প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগ চট্টগ্রামের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক

13

গতকাল ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে ভাষণের আগে প্রধানমন্ত্রী ২৯টি বাস্তবায়িত প্রকল্পের দ্বার উন্মেচন এবং চারটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর করেছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে চারটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলছেন। এসব প্রকল্প সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম হবে দেশের সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী, এতে কোন সন্দেহ নেই। চট্টগ্রামবাসী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এ অবদানকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। আমরা এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশ বছর আটমাস পর চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ড ময়দানে উপস্থিত হয়ে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। এসময় তিনি চট্টগ্রামের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ তুলে ধরেন ভাষণের শুরুতে। তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সমাবেশে উপস্থিত জনতার কাছে জানতে চান- ‘অনরা ক্যান আছন? বেয়াগুন গম আছন নি? (আপনারা কেমন আছেন? সবাই ভালো আছেন তো?) তখন উপস্থিত লাখো জনতা সমস্বরে উত্তর দেন ভালা আছি (ভালো আছি)। এরপর প্রধানমন্ত্রী বললেন- তোঁয়ারাল্লাই আঁর পেট পুড়ের। এতল্লাই ছাইতাম আস্যি। (আপনাদের জন্য আমার প্রাণ কাঁদে। তাই দেখতে এসেছি।)’ এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁর বক্তব্যের শুরুতে একইভাবে চট্টগ্রামের ভাষায় উপস্থিত জনসমাবেশে তাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখে চট্টগ্রামের ভাষায় কুশলবিনিময় এবং চট্টগ্রামবাসীর জন্য তাঁর মন কাঁদে-এমন বক্তব্যে উপস্থিত লাখো মানুষ আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের প্রতি দরদ না থাকলে এমন দরদি ভাষা ব্যবহার করতেন না প্রধানমন্ত্রী-একথা সাধারণ মানুষের। প্রধানমন্ত্রী অতীতেও চট্টগ্রাম বা চট্টগ্রামবাসীকে নিয়ে এমন অনেক ইতিবাচক কথা বলেছেন। তাঁর শৈশবে পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে চট্টগ্রামে আসা এবং শুভ পরিনয়ের পর চট্টগ্রামে বেড়াতে আসা নিয়েও তার স্মৃতি কম নয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর চট্টগ্রাম থেকেই প্রথম প্রতিবাদের ডাক, বিদেশে অবস্থানকালে চট্টগ্রামের নেতৃত্ব শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সাথে যোগাযোগ এবং সাথে থাকার স্মৃতিগাঁথা নস্টালজিয়া থেকে চট্টগ্রামের প্রতি তার অন্তরাত্মার ভালোবাসা প্রকাশ ঘটাতে ভুল করেন না প্রধানমন্ত্রী। এবারও তিনি সেইসব স্মৃতির কথা তুলে ধরে চট্টগ্রামের উন্নয়নে তার গৃহীত পদক্ষেপগুলো জনতার সামনে তুলে ধরেন। তিনি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, এবি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথায় আমি এ টানেল নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আজ তিনি নেই, কিন্তু তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে, তিনি যেখানেই থাকেন শান্তিতে থাকবেন, তাঁর আত্মা তা দেখছেন। এসময় তিনি বলেন, এ টানেলের মাধ্যমে আনোয়ারা উপশহর হবে, অর্থাৎ ‘ওয়ান সিটি টু টাওন’ হবে। তিনি মেরি টাইম ইউনিভার্সিটি নির্মাণ, মেরিন একাডেমির সংস্কার, কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণ, গভীর সমুদ্র বন্দর, বে-টার্মিনাল নির্মাণ. প্রতিটি উপজেলায় মিনি খেলার মাঠ, দেশব্যাপী ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের জন্য আরো যা যা প্রয়োজন সবকিছু করবেন আশ্বস্থ করে বলেন, কালুরঘাটে রেল ও সড়ক সেতুর প্রকল্প শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল হবে। একনেকে অনুমোদন করা হয়েছে, শিগগিরই কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, আমার বাবাকে সপরিবারে হত্যার পর আমরা ছয়বছর নির্বাসনে ছিলাম। ছয়বছর পর দেশে এসেছি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একমাত্র বাংলা মানুষের জন্য। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এ চট্টগ্রামকে দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে ধারাবাহিকভাবে যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন, তাতে চট্টগ্রাম একটি নান্দনিক নগর হিসেবে গড়ে উঠবে। তবে এ চট্টগ্রাম নগরীতে আরো কিছু ছোট ছোট সমস্যা রয়েছে, যা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব নিয়েই সমাধান করতে হবে। এরমধ্যে প্রধানত, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বি করতে বন্দর ও কাস্টমের আয়ের ন্যূনতম একটি পারসেন্ট নগরির উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা, চট্টগ্রামকে মশার উপদ্রপমুক্ত করা, অবৈধ দখলদার থেকে কর্ণফুলীকে রক্ষা ও দূষণমুক্ত করা এবং মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা। এসব বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিলে সরকারের উন্নয়নের সুফল পাবে নগরবাসী-এতে কোন সন্দেহ নেই।