরবিতে হাসপাতাল করতে দিবেন না। আমি মনে করি সিআরবি ঘিরে এটি একটি চক্রান্ত ছিল। হাসপাতাল অনেক জায়গা হতে পারে। অনন্য সুন্দর প্রাকৃতিক আঁধার সিআরবি। শতবর্ষী গাছ আছে। সে সিআরবিতে হাসপাতাল করতে দিব না। সিআরবিকে রক্ষায় আন্দোলন করবো। আমরা সরাসরি নেত্রীর কাছে আবেদন করেছি।
তিনি বলেন, আমরা প্রথমে সচিবের মাধ্যমে আবেদন পাঠালাম। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি আবেদন পাঠিয়েছিলাম। যেদিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠাই সেদিনই আমি নিশ্চিত ছিলাম কোনদিন এখানে হাসপাতাল হবে না। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যিনি বিশ্বজুড়ে পরিবেশ আন্দোলন করছেন তিনি কখনই পরিবেশ ধ্বংস করে হাসপাতাল করতে দিবেন না। তার আদেশেই সংসদীয় কমিটি সিআরবি থেকে হাসপাতাল সরাতে বলেছেন।
শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছ থেকে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না- এমন আশ্বাস নিতে পেরেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি যারা করেন, তারা সবসময় জনগণের সাথে রাজনীতি করেন। সেটিই শেখ হাসিনার নির্দেশনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই দেশে উন্নয়ন হবে, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। কিন্তু মানুষ কি চায় সেটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই ধারবাহিকতায় আমাদের নেত্রী প্রতিটি প্রকল্পে বলেছেন স্থানীয় সুবিধাভোগীদের সকলের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করতে। এভাবেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। সুতরাং এই সিআরবি এলাকাতে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজ, রাজনেতিক নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ এই স্থানের পরিবর্তে অন্য জায়গায় প্রকল্প স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি নিয়ে পুনর্বিবেচনার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। সরকারের অংশ হিসেবে তারাও জনগণের দাবির প্রতি সম্মান রেখেছেন। জনগণের যে বিষয়ে আপত্তি থাকবে, সমর্থন থাকবে না, শেখ হাসিনা সরকার সেই জনদাবির বিষয়ে সরকারের প্রত্যেক অংশকে পুনর্বিবেচনার নির্দেশনা দিয়েছেন। রেল কর্তৃপক্ষ গায়ের জোরে কোন কিছু করার প্রয়াস দেখাননি। ইউনাইটেড গ্রæপের ঢাকার হাসপাতালে চট্টগ্রামের অনেক মানুষ যান। চট্টগ্রামের হৃদয়ে আঘাত করে তাদের হৃদরোগের চিকিৎসা করাটা নৈতিকভাবে সঠিক হবে না।
সাংবাদিক ঋত্মিক নয়নের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এড. ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, বিজয় মেলার মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুছ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. এইচএম জিয়াউদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, পরিবেশবিদ ড. ইদ্রিছ আলী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বদিউল আলম, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মশিউর রহমান চৌধুরী, চন্দন ধর, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের তপন দত্ত, নগর যুবলীগের সাবেক আহŸায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাজাহান চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সংগঠক রাশেদ হাসান, স্বপন মজুমদার, জাসদ নেতা বেলায়েত হোসেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, আবুল হাসনাত বেলাল, নীলু নাগ, আঞ্জুমান আরা, নূর মোস্তফা টিনু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি প্রমুখ।