প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে প্রভাবশালীর আম বাগান

18

রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের গরিবের ঘর প্রভাবশালীর আম বাগানে! প্রধানমন্ত্রী ঘর দিয়েছেন গরিবের জন্য। কিন্তু ভুয়া নামে সে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে জেলার বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আবুল কালামের জায়গায়। সেখানে আম বাগানে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
যে দুজনের নাম ব্যবহার করে সরকারি ঘর বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে ওই দুজনের একজনও ওই ঘরে থাকেনা। শুধুমাত্র ঘর পেতে তাদের নাম ব্যবহার করেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
আওয়ামী লীগ নেতা কালাম দু’টি ঘর পাওয়ায় এ নিয়ে এলাকায় কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে দুদক রাঙামাটি কার্যালয় সহ বিভিন্ন সংস্থায় একাধিক অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার গরিবের ঘর পাওয়ার কথা ভ‚মিহীন ও গৃহহীন লোকজনের কিন্তু ঘর পাচ্ছে বিত্তশালীরা।
জেলার ১০ উপজেলায় এ ধরনের অনেক কারসাজি হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় মোঃ শাহাজাহান হাওলাদার ওরফে বড়মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আবুল কালাম এলাকায় প্রভাবশালী লোক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি দখল সহ সকল অপকর্ম করে থাকেন। ওখানে তার কোন জমিজমা নেই। কি করে জমি দান করেন। আর দান করা জমিতে সরকারি ঘর হয় কি করে। ইউএনও এবং জেলা প্রশাসক কি করে দানকৃত জমিতে গরিবের জন্য সরকারি ঘর নির্মাণ করেন। আসলে আম বাগান পাহারা দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা এ ঘরগুলো কৌশলে নিজের বাগানে তৈরি করে নিয়েছেন।
মুঠোফোনে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর আগে বরিশালের এক লোক থেকে এই জায়গাটি তিনি নিয়েছেন। পরে সরকারি দু’টি ঘর নির্মাণ করতে ইউএনও বরকলকে দান কবলার মাধ্যমে জমি দিয়েছেন। তবে কালাম দাবি করে বলেন আম বাগানটি তার। দুটি ঘরের জন্য তার দখলকৃত জমি দুজনকে দান করেছেন। এরা দুজনই আমার ছোটভাই ও বোন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাজাছড়া আনসার ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের পূর্ব পাশে ২২ নং কুরকুটি ছড়ি মৌজায় স্থানীয় আবুল কালামের আম বাগানে একই নকশায় ঘর দুটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে ঘর দুটিতে কাউকে পাওয়া যায়নি। একটি ঘরের ভিতরে একটি কক্ষে কাপড় মোড়ানো একটি বালিশ ও পাটি দেখা গেছে।
সুবলং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তরুন জ্যোতি চাকমা বলেন, সর্বশেষ দফায় হস্তান্তরিত ঘরের মধ্যে এ ঘর দুটির চাবি হস্তান্তর করা হয়েছিল। তবে সেখানে এখন মানুষ থাকে কিনা আমার জানা নাই।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘর দুটির একটি আবুল কালামের আপন ছোট ভাই নুর নবীর। অন্যটি বরকল ইউনিয়নের বাসিন্দা রহিমা বেগমের নামে। স্থানীয়দের দাবি আবুল কালাম এলাকায় খুব প্রভাবশালী ব্যক্তি। আম বাগান পাহারা দেওয়ার জন্য কালাম ঘরগুলো কৌশলে নিজের বাগানে তৈরি করিয়েছেন।
নঈমউদ্দিন (৫০) নামে এক বাসীন্দা বলেন, নুরনবীর নিজস্ব বাড়ি আছে। জমি আছে। ব্যবসা আছে। জাল আছে। কিন্তু তার নামে ঘর নিয়ে দিয়েছে কালাম। রহিমা বেগমের নামে যে মহিলার কথা বলা হচ্ছে সে কুরকুটি ছড়ি এলাকার কেউ না।
রহিমা বেগম (৬০)বলেন, তার বাড়ি বরকলে। বরকলে যে জমি আছে সে জায়গা খাড়া পাহাড় হওয়ায় ঘর তৈরির অবস্থা নেই। সেজন্য কুরকুটি ছড়িতে আমার বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সুবলংয়ে নিজের মেয়ের বাড়িতে থাকেন বলে জানান রহিমা। এ সময় রহিমা বেগমের সামনে বসা ছিলেন আবুল কালাম।
এ ব্যাপারে বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল রানা বলেন, সব কাগজপত্র দেখে সরেজমিন তদন্ত করে এ ঘরগুলো সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে অস্পষ্টতার কোন কারণ নেই। দুজনের নামে কালাম জমি দান করেছেন।